ধর্মতলায় রাস্তার মাঝে বসে পড়লেন চাকরিহারাদের একাংশ। ছবি: সারমিন বেগম।
সুদূর আলিপুরদুয়ার থেকে মিছিলে এসেছেন প্রতিমা রায়। কোলে আড়াই বছরের ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালে পদাতিক এক্সপ্রেস ধরে কলকাতায় এসেছিলেন মা-ছেলে। দিনভর মায়ের সঙ্গে মিছিলে ছিল খুদে প্রাঞ্জলও। এখন ধর্মতলায় বসে রয়েছেন তাঁরা।
চাকরিহারাদের মিছিলে এসেছেন সিনিয়র ডাক্তারেরাও। অভয়া মঞ্চের তরফে মিছিলে হাঁটলেন তাঁরা।
রানি রাসমণিতে পুলিশের ব্যারিকেড। — নিজস্ব চিত্র।
ডোরিনা ক্রসিং থেকে রানি রাসমণি রোডে পৌঁছোল চাকরিহারাদের মিছিল। তবে এখান থেকে এগোনোর অনুমতি নেই। সামনে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রহরায় বহু পুলিশকর্মী।
ডোরিনা ক্রসিংয়ে বসে পড়লেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। মহিলাদের বেশির ভাগই রাস্তার মাঝে বসে পড়েছেন। আন্দোলনকারীদের চার দিক থেকে কার্যত ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
আরজি কর আন্দোলনের আর এক মুখ আশফাকুল্লা নাইয়াও এসেছেন মিছিলে। শিক্ষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষকসমাজকে টেনে নীচে নামানোর চেষ্টা চলছে।’’
ধর্মতলায় জমায়েত। — নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলায় ডোরিনা ক্রসিংয়ে পৌঁছোল চাকরিহারাদের মিছিল। মিছিলে শিক্ষক ছাড়াও অন্যান্য পেশার মানুষেরাও রয়েছেন।
ধর্মতলা পৌঁছোল চাকরিহারাদের মিছিল। — নিজস্ব চিত্র।
রাজপথে চাকরিহারাদের মিছিল। — নিজস্ব চিত্র।
যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে মিছিলে হাঁটছেন শিক্ষকেরা। উল্লেখ্য, একই দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এসএসসি দফতরের সামনে অনশনে বসেছেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ। ওএমআরের মিরর ইমেজ প্রকাশ্যে আনা এবং কসবাকাণ্ডের প্রতিবাদেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। সকালে সেখানে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখেরা। সর্বতোভাবে তাঁদের পাশে থাকার বার্তাও দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরের জোড়া মিছিলে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে মৌলালিতে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। অন্য দিকে, শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত চাকরিহারাদের মিছিল। জোড়া কর্মসূচির কারণে বৃহস্পতিবার বেলা বাড়তেই যানজট তৈরি হয় পার্ক সার্কাস, মৌলালি, লেনিন সরণি, এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভারে। ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে জানানো হয়, কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হবে সিআইটি রোড। মল্লিকবাজারমুখী সব রাস্তা, এমনকি পার্ক সার্কাসমুখী মা ফ্লাইওভারে যান চলাচল এখনও মন্থর।
শিক্ষকদের মিছিলে এসেছেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র। তিনি বলেন, ‘‘ সরকারের অপদার্থতার জন্য চাকরি গেল। এ তো শুধু ওঁদের ক্ষতি নয়, এ হল সার্বিক ক্ষতি। এর ফলে সার্বিক ভাবে শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি হবে। এমনিতেই রাজ্যে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত খুব কম।’’
অভিনেতা বাদশা মৈত্র। — নিজস্ব চিত্র।
আরজি করের আন্দোলনকারী চিকিৎসক দেবাশিস হালদার। — নিজস্ব চিত্র।
মিছিলে রয়েছেন চিকিৎসক দেবাশিস হালদার। আরজি করের আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। দেবাশিস বলেন, ‘‘আমরা আন্দোলনরত শিক্ষকদের সংহতি জানাতে এসেছি। যাঁরা যোগ্য অথচ বঞ্চিত, রাজ্য সরকারের দুর্নীতির জন্যই আজ তাঁদের এই অবস্থা। শিক্ষকেরা জাতির মেরুদণ্ড। অথচ তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করা হল, রাস্তায় ফেলে তাঁদের লাথি মারা হল। কোন রাজ্যে বাস করছি আমরা? এই লজ্জা রাখার কোনও জায়গা নেই।’’
শিক্ষকদের পাশে এ বার ডাক্তারেরাও। শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে পা মেলালেন আরজি কর আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা চিকিৎসকেরাও।
দুপুর ১২টায় চাকরিহারাদের একটি মিছিল শুরু হয় শিয়ালদহ থেকে। মিছিলটি ধর্মতলায় গিয়ে শেষ হওয়ার কথা। কালো ব্যাজ এবং ব্যান্ড পরে মিছিলে শামিল হয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। মিছিল থেকে কসবার ঘটনায় যুক্ত পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবিও তুলেছেন তাঁরা।
কসবার ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের লাথি মারার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হতেই বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে মনোজ বলেন, “পুলিশ কারও বিরুদ্ধে নয়। পরিস্থিতি বাধ্য না-করলে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে না।” পাশাপাশি, সিপি জানান, এই ঘটনা একেবারেই কাম্য নয়। তবে পুলিশেরও অনেকে আহত হয়েছেন। সিপিকে পাশে বসিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবও বলেন, “সরকারি সম্পত্তি যদি ভাঙচুর হয়, পুলিশকে মারধর করা হয়, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পুলিশকে তো পদক্ষেপ করতেই হবে!” এ বার ওই ঘটনাতেই রিপোর্ট জমা দেবে পুলিশ। কী ভাবে, কোন পরিস্থিতিতে লাথি মারা হয়েছিল, রিপোর্টে সে সব বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।
(বাঁ দিকে) কসবায় চাকরিহারা শিক্ষককে পুলিশের লাথি মারার দৃশ্য। কলকাতার রাজপথে চাকরিহারাদের মিছিল (ডান দিকে) — নিজস্ব চিত্র।
বাধ্য হয়েই ‘হালকা বলপ্রয়োগ’ করা হয়েছে। কসবায় তালা ভেঙে স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-এর অফিসে ঢুকে পড়া চাকরিহারাদের উপর লাঠিচার্জ এবং ঘুষি, লাথি মারার ঘটনায় এমনটাই জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। এ বার সেই ঘটনায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার (সিপি) মনোজ বর্মাকে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবে পুলিশ। রিপোর্ট দেবেন ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) বিদিশা কলিতা।