রথের রশি টানতে কোর্ট খালি করে পুরীতে আইনজীবীরা!

এক আইনজীবী বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক আগে আইনজীবীদের ছোট একটি দল পুরী রথের রশি ধরে টেনে এসেছিলেন। ওই বছর থেকেই তাঁদের পসার বেড়ে গিয়েছিল। সেটা জানাজানি হওয়ার এখন রথে রশি টানতে আলিপুর-সহ কলকাতার আরও কয়েকটি আদালতের আইনজীবীরা রথের সময় পুরীতে ছুটছেন।’’

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪০
Share:

পুরী যাওয়ার এই হিড়িক পড়ল কেন?

গোটা চত্বরে পরিচিত কোনও আইনজীবীর দেখা না পেয়ে দিশেহারা ফারুক আহমেদ বটতলায় বসে পড়লেন। বাসন্তীর ঝড়খালি থেকে সাতসকালে আলিপুর জাজে’স কোর্টে এসেছেন। দখল সংক্রান্ত একটি স্থগিতাদেশের বড় প্রয়োজন ছিল তাঁর।

Advertisement

ফারুকের মতো বহু মক্কেল বুধবার বিকেল থেকেই আলিপুর পুলিশ কোর্ট ও জাজে’স কোর্টে অধিকাংশ আইনজীবীর হদিস পাচ্ছেন না। অধিকাংশ সেরেস্তা খালি। কয়েক জন জুনিয়র ছাড়া কেউ প্রায় নেই।

কিন্তু আদালতে কর্মবিরতি তো চলছে না। আইনজীবীরা কোথায় গেলেন? আলিপুর আদালতের এক সরকারি আইনজীবী জানালেন, পুরীতে রথের রশি টানতে কলকাতা ছেড়েছেন ওঁরা। বুধবার থেকেই ট্রেন অথবা বিমানে রওনা হয়ে গিয়েছেন। কয়েকটি দল গাড়ি নিয়েও বেরিয়ে পড়েছেন।

Advertisement

পুরী যাওয়ার এই হিড়িক পড়ল কেন? আলিপুর আদালতের এক বর্ষীয়ান সরকারি আইনজীবীর কথায়, বছর খানেক ধরেই রথযাত্রার সময় বেশ কিছু আইনজীবী পুরী যাওয়া শুরু করেছিলেন। হালে এই প্রবণতা বেড়েছে। এ বছর সংখ্যাটা প্রায় ৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর এক আইনজীবী বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক আগে আইনজীবীদের ছোট একটি দল পুরী রথের রশি ধরে টেনে এসেছিলেন। ওই বছর থেকেই তাঁদের পসার বেড়ে গিয়েছিল। সেটা জানাজানি হওয়ার এখন রথে রশি টানতে আলিপুর-সহ কলকাতার আরও কয়েকটি আদালতের আইনজীবীরা রথের সময় পুরীতে ছুটছেন।’’

কিন্তু রথযাত্রা তো শনিবার। এত আগে যাওয়ার কী প্রয়োজন ছিল? পুরীতে এক আইনজীবীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘রথযাত্রার আগে আরও নানা আচার পালন করতে হয়। সেই কারণেই কয়েক দিন আগে আসা হয়েছে।’’ আলিপুর জাজে’স ও পুলিশ কোর্ট মিলিয়ে ৩৫টি বিচারকের এজলাস রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন মামলার শুনানির সময়ে পুণ্যার্থী আইনজীবীরা আর্জি জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে তাঁদের জুনিয়ররাই মামলা দেখবেন। কোনও রকম ভুল-ত্রুটি হলে মার্জনা করে নেওয়ার জন্য বিচারকদের কাছে করজোড়ে আবেদন করেছেন তাঁরা। তাঁদের অনুপস্থিতিতে কোনও গুরুত্বপূর্ণ মামলার নির্দেশনামা যাতে না দেওয়া হয়, সেই বিষয়েও আর্জি করেছেন ওঁরা। জুনিয়রদের বলেছেন, শুনানিতে না গিয়ে বিচারকের কাছে পরবর্তী দিন স্থির করার আবেদন জানাতে।

জগন্নাথ ভক্তের এই দলে রয়েছেন আইনজীবী ও কলকাতা পুরসভার বরো চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ও। পুরকর্তা হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। বললেন, ‘‘কয়েকটা দিন তো! কোনও রকমে সামলে নেবে। পুজো দিয়েই রবিবার রাতে কলকাতা ফিরে যাব।’’

কিন্তু আদালত চলাকালীন একসঙ্গে এত আইনজীবী গরহাজির থাকলে বিচারপ্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়বে না? আলিপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিছুটা অসুবিধা তো হবেই। সুন্দরবন এলাকা থেকে অনেকেই আলিপুর আদালতে আসেন। পরিচিত আইনজীবীরা না থাকায় তাঁরা অবশ্যই অসুবিধায় পড়ছেন। জুনিয়ররা একা আর কত সামলাবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement