শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে বামেদের প্রার্থীতালিকা প্রকাশ। —নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে রেখে আসন্ন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নিবার্চনে প্রচারে নামার ঘোষণা করল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট।
সোমবার দুপুরে হিলকার্ট রোডের অনিল বিশ্বাস ভবনে জেলা ফ্রন্টের বৈঠকের ফ্রন্টের মহকুমা পরিষদের প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করা হয়। ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রচারে এসজেডিএ-র পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের দুর্নীতিতে সামনে রেখে প্রচার করার কথা ঘোষণা করেন শহরের মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য।
অশোকবাবু বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যে প্রথমে অর্থলগ্নি সংস্থার দুর্নীতি সামনে আসে। সেই সঙ্গে এ জেলায় এসজেডিএ, রেশনের পর এবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসল। উন্নয়ন মন্ত্রী নিজেই দুর্নীতি হয়েছে স্বীকার করেছেন। এ সব দুর্নীতিকে সামনে রেখেই আমরা মহকুমা পরিষদের প্রচারে নামছি।’’ রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী’র দাবি, ‘‘মন্ত্রীর ওই দফতর নিয়ে সঠিক তদন্তের প্রয়োজন। দুই জন নয় ধরা পড়েছে, টাকার অঙ্কটা বড় নয়। কিন্তু এর পিছনে তো আরও কিছু থাকতে পারে। তৃণমূলের আমরা সরকারি দফতরগুলিতে কী হচ্ছে তা আমরা মানুষকে বলব।’’
গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে টেন্ডার ফর্ম বিলি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। দফতরের সহ-সচিব দীপঙ্কর পিপলাই-র অভিযোগের ভিত্তিতে দুই কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এদিন বিষয়টি নিয়ে দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মন্ত্রী।
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে ‘জবরদখলে’র রাজনীতির বিরুদ্ধেও প্রচারের কথা ঘোষণা করেছেন অশোকবাবু, দলের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারেরা। তাঁদের কথায়, গতবার একটি আসনও মহকুমা পরিষদে জেতেনি তৃণমূল। পরে মহকুমা পরিষদের সিপিএম-কংগ্রেস সদস্যদের ভাঙানো হল। মহকুমা পরিষদ, চারটি পঞ্চায়েত সমিতি পরপর দখল হল। মানুষের সমর্থনে না জিতে ভয়-ভীতি, প্রলোভনের রাজনীতি নিয়ে ক্ষমতায় ঠিকে ছিল তৃণমূল। এটাও আমরা প্রচারে রাখছি।
এদিন মহকুমা পরিষদের নয়টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ফ্রন্ট। গতবারের ৪ জন জয়ী সদস্যের কাউকে এবার টিকিট দেয়নি বামফ্রন্ট। যদিও সিপিএমের জ্যোতি তিরকে ইতিমধ্যে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। বাকি দুইজন সংরক্ষণ এবং একজন দাঁড়াতে চাননি বলে ফ্রন্টের তরফে জানানো হয়েছে। এবারই প্রথমবার পরিষদের নয়টি আসনের মধ্যে একটি আসন শরিকদের জন্য ছেড়েছে সিপিএম। ফরওয়ার্ড ব্লককে রানিগঞ্জ-পানিশালি আসনটি দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে লড়বেন দলের মহিলা নেত্রী তাপসি রায় মণ্ডল। বাকি আটটি আসনে সিপিএম দলের পুরানো পোঁড়খাওয়া নেতানেত্রীদের উপরই ভরসা রেখেছে।
যেমন, পরিষদের সহকারি সভাধিপতি তথা বিধায়ক ছোটন কিসকুকে ঘোষপুকুর এলাকায় দাঁড় করানো হয়েছে। তেমনিই চা বাগান আন্দোলনের নেত্রী ললিতা সাইরিয়াকে নকশালবাড়িতে টিকিট দেওয়া হয়েছে। আবার কৃষক সভার নেতা, প্রাক্তন প্রধান ভবেশ ঘোষকে চম্পাসারি এলাকায় দাঁড় করানোর ঘোষণা হয়েছে। মাটিগাড়া পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা শিক্ষক তাপস সরকারকে মাটিগাড়া থেকে লড়বেন। আবার খড়িবাড়ি থেকে লড়ছেন প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী পাবর্তী সিংহও। এছাড়াও ফাঁসিদেওয়া থেকে দিনদয়াল সিংহ, বিধাননগর থেকে মেহবুব আলম, বাগডোগরা থেকে শিবানী দাশগুপ্তের মত দলের পুরানো নেতানেত্রীদের টিকিট দেওয়া হয়েছে।
ভোটে গোলমালের আশঙ্কাও করা হয়েছে ফ্রন্টের তরফে। অশোকবাবু জানান, ভোট লুঠের পরিকল্পনা হলে তা পুরসভার মত সবাইকে নিয়ে ঠেকানো হবে। ভোট সবার নিজের নিজের কিন্তু লুঠ করার চেষ্টা হলে একযোগে প্রতিরোধ করার ডাক আমরা দিয়েছে। ইতিমধ্যে দলের তরফে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নিবার্চন করার জন্য নিবার্চন কমিশনের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিও জানানো হয়েছে।
বামফ্রন্টের জেলার আহ্বায়ক জীবেশবাবু জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। ফ্রন্টের বাইরে বিভিন্ন দল, গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চলছে। আদিবাসী বিকাশ পরিষদ, মোর্চা, কেপিপি সবাইকেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কোনও কিছু চূড়ান্ত হলে তা জানানো হবে। আর ভোট লুঠ ঠেকাতে গিয়ে একজোট হওয়ার ডাক আমরা দিয়েছি। এতে আমাদের ‘রামধনু জোট’ বা ‘হযবরল’ বললেও কোনও আপত্তি নেই।