স্টিফেন কোর্টে অগ্নিবিধি এখনও প্রশ্নের মুখেই

সিঁড়ির তলায় খোলা মিটার বক্সকেই মূলত দায়ী করেছিল দমকল। স্টিফেন কোর্টের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে চার বছর কেটে গিয়েছে। পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে বহু দিন, তবু বেশ কয়েকটি ব্লকে ঢোকার মুখে এখনও দেখা যায় খোলা মিটার বক্স।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০০:২৫
Share:

সিঁড়ির তলায় খোলা মিটার বক্সকেই মূলত দায়ী করেছিল দমকল। স্টিফেন কোর্টের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে চার বছর কেটে গিয়েছে। পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে বহু দিন, তবু বেশ কয়েকটি ব্লকে ঢোকার মুখে এখনও দেখা যায় খোলা মিটার বক্স।

Advertisement

চার বছর আগে ২৩ মার্চ স্টিফেন কোর্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে ২৪ দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল দমকলের তরফে। বলা হয়েছিল, ওই বাড়িতে থাকতে হলে বাসিন্দাদের মানতে হবে সেই অগ্নিবিধি। সম্প্রতি স্টিফেন কোর্ট ঘুরে দেখা গেল, ২৪ দফা সুপারিশের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছ’টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজ চলছে। আর বাকি সুপারিশের কাজ শুরুই হয়নি। যেমন সিঁড়ির নীচে খোলা জায়গায় মিটার বক্স না রাখার মতো ন্যূনতম শর্তই মানা হয়নি এখনও।

অথচ চার বছর আগে দমকল জানিয়েছিল, দু’নম্বর ব্লকের সিঁড়ির তলার খোলা মিটার বক্সে কোনও ভাবে লেগে যাওয়া আগুন থেকেই দুর্ঘটনার সূত্রপাত। একতলার ওই আগুনই ছড়িয়ে পড়েছিল পাঁচতলা পর্যন্ত। অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছিলেন বহু লোক। এর পরেই দমকল জানিয়ে দিয়েছিল, ২৪ দফা সুপারিশ না মানলে ওই বাড়িতে আর থাকার ছাড়পত্র মিলবে না।

Advertisement

ওই বাড়ির একটি ব্লকে ঢোকার মুখে দেখা গেল, শুধু খোলা মিটার বক্সই নয়, রয়েছে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলতে থাকা বিদ্যুতের তারও। সেই ব্লকের দোতলার বারাসন্দায় এখনও রয়ে গিয়েছে বেশ কিছু কাঠের পার্টিশন। অথচ দমকলের তরফ থেকে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছিল কোনও তলেই খোলা জায়গায় কোনও কাঠের দেওয়াল রাখা যাবে না। কাঠের দেওয়াল রাখতে হলে তাতে ব্যবহার করতে হবে উপযুক্ত অগ্নিনির্বাপক রং। অথচ ব্লকগুলি ঘুরে দেখা গেল, চার বছর আগে যেমন অবস্থা ছিল, ঠিক তেমনই রয়েছে ওই সব দেওয়াল। দেওয়ালে ঝুলে থাকা তার কনসিল করার কথাও বলেছিল দমকল। সেই কাজও হয়নি অধিকাংশ জায়গায়। দমকলের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, প্রতি তলেই থাকতে হবে ‘ফায়ার এসকেপ রুট’। দেখা গেল, দু’টি ব্লকে আলাদা করে বাইরে থেকে সিঁড়ি তৈরির কাজ শুরু হলেও বাকি কোনও ব্লকেই সে কাজে হাত পড়েনি।

এ দিকে দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, “দমকল যে ক’টি সুপারিশ করেছিল, সব ক’টি না মানলে কোনও ভাবেই ওই বাড়িতে বসবাসের ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না। সব সুপারিশ মেনে কাজ সম্পন্ন হয়েছে এ রকম কোনও চিঠি আমরা স্টিফেন কোর্টের তরফে এখনও পাইনি। তাই ছাড়পত্রও দেওয়া হয়নি।” দমকলের ছাড়পত্র না মেলায় সিইএসসি-র তরফ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগেরও অনুমতি মেলেনি।

স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের পরে এই বাড়ির মেরামতির কাজ বাড়ির বাসিন্দাদেরই করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। এর পরে এই বাড়ির কাজ করার জন্য তৈরি হয়েছিল ‘স্টিফেন কোর্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। কেন চার বছর কেটে গেলেও এখনও সব ক’টি সুপারিশ মেনে কাজ হল না? অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবাশিস গুহ নিয়োগীর অবশ্য দাবি, “দমকলের সব ক’টি সুপারিশ এখনও না মানা হলেও গত চার বছরে অনেকটা কাজ এগিয়েছে। বাড়ির ক্ষতিগ্রস্থ অংশে প্লাস্টার করে রঙের কাজ শেষ। দু’নম্বর ব্লক, যেখানে আগুন লেগেছিল সেখানে নতুন লিফট তৈরির কাজ হচ্ছে।”

স্টিফেন কোর্ট ঘুরে অবশ্য দেখা গেল, দমকল যে জলাধার তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটির কাজ শেষ। জলের পাইপ দিয়ে বিল্ডিং ঘেরার কাজ চলছে। দু’নম্বর ব্লকের আগুনে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ অংশটি মেরামতির কাজও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন এখনও দমকলের ন্যূনতম শর্ত সিঁড়ির নীচের মিটার বক্স সরানো বা কাঠের পার্টিশন সরানোর কাজ হয়নি? দেবাশিসবাবু বলেন, “পুরো বাড়িটায় রয়েছে অজস্র ফ্ল্যাট। সব ফ্ল্যাটের মালিককে এক ছাতার তলায় এনে কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। অনেকের মধ্যে

আবার অগ্নিবিধি নিয়ে সে রকম সচেতনতাও তৈরি হয়নি। তাই কাজ এগোতে একটু সময় লাগছে। তবে শীঘ্রই আমরা সকলে বসে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে ফেলব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement