কাঁটা তুলে রফা প্রায় চূড়ান্ত বাম-কংগ্রেসে

দু’দলের নিচু তলা থেকেই প্রবল চাপ। ভোট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়ে চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! এই অবস্থায় আসন-রফার পথের কাঁটা অনেকটাই সরিয়ে ফেলল সিপিএম এবং কংগ্রেস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৪:৪৯
Share:

রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সূর্যকান্ত মিশ্র। রবিবার আলিমুদ্দিনে। ছবি : সুদীপ্ত ভৌমিক।

দু’দলের নিচু তলা থেকেই প্রবল চাপ। ভোট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়ে চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! এই অবস্থায় আসন-রফার পথের কাঁটা অনেকটাই সরিয়ে ফেলল সিপিএম এবং কংগ্রেস। কম-বেশি ৮৫টি আসন কংগ্রেসের জন্য বামেরা ছেড়ে দেবে, মোটের উপরে এমন রফার ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফয়সালা হতে চলেছে বলে দুই শিবির সূত্রের বক্তব্য। দু’দলেরই এখন লক্ষ্য, যত বেশি সম্ভব আসনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির তরফে এক জন প্রার্থীকেই সামনে রাখা।

Advertisement

আসন সমঝোতার সব জটিলতা অবশ্য কেটে যায়নি। বিশেষত, উত্তরবঙ্গে যে সব জায়গায় বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়া হলে বিরোধীদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি, সেখানে আসন নিয়ে টানাপড়েনও বেশি। অথচ হাতে সময় বেশি নেই। এই অবস্থায় আসন ধরে ধরে জট ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন দু’দলের রাজ্য নেতারা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট হয়ে লড়তে হবে। সেই লক্ষ্যে অনেকটাই এগোনো গিয়েছে। যেটুকু বাকি আছে, সেটাও দু-এক দিনে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।’’ একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা বলছেন, ‘‘আমরা দফায় দফায় কথা বলছি এবং জট ছাড়াচ্ছি। একটু তো সময় লাগবেই! তবে যা বাকি আছে, সেটা মিটে যাবে।’’

কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার কাঠামো মোটামুটি নির্দিষ্ট করতে রবিবার আলিমুদ্দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর জরুরি বৈঠক বসেছিল। দলের প্রার্থী তালিকাও সেখানে প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে আজ, সোমবার। সন্ধ্যায় ডাকা হবে বামফ্রন্টের বৈঠক। তার পরেই বামেদের প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘যে সব কেন্দ্র নিয়ে কোনও জটিলতা নেই, সেই ধরনের আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা সোমবারই ঘোষণা করে দিতে চাই।’’ ফুরফুরা শরিফে ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও এ দিন বলেছেন, ‘‘প্রার্থী তালিকা ঘোষণা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতায় নেই! খুব শীঘ্রই জোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হবে।’’

Advertisement

সিপিএমের জন্য এখন প্রধান কাজ অবশ্য কংগ্রেসের জন্য কিছু আসন ছাড়তে শরিকদের চূড়ান্ত সম্মতি আদায় করা। যে উত্তরবঙ্গে আসনের টানাপড়েন বেশি, শরিকদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইও সেখানেই বেশি! আরএসপি-র রাজ্য কমিটি যেমন এ দিনই বৈঠকে বসে তাদের কোটার ২৩টি আসনের জন্য প্রার্থী ঠিক করে রেখেছে। যদিও তার মধ্যে দু’টি কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম জেলা থেকে চূড়ান্ত হয়নি। তবে বৈঠকে আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী জানিয়েছেন, তাঁরা ২৩টি আসনের তালিকা নিয়েই আলিমুদ্দিনে যাবেন। তার পরে পরিস্থিতিমাফিক কিছু আসন রদবদল করা হতে পারে। আর এক বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী অশোক ঘোষের শেষকৃত্যের প্রক্রিয়া মিটে যাওয়ার পরে আজ সকালেই বৈঠকে বসছে।

বাম ও কংগ্রেস সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গে দিনহাটা, হরিশ্চন্দ্রপুর বা মালতীপুরের মতো কিছু আসন নিয়ে এখনও জট রয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘গত বার বিধানসভায় বামফ্রন্টের জেতা কয়েকটা আসন কংগ্রেস দাবি করায় সমস্যা হচ্ছে। নকশালবাড়ি-মাটিগাড়ার মতো অঞ্চলে সাম্প্রতিক নির্বাচনে কংগ্রেস খুব ভাল ফল না-করলেও গত বারের বিধানসভার নিরিখে আমরা কিন্তু ওদের আসন দিতে রাজি আছি।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার যুক্তি, ‘‘আসনের সংখ্যাটাই বড় কথা নয়। যে সব আসন সম্ভাবনাময়, সেগুলিই ভারসাম্য রেখে বণ্টন করতে হবে।’’ এই টানাপড়েন ছাড়িয়েই ঐকমত্যে পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে দ্রুত লয়ে।

দক্ষিণবঙ্গের ছবি তুলনায় বেশি মসৃণ। কলকাতার মধ্যে যেমন ভবানীপুর, রাসবিহারীর মতো আসন কংগ্রেস লড়তে চলেছে বলে দুই শিবির সূত্রের ইঙ্গিত। কলকাতার কাছে বিধাননগর আসনেও কংগ্রেসের এক আইনজীবী-নেতাকে লড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি আবার সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে সিপিএমকেই সেখানে প্রার্থী ঠিক করতে বলেছেন বলে খবর। এর বাইরে জে়ডিইউ, আরজেডি, পি়ডিএসের জন্যও আসন রাখতে চলেছে বামেরা। গত বার তৃণমূলের সঙ্গে জোটে-থাকা এনসিপি-র নেতা তারিক আনোয়ারও বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এ বার বাম, কংগ্রেসের সঙ্গে গণতান্ত্রিক জোটের অংশীদার হচ্ছেন।

এই অবস্থায় তৃণমূল এখন মরিয়া হয়ে কংগ্রেস কর্মীদের কাছে আবেদন করে চলেছে। বরানগরে এ দিনই কর্মিসভায় শুভেন্দু অধিকারী, সৌগত রায়, তাপস রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকেরা যেমন ফের প্রশ্ন তুলেছেন, যে সিপিএমের হাতে এত কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন, তাদের সঙ্গেই জোট কেন? যা শুনে সিপিএমের এক নেতা বলছেন, ‘‘তৃণমূলের এই এক কথা এখন কাতর আবেদনের
মতো শোনাচ্ছে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement