—ছবি পিটিআই।
রাজ্য নেতারা যতই বলুন, বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলতে চান না বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার কলকাতায় বসে স্পষ্ট ভাবে সেটা জানিয়ে দিলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। রাজ্য সফরের প্রথম দিন বুধবার কলকাতার তাঁকে কালো পতাকা দেখানো এবং বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারের কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে কনভয়ে হামলার পর রাজ্যের বিভিন্ন নেতারা যে দাবি তুলেছিলেন তা কার্যত নস্যাৎ করে দিলেন নড্ডা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে যে ভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে, যে ভাবে একের পর এক রাজনৈতিক খুন হচ্ছে, তাতে তৈরি হওয়া আবেগ থেকেই অনেকে ৩৫৬ ধারার প্রয়োগ চাইছেন। কিন্তু বিজেপি গণতান্ত্রিক পথেই লড়তে চায়।’’ অর্থাৎ রাজ্য বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় পশ্চিমবঙ্গে বার বার রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুললেও নড্ডার কথা থেকে স্পষ্ট, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেই পথে হাঁটতে চান না।
বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারেই সাংবাদিক বৈঠক করার কথা ছিল নড্ডার। কিন্তু দুপুরে কনভয়ে হামলার পর সেই সিদ্ধান্ত বদল করেন তিনি। সন্ধ্যা নামার আগেই ডায়মন্ড হারবার ছে়ড়ে কলকাতায় চলে আসেন। এর পর সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজারহাটের একটি হোটেলে। সেখানে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, প্রশাসন বলে কিছু নেই, এমন অভিযোগ তুলে মমতার সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন নড্ডা। তিনি বলেন, ‘‘মমতার আমলে বাংলায় অসহিষ্ণুতা বেড়েছে, রাজ্যে অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাংলার সাংস্কৃতিক অবনমন হয়েছে।’’ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের কনভয়ে হামলা প্রসঙ্গে নড্ডা বলেন, ‘‘১৯১৩ সালে আজকের দিনে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। লিখেছিলেন, ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির’। একই সঙ্গে আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। সেই দিক থেকে এটা বাংলার ক্ষেত্রে লজ্জাজনক দিন।’’
আরও পডৃুন: সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত রাজ্যে, মুখ্যসচিব ও ডিজি-র সঙ্গে বৈঠকের পর টুইট রাজ্যপালের
প্রসঙ্গত, মেয়ো রোডে কৃষকদের অবস্থান বিক্ষোভ থেকে নড্ডার কনভয়ে হামলা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, এত কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা স্বত্ত্বেও কী ভাবে আক্রান্ত হলেন নড্ডারা? সেই প্রসঙ্গে নড্ডা বলেন, ‘‘কে ইট মারছে, তা দেখা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাজ নয়। এটা রাজ্য পুলিশের বিষয়।’’
আরও পড়ুন: নড্ডার কনভয়ে হামলা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কেন্দ্র, জানালেন শাহ
সম্প্রতি মমতা আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকার হিসেব চাওয়া প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে নড্ডা বলেন, ‘‘মমতা যে ভাষায় কথা বলেন, তা মুখে আনতেও লজ্জা লাগে।’’
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনা করতে ভিন্রাজ্যের অনেক বিজেপি নেতা রাজ্যে এসেছেন। ওই নেতাদের ‘বহিরাগত’ হলে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। তার পাল্টা হিসেবে নড্ডা বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে জনসংঘ এই বাংলায় তৈরি হয়েছিল। এটা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাংলা। এই বাংলা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। মমতা বাংলার যে চেহারা দিয়েছেন, সেটা আসল বাংলা নয়। আমাদের বাংলাই আসল বাংলা।’’
নড্ডা এই দু’দিনের সফরের প্রথম দিন ভবানীপুর এবং দ্বিতীয় দিন ডায়মন্ড হারবারে যান। প্রসঙ্গত, ভবানীপুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা এলাকা। ডায়মন্ড হারবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা আসন। কেন বঙ্গ সফরে এই দু’টি আসনকেই বেছে নিলেন নড্ডা? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ইচ্ছে করেই রেখেছি। কারণ, এই দু’টি জায়গা অসহিষ্ণুতা, দুর্নীতি এবং অনুন্নয়নের উৎসস্থল। আজ যা হয়েছে তা অসহিষ্ণুতার প্রমাণ। আর জনসাধারণের সঙ্গে এই দু’জায়গায় আমি কথা বলে দেখেছি কোনও উন্নয়ন পৌঁছয়নি।’’