তুষার কোঠারি
উনিশ দিন ধরে খোঁজ নেই ছেলের। শেষ চিহ্ন বলতে গঙ্গার ঘাটের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া সাইকেল, সবুজ গেঞ্জি আর কালো ট্রাউজার্স। সেগুলি আঁকড়েই ষোলো বছরের কিশোরের পথ চেয়ে আছেন বালির কোঠারি দম্পতি। অপেক্ষা, কখন ফের শুনতে পাবেন চেনা গলার আওয়াজটা।
বালি থানা থেকে ভবানী ভবন, কলকাতা পুলিশের দরজায়-দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন দম্পতি। কিন্তু কোথাও মিলছে না তাঁদের একমাত্র সন্তান তুষার কোঠারির খোঁজ। গঙ্গার ঘাটে পোশাক রেখে ওই কিশোর কোথাও চলে গিয়েছে, না কি গঙ্গায় নেমে কোনও দুর্ঘটনায় পড়েছে, তা-ও স্পষ্ট করে কেউ জানাতে পারছেন না। যদিও ওই দম্পতির দাবি, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, ছেলে বেঁচে আছে। কিন্তু পুলিশ তো কিছুই জানাচ্ছে না।’’ বালি থানার তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, ডুবুরি নামিয়ে গঙ্গায় তল্লাশি চালিয়েও কিছু পাওয়া যায়নি। সব থানায় ওই কিশোরের ছবি পাঠানো হয়েছে।
গত ৩ জুন, সোমবার দুপুর থেকে নিখোঁজ বালির শান্তিরাম রাস্তার বাসিন্দা হেমন্ত কোঠারি ও সুনীতা কোঠারির ছেলে তুষার। ওই রাতে এলাকায় গঙ্গার ঘাটগুলিতে তল্লাশি চালানোর সময়ে বালির কেদার ঘাট থেকে উদ্ধার হয় তার সাইকেল এবং পোশাক। কিন্তু ওই দিন জনবহুল কেদার ঘাটে স্নান করতে নেমে কেউ তলিয়ে গিয়েছেন বলে জানাতে পারেননি স্থানীয় কোনও বাসিন্দা। তবে গঙ্গার ঘাটে তুষার যে গিয়েছিল, তার প্রমাণ মিলেছে থানার সামনে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে।
শান্তিরাম রাস্তায় এক পুরনো বাড়ির দোতলায় থাকেন হেমন্তবাবুরা। বড়বাজারে কাপড়ের দোকানে কাজ করলেও এই মুহূর্তে তিনি কর্মহীন। মঙ্গলবার তাঁদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, একমাত্র ছেলের শোকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন মা সুনীতাদেবী। তিনি জানালেন, পড়াশোনা করার জন্য তুষারকে নেপালের একটি বোর্ডিংয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে সে পঞ্চম শ্রেণি থেকে পড়াশোনা করছে। প্রতি বছর পরীক্ষার শেষে বালির বাড়িতে আসত। এ বারও মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হতেই ৫ মে বাড়ি এসেছিল তুষার।
সুনীতাদেবী বলেন, ‘‘বাড়ি আসার পরে আমার সঙ্গে বিশাখাপত্তনমে মামার বাড়ি ঘুরতে গিয়েছিল ছেলে। কুড়ি দিন আমরা ওখানে ছিলাম। বালিতে ফিরেও ছেলে ঘর থেকে বেরোত না। এখানে তো ওর কোনও বন্ধুও নেই।’’ তিনি জানান, ৩ জুন সকালে হেমন্তবাবুকে সাইকেলে চাপিয়ে বেলুড় স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে এসেছিল তুষার। পরে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য তাঁকেও স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে এসেছিল। ওই দিন দুপুরে একটি অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ ছিল মা ও ছেলের।
সুনীতাদেবী জানান, তিনি ছেলেকে বলেছিলেন অনুষ্ঠানে পৌঁছে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তিনি দেখেন, তুষার আসেনি। বারবার ফোন করলেও ধরেনি সে। সন্ধ্যা থেকে বালি ও আশপাশের এলাকায় শুরু হয় তুষারের খোঁজ। তার ছবি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার দিয়েছেন পরিজনেরা।
সকলেরই আশা, কোনও ভাবে যদি খোঁজ মেলে ওই কিশোরের। আর চোখের জল মুছে সুনীতাদেবী বলছেন, ‘‘ছেলেটা খালি বলত মা, এক বার গঙ্গায় স্নান করাতে নিয়ে যাবে? যদি সঙ্গে থাকতাম, তা হলে হয়তো হারাত না।’’