আদ্রা ডিভিশনে বুধবার বাতিল হয়েছিল ৫৩টি ট্রেন। ছবি: পিটিআই
চিঠি চালাচালি। বৈঠকে আমন্ত্রণ। আপাতত এমন কোনও দাওয়াই-ই কাজ করছে না। ফলে মঙ্গলবার ভোর থেকে কুড়মিদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা চলছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
এর ফলে ট্রেন বাতিল হচ্ছে। ট্রেনের রুট বদল, যাত্রাপথ পরিবর্তনও চলছে সমান তালে। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত খড়্গপুর ডিভিশনে আপ লাইনে ১৫টি, ডাউনে ১২টি ট্রেন বাতিল হয়। আদ্রা ডিভিশনে বুধবার বাতিল হয়েছিল ৫৩টি ট্রেন। এ দিন বাতিল করা হয়েছে ১১৯টি। যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে ৬১টি ট্রেনের। ৫৪টি ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে।
একাধিক দাবিতে মঙ্গলবার ভোর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলি ও পুরুলিয়া জেলার কুস্তাউর স্টেশনে কুড়মিদের রেল অবরোধ শুরু হয়। খেমাশুলিতে ‘ছোটনাগপুর টোটেমিক কুড়মি মাহাতো সমাজ’ (চারটি কুড়মি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ) এবং কুস্তাউরে আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে শুরু হয় আন্দোলন। খেমাশুলিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুলও পোড়ানো হয়।
কুড়মিদের দাবির কথা কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের সচিব। সেই চিঠি কুড়মি সমাজের নেতাকে বুধবার রাতে পাঠিয়ে অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। কিন্তু কুড়মিদের যৌথ মঞ্চের নেতা রাজেশ মাহাতোর দাবি, মন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে আবেদন করেছেন, কিন্তু প্রশাসন এখনও উদাসীন। আন্দোলনকারীদের একাংশ জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের তরফে কলকাতায় তাঁদের আলোচনায় ডাকা হয়েছে। তবে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার আগে যে সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট চেয়েছে, তা যতক্ষণ না রাজ্য পাঠাচ্ছে, ততক্ষণ কোনও বৈঠকের দাম নেই। যদি বৈঠকে যাওয়া হয়, তা হলেও আন্দোলন তুলে নয়।’’
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুড়মিদের ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে চাপানউতোর শুরু হয়েছে গিয়েছে। ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে রাজ্য প্রশাসন ও রেল পুলিশও। এ দিন বাঁকুড়ায় বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘কুড়মিদের দাবি নিয়ে রাজ্য সরকার রাজনীতি করছে।’’ বাঁকুড়ায় ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপি সরকার কুড়মিদের দাবি মেটাতে পারেনি বলেই বাধ্য হয়ে ওঁরা অবরোধ করছেন।’’ আর মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকার কুড়মিদের দাবি আদায়ে সক্রিয়। রাজ্যের প্রস্তাবে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।’’