ভরা এজলাসে দাঁড়িয়ে এ বার রাজ্যের এক মন্ত্রীর নাম টানলেন কুণাল ঘোষ। তাঁর নিশানায় এ বার রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার আদালতে নাকতলার একটি ক্লাবের পুজোর পাস পেশ করে কুণাল দেখান যে, বহু বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা ওই পুজোয় টাকা ঢেলেছিল। পার্থবাবু সেই ক্লাবের চেয়ারম্যান।
এর আগে গত শনিবারই সাসপেন্ড হওয়া এই তৃণমূল সাংসদ বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছিলেন, সারদা কেলেঙ্কারিতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা যদি কেউ পেয়ে থাকেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ছ’দিনের মাথায় এ দিন বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের এজলাসে কুণাল বলতে শুরু করেন, সারদা মামলায় তাঁর চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী লোক বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ তাঁকে প্রায় এক বছর ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। কুণালের কথায় সিবিআই বলছে, তিনি প্রভাবশালী। বাইরে বেরোলে তদন্ত প্রভাবিত করবেন। কিন্তু কুণালের দাবি, “বাইরে অনেক প্রভাবশালী ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমি আর কী প্রভাব বিস্তার করব!” এ কথার সমর্থনে যুক্তি দিতেই কুণাল পার্থবাবুর নাম করেন।
কুণাল প্রথমে পকেট থেকে একটি পোস্টকার্ড মাপের কাগজ বের করে আদালতে পেশ করতে চান। বিচারক জানতে চান, কাগজটি কী? কুণাল জানান, এটি একটি ক্লাবের কাগজ। তাদের পুজো কয়েকটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা স্পনসর করেছিল। কর্পোরেট পার্টনার হিসেবেও বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার নাম রয়েছে। আর সেই ক্লাবের চেয়ারম্যান রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এর পরেই কুণাল বলেন, “আমি তো জেলে। কিন্তু বাইরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ঘর গুছোতে দেবেন না।” আদালত কাগজটি তদন্তকারী অফিসারের কাছে জমা করতে নির্দেশ দেয়। এর ফলে সারদা মামলায় এ বার পার্থবাবুর নামও জড়াল।
এ ব্যাপারে পার্থবাবুর বক্তব্য কী?
দু’দিন আগেই শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, “সাংবাদিক কুণালকে আমি চিনতাম। কিন্তু কয়েদি কুণালকে চিনি না।” এ দিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত হোক। যে ক্লাবকে নিয়ে কথা উঠেছে, তাদেরও ডাকা হোক। এখানে আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নেই। চাঁদা ছাড়া কোনও ক্লাবই চলে না। প্রকৃত তদন্তের স্বার্থে ওই ক্লাবের সঙ্গে কথা বলা হোক। ব্যক্তিগত আক্রমণ করে লাভ নেই।”
সিবিআই সূত্রের খবর, কুণালের পেশ করা কাগজটি নাকতলার একটি ক্লাবের দুর্গাপুজোর ‘ভিআইপি পাস’। তাতে স্পনসর হিসেবে অন্তত ছ’টি অর্থলগ্নি সংস্থার নাম রয়েছে। কুণালের অভিযোগ, সারদা ছাড়া এই সব সংস্থা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে না। তবে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন বলেছেন শুধু সারদা নয়, অন্য সব বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাকে যাঁরা সাহায্য করেছেন, তাঁদেরও জেরা করতে হবে। তিনি জানান, সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেসের কারা বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে জড়িত, তা নিয়ে তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। সুব্রতবাবুর মন্তব্য, “দেখব, সিবিআই এর পর কী করে!”
শনিবার কুণালকে হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। সে দিন কুণাল বলেছিলেন, সুদীপ্ত ও তাঁর মুখোমুখি বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা করা হোক। এ দিন কোর্টে সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ দত্ত জানান, কুণালকে জেরা করে কিছু তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। এ বার তাঁকে জেল হাজতে পাঠানো হোক। কিন্তু আপত্তি জানিয়ে কুণাল বলেন, “হয় আমাকে জামিন দিন, নয় সিবিআই হেফাজতে পাঠান। আমি তদন্তে সাহায্য করতে চাই।” আদালত জানায়, প্রয়োজনে জেলে গিয়ে তাঁকে জেরা করা হবে। কুণাল পাল্টা বলেন, “জেলে আমায় একা জেরা করা হবে। আমি চাই অন্যদের সঙ্গে আমায় মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হোক।” আদালত অবশ্য ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুণালকে জেল হাজতেই পাঠিয়েছে।