মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত।
সংশোধনী খারিজ হওয়ায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন শুভেন্দু -সহ বিজেপির বিধায়কেরা। বিধানসভার ভিতরেই ‘দফা এক, দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’ স্লোগান দিয়ে হট্টগোল শুরু করেন বিরোধীরা। তাঁদের দৃশ্যতই ধমকের সুরে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘আপনারা কিচ্ছু বোঝেন না। অযথা বাজে কথা বলবেন না। দয়া করে নিজের জায়গায় বসুন।’’
বিধানসভায় শুভেন্দুর সংশোধনী প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেল ধ্বনি ভোটে। ক্ষুব্ধ শুভেন্দুর দাবি, ‘‘এই অপরাজিতা বিল সম্পূর্ণ লোকদেখানো। আপনারা দোষী সাব্যস্ত করতে চান না। আপনাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট।’’
বিধানসভায় ধুন্ধুমার শুভেন্দুর বক্তৃতার সময়। বিরোধী দলনেতা রাজ্যে হওয়া একের পর ধর্ষণের ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন। তার সঙ্গে জমা দিচ্ছেন ওই সংক্রান্ত খবরাখবরের প্রিন্ট আউট। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বললন, আপনি যা যা দিচ্ছেন, তার সত্যাসত্য যাচাই না করে গ্রহণ করা যাবে না। শুভেন্দু পাল্টা বললেন, আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে এসেছি। আপনি যাচাই করুন।
অপরাজিতা বিল তাড়াহুড়ো করে আনা হল কেন? প্রশ্ন তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একই সঙ্গে বললেন, আমরা রেজাল্ট দেখতে চাই। অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে এই বিল।
শুভেন্দুর বক্তব্যের সময়েই বিধানসভায় এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু বলেন, ‘‘সরকারের আনা এই বিলকে সমর্থন করছি। কিন্তু আপনারা এই বিল আনতে তাড়াহুড়ো করলেন কেন? আমরা চাইলে বলতে পারতাম সিলেক্ট কমিটিতে পাঠান। কিন্তু আমরা শাস্তি চাই। ভোটাভুটি চাইব না। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনব। কিন্তু এই বিল দ্রুত কার্যকর করতে হবে সরকার পক্ষকে।’’
মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলতে উঠলেন। ২ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে প্রত্যেকের জন্য ছিল মাপা সময়। শোভনদেবের জন্যও নির্ধারিত ছিল ১২ মিনিট। কিন্তু মন্ত্রী জানালেন আমি বেশি ক্ষণ বলব না। স্পিকার যেন সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীকে বলার সুযোগ দেন।
বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের জন্য বরাদ্দ ছিল ২০ মিনিট। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘সিবিআই যদি দোষীকে গ্রেফতার না করতে পারেন, তা হলে তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামব।’’
এর আগে বিজেপির শিখা ভট্টাচার্যকে ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল তাঁর বক্তব্য জানানোর জন্য। অগ্নিমিত্রা বলার পর রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বলার কথা। তাঁর জন্য ২৫ মিনিট সময় ধার্য করা হয়েছে।
বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের পর বিধানসভায় বক্তৃতা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জন্য ৪৫ মিনিট বরাদ্দ।
রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক শুরুতেই অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু বিল ২০২৪ নিয়ে জানিয়েছিলেন। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শেষে বিল নিয়ে আরও দু’-এক কথা বলবেন তিনিই।
বিধানসভার অধিবেশন শুরু হল। প্রথমে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বিলটির কথা বললেন। তার পরেই বলতে দেওয়া হল বিরোধীদের। বিজেপির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় বক্তৃতা শুরু করলেন।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে রাজ্যের বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। মঙ্গলবার, দ্বিতীয় দিনেই অপরাজিতা বিল ২০২৪ পেশের জন্য ২ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে অপরাজিতা নিয়ে বক্তৃতা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে বিরোধীদেরও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, আমি যা বলার বলব। তবে দলের মহিলা বিধায়কেরাই বেশি বলবেন।
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে ধর্ষণ, মহিলা নির্যাতন রুখতে কড়া আইন আনার দাবি উঠেছে। তৃণমূলের তরফে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম ওই দাবি জানান সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে। রাজ্য সরকারকে এ ব্যাপারে কেন্দ্রের উপর চাপ দেওয়ার পরামর্শও দেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে ওই আইন আনার দাবি জানান। কেন্দ্রের তরফে এ ব্যাপারে সোমবার পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ চোখে না পড়লেও রাজ্যের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় এ রাজ্যে আরও কঠিন সাজার বন্দোবস্ত করার জন্য মঙ্গলবার বিধানসভায় নতুন সংশোধনী বিল আনতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। নাম অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু বিল ২০২৪। সেই বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলে ধর্ষণের সাজা হবে জরিমানা-সহ যাবজ্জীবন কারাবাস, নয়তো মৃত্যু।
১। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারায় ধর্ষণের সাজা অন্তত ১০ বছর কারাদণ্ড, যা যাবজ্জীবনও হতে পারে। সঙ্গে জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের সংশোধনী বিলে ধর্ষণের সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ড। সঙ্গে জরিমানা। এমনকি, মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
২। জরিমানার টাকায় নির্যাতিতার চিকিৎসা, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ আদালতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেই জরিমানার টাকা দিতে হবে, যেমনটা ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর ৪৬১ ধারায় উল্লেখ করা রয়েছে।
৩। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৫ ধারা মুছে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ‘অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু (পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ আইন সংশোধনী) বিল ২০২৪’-এ। ওই ধারায় ধর্ষণের কিছু মামলায় সাজার উল্লেখ রয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৬, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ১২৪ ধারাতেও বদল আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিলে।
৪। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর আইনে নতুন ধারা যোগের প্রস্তাবও আনা হয়েছে বিলে। ৪৬ নম্বর ধারার ৩এ উপধারায় নতুন ধারা যোগ করে ‘বিশেষ আদালত’ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। প্রতি জেলায় তৈরি করতে হবে এই আদালত, যেখানে ধর্ষণের মামলার বিচার হবে।
৫। বিচার করবেন রাজ্যের দায়রা বিচারক বা অতিরিক্ত দায়রা বিচারক। কলকাতা হাই কোর্টের সম্মতি নিয়েই চলবে বিচার। সরকার নির্যাতিতার হয়ে মামলা লড়ার বিশেষ কৌঁসুলি (স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর) নিয়োগ করবে। সেই কৌঁসুলির কমপক্ষে সাত বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৬। ৪৬ নম্বর ধারার ৩বি উপধারায় নতুন ধারা যোগ করে জেলা স্তরে ‘বিশেষ টাস্ক ফোর্স’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। সরকারের গঠন করা সেই বাহিনীর নাম হবে ‘অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স’। মাথায় থাকবেন ডেপুটি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক।
৭। ধর্ষণের মামলার যতটা সম্ভব তদন্ত করবেন মহিলা অফিসারেরা। তদন্তে কোনও সরকারি আধিকারিক বা কারও সাহায্য চাওয়া হলে, তাঁকে দ্রুত তা করতে হবে। তদন্তে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করাতে চাইলে তাঁরও ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার পর্যন্ত সাজা হবে।
৮। এফআইআর দায়েরের ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে আরও ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। তবে তার বেশি নয়। এসপি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে অতিরিক্ত ১৫ দিনের সময় দেওয়া হবে তদন্তের জন্য। বিলে আরও প্রস্তাব, চার্জশিট জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে বিচার।