আনাগোনা: পরিযায়ী পাখির দল। নিজস্ব চিত্র
সব কিছু ঠিক থাকলে সংস্কারের পরে পুজোর আগেই নতুন রূপে সাজিয়ে কুলিক পক্ষিনিবাস সাধারণের জন্য খুলে দেবে বলে ঠিক করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। সংস্কার কাজের জন্য গত ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে এই পক্ষিনিবাস। ইতিমধ্যেই পরিযায়ী পাখির দল এসে ভিড় করেছে। উৎসাহীরা প্রতিদিনই দেখতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। তাই তাঁদের সুযোগ করে দিতে সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার আগেই খুলে দেওয়া হল পক্ষিনিবাস। গত রবিবার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে পুরনো দামেই।
তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মাস খানেকের মধ্যে পুরো সংস্কার কাজ শেষ করে পুজোর আগেই আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন রূপে সাজানো পক্ষিনিবাস চালু করা হবে। বন দফতরের রায়গঞ্জ বিভাগের ডিএফও দ্বিপর্ণ দত্ত জানান, এ বছর অন্যান্য বারের তুলনায় এক মাসে আগেই পাখি এসে ভিড় করেছে। অন্য বছর যেখানে জুনের শেষ থেকে শুরু করে জুলাইয়ে পাখির দল কুলিকে আসে। এ বছর মে মাসের শেষ থেকে শুরু করে জুনের মধ্যেই চলে এসেছে পাখি। ডিএফও বলেন, ‘‘ওপেন বিল স্টক বা শামুক খোল, কর্মোর্যান্ট বা পানকৌড়ি, ইগ্রেট, নাইট হেরনে ভরে রয়েছে পাক্ষিনিবাস। উৎসাহীরা অনেকেই আসছেন। বন্ধ থাকায় তাঁরা হতাশ হয়ে ঘুরে যাচ্ছেন। তাই গত রবিবার থেকেই উৎসাহীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। পুরনো টিকিট মূল্যেই পাখি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা। সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পরে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ যে মূল্য ঠিক করবেন, সেই প্রবেশ মূল্য লাগু করা হবে।’’
ফি বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর যখন পরিযায়ীর দল থাকে, সেটা ‘অনসিজ়ন’। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা-সহ বিহার থেকে লক্ষাধিক পর্যটক আসেন কুলিকে। কিন্তু বাকি সময়ে, অর্থাৎ অফ সিজ়নেও কুলিকে পর্যটক টানতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। বস্তুত, ওই লক্ষ্যেই ২০১৫ সালের অগস্টে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে পক্ষিনিবাসের সংরক্ষিত এলাকায় প্রাণি সংরক্ষণ কেন্দ্র ও প্রজাপতি পার্ক তৈরির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার স্বার্থে পক্ষিনিবাসের সংরক্ষিত এলাকার সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়ন কথাও জানান। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা সেই মতো প্রকল্প করে পাঠালে গত বছর জুন মাসে সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পর্যটন দফতর ওই বরাদ্দ দিয়েছে।
এর পরেই শুরু হয় সংস্কার কাজ। পক্ষিনিবাসের সংরক্ষিত এলাকায় কচ্ছপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার কচ্ছপ রাখা হয়েছে। নীলগাই, হরিণ, খরগোস, সাপ সংরক্ষণ কেন্দ্রও গড়া হয়েছে। আনা হয়েছে এমু, টার্কি। প্রজাপতি পার্ক গড়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে রঙিন মাছের অ্যাকোরিয়াম। ‘বার্ড অ্যাভিয়ারি’ করে সেখানে ককাটাইল, বদ্রী, পিনস, রোয়েল-সহ অন্তত ২৫০ পাখি রাখা হচ্ছে। যাতে অফ সিজ়নেও উৎসাহীরা হরেক রকম পাখি দেখতে পান। তৈরি হয়েছে তিনটি নতুন নজর মিনারও। পুরো পাখিরালয়টিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করে সেখানে হাতে তৈরি বিভিন্ন শৌখিন জিনিস বিক্রির জন্য রাখা হবে। কুলিকে প্রবেশ পথের কাছে থাকা নজরমিনার সংলগ্ন ভবনে হার্বোরিয়াম তৈরি করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে কনফারেন্স হল, ফটো এবং ভিডিও গ্যালারি। সুসজ্জিত ফটক, পেপার ব্লক পাতা রাস্তা, পানীয় জল, শৌচাগার, বসে বিশ্রাম নেওয়ার পরিকাঠামোও হচ্ছে। মাস খানেকের মধ্যেই সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে বন দফতর সূত্রে খবর।
(সহ প্রতিবেদন: গৌর আচার্য)