হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরবেন বলে ঘণ্টা দুয়েক সময় হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বাসে দিকে রওনা দিয়েছিলেন ঢাকুরিয়ার প্রণব বসু। এক্সাইড মোড়ে বাস দাঁড়িয়ে রইল ঠায় ৪০ মিনিট। বাধ্য হয়ে স্ত্রী-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পাতালে ঢুকেছিলেন মেট্রোয় ধর্মতলা পৌঁছে ট্যাক্সি ধরবেন বলে। ভিড়ের চাপে মেট্রোও অনিয়মিত। শেষে ধর্মতলা থেকে ট্যাক্সি চেপে যখন হাওড়া স্টেশনে পৌঁছলেন তাঁরা ট্রেন ছাড়তে তখন বাকি সাকুল্যে ১০ মিনিট।
প্রণববাবু একা নন। রবিবার, ছুটির দিনে মিছিল-সমাবেশের জন্য ভোগান্তির হাত থেকে রেহাই পেলেন না শহরবাসী। সঙ্গে চাপল দেরিতে চলা মেট্রোর সমস্যা। সৌজন্যে, সিপিএমের রবিবাসরীয় ব্রিগেড সমাবেশ।
পুলিশ জানায়, শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন, এক্সাইড, আলিপুর, খিদিরপুর ও বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে ব্রিগেডে আসা মিছিল এবং গাড়ির চাপে এ দিন বেলা ১২টার পর থেকেই ঘণ্টা দুয়েকের জন্য কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা থেকে এক্সাইড মোড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ব্রিগেডমুখী অসংখ্য ছোট-বড় মিছিলের জেরে বেলা বাড়ার পর থেকেই যান চলাচল থমকে যায় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, জওহরলাল নেহরু রোড, থিয়েটার রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, ডি এল খান রোড, মেয়ো রোড-সহ উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায়।
লালবাজার সূত্রের খবর, মৌলালি থেকে মল্লিকবাজার পর্যন্ত এজেসি বসু রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সেন্ট জর্জেস গেট (হেস্টিংস) এবং গোষ্ঠ পাল সরণির দু’ধারে গাড়ি পার্কিং এবং মিছিলের জেরে যানজট হয়। ফলে বাধ্য হয়ে ছুটির দিন কাজে বেরোনো সাধারণ মানুষের বহু গাড়ি, সরকারি-বেসরকারি বাসও আটকে পড়ে। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, বাস এবং অন্য গাড়ি মিলিয়ে এ দিন তিন হাজারেরও বেশি গাড়ি ছিল ব্রিগেডমুখী। তবে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের দাবি, রবিবার হওয়ায় ব্রিগেডমুখী বাস-গাড়ি ছাড়া অন্য যান ছিল হাতেগোনা। ফলে ট্রাফিক সামলাতে বেগ পেতে হয়নি।
লালবাজার সূত্রে এ দিন আরও দাবি করা হয়েছে, বেলা ১২টা পর্যন্ত শহরকে যানজটের কবলে পড়তে হয়নি। কিন্তু বারোটার পর থেকে শিয়ালদহ স্টেশন এবং উত্তর কলকাতা থেকে আসা বিরাট মিছিল আছড়ে পড়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ ধর্মতলাগামী রাস্তাগুলিতে। ফলে, প্রায় দেড় ঘণ্টার জন্য শহরের অন্য সব অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র। একই অবস্থা হয় আশুতোষ মুখার্জি রোড, ডি এল খান রোড, ডায়মন্ড হারবার রোডেরও। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, সমাবেশ শুরুর পরে দুপুর দেড়টা থেকে রাস্তা ফাঁকা হতে শুরু করেছিল। ফের সমাবেশ শেষে ব্রিগেড ফেরত গাড়ি রাস্তায় নামায় কিছুটা যানজট হয়। তবে তা সাময়িক বলে দাবি করা হয় কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে।