মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয়তম দাবি, তাঁর রাজত্বে জঙ্গলমহল হাসছে। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের যখন আর গোটা এক বছরও দেরি নেই, সেই সময়ে জঙ্গলমহল এবং তার সংলগ্ন অঞ্চলের আদিবাসী সমবায় সমিতির ভোট শাসক দলের হাসি মুছে দিল!
জঙ্গলমহল এবং আশেপাশের এলাকায় আদিবাসী উন্নয়নের জন্য গঠিত সমবায় সমিতির (যার পোশাকি নাম ‘লার্জসাইজ্ড মাল্টিপার্পাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ বা ল্যাম্পস) পরিচালকমণ্ডলীর ভোট চলছে কিছু দিন ধরে। সাম্প্রতিক কালে তার মধ্যে একটি সমিতি ছাড়া কোনওটিতেই জয়ের হাসি জোটেনি শাসক দলের। সেই তালিকাতেই এ বার নতুন সংযোজন হল বেলপাহাড়ি ব্লকের কাঁকড়াঝোর এবং তালড্যাংরা ব্লকের ল্যাম্পসের ভোট। প্রথমটিতে বাম সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন ৯-০, দ্বিতীয়টিতে বামেদের জয়ের ব্যবধান ২৫-১৯। কাঁকড়াঝোরে ৯টির মধ্যে ৮টিতে প্রার্থী দিয়ে প্রতিটিতেই হার হয়েছে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীদের। তালড্যাংরার ফল আরও তাৎপর্যপূর্ণ। সেখানকার ল্যাম্পসে মোট ৪৪টির মধ্যে ১৫টি আসন আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল তৃণমূল। চারটি আসনে তাদের প্রার্থীদের জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছিল বলেও বামেদের অভিযোগ। তার পরে রবিবার যখন বাকি ২৯টি আসনের জন্য ভোট নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ২৫টিতেই জিতেছে বামেরা! স্বভাবতই তাদের দাবি, সব আসনে ভোট হতে দিলে আরও শোচনীয় ফল হতো তৃণমূলের!
কাঁকড়াঝোরের ক্ষেত্রে ভোটার ছিলেন প্রায় ৯০০ মানুষ, তালড্যাংরায় সংখ্যাটা দু’হাজারের বেশি। এই স্বল্পসংখ্যক মানুষের ভোট থেকে দ্রুত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক নয় বলে সতর্ক করছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু নিঃসন্দেহে তাঁদের স্বস্তি দিচ্ছে দু’টি ঘটনা। প্রথমত, ওই সব ব্লকে পঞ্চায়েতের সব স্তরেই নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় তৃণমূল। এবং দ্বিতীয়ত, ভোটারেরা আদিবাসী। এমতাবস্থায় শাসক দলের দাপটের মধ্যে আদিবাসী ভোট (তা যে আয়তনেই হোক) তাঁদের পক্ষে আসাকে উৎসাহজনক বলেই মনে করছেন বাম নেতৃত্ব। ভোটপ্রাপ্তির হিসাবকে আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আলিমুদ্দিন। কাঁকড়াঝোরে বামেরা পেয়েছে ৮০% এবং তালড্যাংরায় ৫৫.৮১% ভোট। যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বলছেন, ‘‘একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল, সব আদিবাসী মানুষ এখন তৃণমূলের পক্ষে। ঠিকমতো ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে বাস্তব যে এখন তা নয়, ল্যাম্পসের নির্বাচন সেটাই দেখিয়ে দিল!’’ পক্ষান্তরে, জঙ্গলমহলের পঞ্চায়েতে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ চিন্তায় রাখছে তৃণমূলকে। লক্ষণ সুবিধার নয় বলে মেনে নিয়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে কারণে বলছেন, ‘‘জেলাগুলির নেতৃত্বের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে।’’