—প্রতীকী ছবি।
অধিবেশন শুরু হয়ে গেলেও রাজ্য সরকারের তরফে নির্দিষ্ট কর্মসূচি পৌছল না বিধানসভায়। কার্যত সেই শূন্যতা এড়াতে বাদল অধিবেশনের গোড়ায় পরপর দু’দিন ব্যতিক্রমী ভাবে আলোচ্য-সূচিতে এল স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট। তবে দিনক্ষণ ঠিক না হলেও এই অধিবেশনে মণিপুরের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে নিন্দা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার পক্ষ।
বিধানসভার বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছে সোমবার। প্রথামাফিক শোক প্রস্তাব নিয়ে প্রথম দিনের অধিবেশন মুলতুবি হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন ‘পিটিশন’ ও বন দফতর সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হবে। কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটিতে এ দিন নির্ধারিত এই সূচি ঘিরেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে পরিষদীয় মহলে। প্রশ্ন উঠেছে, এই রকম কমিটি রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার জন্যই কি জরুরি ভিত্তিতে এই অধিবেশন ডাকা হয়েছে? সে ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র, অর্থ বা শিক্ষার মতো কোনও স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট কেন আলোচনার জন্য বাছা হল না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘এই রকম আলোচনা আগেও হয়েছে। এই রকম কর্মসূচি সম্পর্কে স্পিকার সম্মেলনেও আলোচনা হয়েছে।’’ পরিষদীয় দফতর সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, এ বারের অধিবেশনে গোটাসাতেক বিল আনার প্রস্তাব রয়েছে। সেগুলিও সময় মতো আনা হবে। তবে সেই সংক্রান্ত কোনও বিজ্ঞপ্তি এ দিন পর্যন্ত বিধানসভায় পৌঁছয়নি। কার্যসূচি ঠিক করতে ফের বি এ কমিটির বৈছক হওয়ার কথা বুধবার। প্রসঙ্গত, এ বারের অধিবেশনের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় সম্মতি চাওয়া হলে রাজ্যপালের তরফে জরুরি ভিত্তিতে অধিবেশনের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। এক প্রস্ত টানাপড়েনের পরে অধিবেশনে সম্মতি দিয়েছে রাজভবন।
সরকার পক্ষ এর মধ্যে মণিপুরের হিংসা ও অমানবিক ঘটনাবলির প্রতিবাদে বিধানসভায় প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘গত তিন মাস ধরে মণিপুরের সাধারণ মানুষ যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তা গোটা দেশের লজ্জা। নির্বাচিত রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার সেখানকার মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মহিলাদের সম্ভ্রম রক্ষায় এই উদাসীনতায় গোটা দেশের সরব হওয়া উচিত। রাজ্য বিধানসভায় একটি প্রস্তাবের কথা বিবেচনায় রয়েছে।’’ অধিবেশন শুরুর আগে এ দিন বি এ কমিটি ছাড়া সর্বদল বৈঠকও ছিল। বিরোধীদের মর্যাদা না দেওয়া এবং দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে বিজেপি বেশ কিছু দিন ধরেই ওই বৈঠকে যায় না। এ বার সর্বদল বৈঠকে ডাক পাননি আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীও। ফলে, বৈঠক হয়েছে শুধু শাসক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে।
বাংলায় হিংসা, নারী নির্যাতনের অভিযোগে পাল্টা সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধী দল বিজেপিও। এই বিষয়ে একাধিক মুলতুবি প্রস্তাব এনে আলোচনা দাবি করতে চায় তারা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকে এই সংক্রান্ত কৌশল চূড়ান্ত হওয়ার কথা। বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘বিজেপি পরিষদীয় দলের বৈঠকে আমাদের কর্মসূচি ঠিক হবে। তবে যাঁরা মণিপুরের ঘটনা নিয়ে নিন্দা করছেন, তাঁদের শাসনে এ রাজ্যের নদিয়ায় নির্যাতনের পরে কিশোরীর খুনের ঘটনা ঘটেছে। মালদহে নির্যাতন হয়েছে। তৃণমূল সরকার আগে নিজেদের জামায় লেগে থাকা আলকাতরা পরিষ্কার করুক! তার পরে অন্য দিকে মন দিক!’’