নবান্ন সাংবাদিক বৈঠকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।
চন্দ্রিমা বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, আমরা সেই নির্দেশকে মান্যতা দেব। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। গতকাল বিকেল ৫টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও মুখ্যমন্ত্রী কোনও নেতিবাচক পদক্ষেপ করেননি। সরকারের তরফে কিছু করা হয়নি। কিন্তু, এ বারে সুপ্রিম কোর্ট যা যা বলেছে, সেগুলি মেনে চলতে আমাদের আর কী কী পদ্ধতিগত ব্যাপার রয়েছে, সেগুলির দিকে আমরা লক্ষ রাখছি। কোনও রোগীকে বঞ্চিত করা, কোনও সঠিক পদক্ষেপ নয়। জুনিয়র ডাক্তারদের বলব, রাজনীতির উস্কানির মধ্যে পড়বেন না। আপনারা যে মহৎ পেশায় এসেছেন, সেই পেশার কর্তব্য পালন করুন।”
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “দুপুরে মুখ্যসচিব মেল করে নবান্নে আসার জন্য আহ্বান জানালেন ১২-১৫ জনকে। কিন্তু সেই মেলের উত্তর এল প্রায় দু’ঘণ্টা পরে। সেখানে কিছু শর্ত দেওয়া হল। সেটি লাইভ টেলিকাস্ট হবে, মুখ্যমন্ত্রীকে থাকতে হবে, তাঁদের দাবিগুলি নিয়েই কথা বলতে হবে। আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, রাজ্য সরকার খোলা মনে বসতে চাইছে। কোনও শর্ত সাপেক্ষে নয়। খোলা মন এবং শর্ত— দু’টি একসঙ্গে চলতে পারে না। অর্থাৎ, খোলা মন নেই। নির্যাতিতা বিচার পাক— ব্যাপারটি তা নয়। এর পিছনে রাজনীতির খেলা আছে। তাই এতটা সময় লাগছে এত কিছু চিন্তা ভাবনা করতে। তাঁরা খোলা মনে আলোচনা চান না, তাই এই শর্তগুলি আরোপ করা হচ্ছে।”
চন্দ্রিমা বলেন, “গতকাল বিকেল ৫টা থেকে অপেক্ষা করা হচ্ছিল। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে স্বাস্থ্যসচিব একটি মেল পাঠিয়েছিলেন। সেই মেলের পরেও নানান রকম কথা বলে, কেউ এলেন না। সাড়ে সাতটা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বসে ছিলেন। তিনি কিন্তু খোলা মন নিয়ে আলোচনার জন্য বসেছিলেন। এর পর ভোর ৩টে ৪৫মিনিটে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে একটি মেল আসে। আমি প্রশ্ন করতে চাই, ভোর ৩টে ৪৫মিনিটে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে এই ব্যাপারে মেল আসা কি খুব স্বাভাবিক? নিশ্চয়ই নয়। তাহলে কি এর পিছনে রাজনীতি লুকিয়ে আছে? আসলে রাজনীতি লুকিয়ে আছে বলেই এই ধরনের ঘটনাপ্রবাহ আমরা দেখছি।”
যদিও পরে স্বাস্থ্য ভবনের সামনের ধর্না থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, তাঁদের আন্দোলনে কোনও রাজনীতির রঙ নেই। তাঁরা বলেন, “আমাদের আন্দোলন অরাজনৈতিক।” প্রশাসন তাঁদের দাবি মেনে নিলেই, তাঁরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “অপরাধীদের শাস্তির জন্য শুধু মুখে বলা নয়, রাজ্য বিধানসভায় বিলও পাশ হয়ে গিয়েছে। আজ একটি খোলা মনে আলোচনা চেয়েছিলাম। গতকাল থেকে এই নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তা দেখেছেন। এটি অন্য কোনও ক্ষেত্র নয়, রোগী পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্র। সাধারণ মানুষ যাতে বঞ্চিত না হন, সে জন্যই অনুরোধ করা হচ্ছে বার বার। সুপ্রিম কোর্ট ৯ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দিয়েছিল, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে তাঁদের কর্মবিরতি তুলে নিতে। আমরা অপেক্ষা করছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দেবেন।”
রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার বলেন, “আমরা ওঁদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। অন্যান্য কর্মস্থলগুলিতেও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করব আমরা। আমরা হাসপাতাল ও অন্য কর্মস্থলগুলির নিরাপত্তা আরও বর্ধিত করছি। আমি চাই, ওঁরা তাড়াতাড়ি কাজে ফিরে আসুক। কাজে ফিরে এলে ওঁরা নিশ্চিত ভাবে একটি পরিবর্তন দেখতে পাবেন। যদি তাঁরা সত্যিই স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি চান, তাহলে খোলামেলাই আলোচনা করতে হবে।”
মনোজ পন্থ বলেন, “আমরা চাই, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে, আমাদের অনুরোধে ওঁরা কাজে ফিরে আসুন। কিন্তু আজ ইমেলের যে উত্তর আমরা পেলাম, তাতে আমরা আশাহত। এটা হওয়া উচিত ছিল না। আমরা আশা করব, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে ওঁরা অক্ষরে অক্ষরে মানবেন। জানি না, কী কারণে তাঁরা এখনও এটি মানেননি।”
মনোজ পন্থ বলেন, “গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এখানে, যাতে ওঁরা এলে আলোচনা করা যায়। কিন্তু আজ আবার মেল পেয়েছি। যেখানে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনারা জানেন, কোনও শর্ত রেখে আলোচনা করা যায় না। আমরা চাইছিলাম খোলামনে আলোচনা হোক, তাঁদের উদ্বেগের বিষয়গুলি যাতে শুনতে পারি।”
মুখ্যসচিব বলেন, “গঠনমূলক আলোচনার জন্য আজ সন্ধ্যা ৬টার সময় ডেকেছিলাম। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় যেখানে যেখানে আরও উন্নতির প্রয়োজন, সেটি নিয়ে আলোচনা করতাম আমরা। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা কী কী কাজ করছি, সেটিও ওঁদের বলার ছিল। আমরা চেয়েছিলাম ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু ওঁরা এখনও আসেননি। আমরা এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম।”
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বললেন, “দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওঁরা এখনও আসেনি। আলোচনার জন্য ওঁদের আসা উচিত ছিল।” তিনি আরও বলেন, “আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ করেছিলাম, কাজে ফিরতে। মানুষকে পরিষেবা দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব। আমি বলেছিলাম, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানার জন্য।”
জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে কিঞ্জল নন্দ সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, নবান্নের বৈঠকে গেলেও ডাক্তারদের প্রতিনিধিদল সেখানে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হবে না। তাঁরা বৈঠক গেলে, সেখান থেকে আবার অবস্থান বিক্ষোভ মঞ্চে ফিরে আসবেন। সকলের সঙ্গে আলোচনার পরই কর্মবিরতি এবং অবস্থান-বিক্ষোভ প্রসঙ্গে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সর্বশেষ ইমেলে জুনিয়র ডাক্তারেরা মূলত চারটি শর্ত দিয়েছেন। প্রথমত, অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদল থাকবে বৈঠকে। দ্বিতীয়ত, নবান্নে যে বৈঠক হবে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তার লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, আন্দোলনকারীরা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন আগে, সেই দাবিগুলির উপরেই বৈঠকে আলোচনা হতে হবে। চতুর্থত, নবান্নে যে বৈঠক হবে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, এই শর্তগুলি মেনে নিলে, তাঁরা বৈঠকে বসতে রাজি।
২৭ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে, স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে এখনও ধর্নায় বসে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। দফায় দফায় ইমেল চালাচালি হয়েছে নবান্ন ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে। কিন্তু বৈঠক নিয়ে জট এখনও কাটেনি। মুখ্যসচিব প্রথমে ১০ জনের প্রতিনিধিদলকে ডেকেছিলেন নবান্নে। পরে সেই সংখ্যা বর্ধিত করে ১২-১৫ জনকে ডাকা হয় নবান্নে। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের অবস্থানে অনড়। তাঁদের দাবি, অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদলকে নবান্নের বৈঠকে যেতে দিতে হবে।