তিস্তা দাস
ভোপালের সাদাব হাসানের পরিবার সমাজের প্রচলিত রীতি ভাঙার দৃঢ়তা দেখিয়েছে। নয় বছরের পুরনো প্রেমিকা রূপান্তরকামী সঞ্জনার সঙ্গেই বিয়ে ঠিক করেছেন তাঁর বাবা-মা। বাড়ির বৌ হিসেবে মেনে নিয়েছেন সঞ্জনাকে। প্রায় একই রকম ঘটনার সাক্ষী থাকতে চলেছে এ শহরও। আগরপাড়ার বাসিন্দা রূপান্তরকামী তিস্তা দাশকে নিজেদের বাড়ির বউমা বলে স্বীকৃতি দিতে চলেছে বালি-র গুপ্ত পরিবার।
পরিবারের সম্মতিতেই বাড়ির একমাত্র ছেলে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সৌমাকান্তি গুপ্তর সঙ্গে আগামী ২৪ নভেম্বর বিয়ে ঠিক হয়েছে তাঁর বছর তিনেকের পুরনো প্রেমিকা তিস্তার। লুকিয়ে-চুরিয়ে নয়, পুরোহিত ডেকে, আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে, খাইয়ে, সামাজিক মতে বিয়ে হবে। অনুষ্ঠানবাড়ি ভাড়া নেওয়া, বেনারসী কেনার কাজ সারা হয়েছে।
তিস্তা এক সময় পুরুষ ছিলেন জানার পরেও কিন্তু সৌম্যর বাবা-মা পিছিয়ে আসেননি, বরং ছেলের পছন্দকে সম্মান দিতে চেয়েছেন। হাসান পরিবারের মতো গুপ্ত পরিবারেরও মত, সমাজ কী বলল, আত্মীয়স্বজন কী ভাবলেন, তার থেকেও তাঁরা ভালবাসা এবং ব্যক্তিগত পছন্দকে মর্যাদা দিতে চান। আর তিস্তা ধরা গলায় বলেন, “আমার সঙ্গেও যে কখনও এত ভাল হবে, নিজের সংসার পাব, সম্মান পাব, ভাবিনি।”
চার বছর ধরে হরমোন থেরাপি আর একের পর এক সার্জারির পরে নারীর রূপ পেয়েছেন তিস্তা। চাকরি করছেন বেসরকারি সংস্থায়। অবসরে অভিনয়ও করেন। জানালেন, বছর তিনেক আগে নন্দনে বন্ধুদের এক আড্ডায় আলাপ হয়েছিল সৌম্যকান্তির সঙ্গে। আলাপ থেকে প্রেম। খুব ইচ্ছে করত সৌম্যকে বিয়ে করতে, কিন্তু পিছিয়ে আসতেন। কোনও ভাবে তাঁর জন্য সৌম্য সামাজিক চাপের মুখে পড়েন, তাঁর পরিবারের মাথা হেঁট হয়, চাইতেন না।
সৌম্যকান্তির কথায়, “প্রথমে ওঁকে মেয়ে বলেই জানতাম। আমাদের পরিচয়ের আড়াই মাস পরে তিস্তা আমাকে ওঁর অতীত জানায়। একটু ধাক্কা খেয়েছিলাম। কিন্তু ভালবাসার ভিত শক্ত হলে ও সব কোনও বাধা হয় না।” বলেন, “ওকে বলেছিলাম, আমাদের সম্পর্ক একই রকম থাকবে, কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতির পথে হাঁটতে গেলে ঝড় আসতে পারে। বাবা-মায়ের কাছে কিছু লুকবো না। কারণ, সত্যি বেশিদিন লুকনো যায় না। ওঁদের মানানো সহজ হবে না। সেই ঝড়ের জন্য যেন ও প্রস্তুত থাকে।”
ঝড় সত্যিই উঠেছিল। সৌম্যকান্তি বাবা-মাকে তিস্তার আসল পরিচয় বলার পরে কিছুদিনের জন্য ধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল গুপ্ত পরিবার। তাঁর মা সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছিলেন। সেই সময় প্রায় প্রতিদিন হবু শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলতে যেতেন তিস্তা। বোঝাতেন। ধীরে-ধীরে ওঁদের সম্পর্কের উষ্ণতা অনুভব করতে পেরেছিলেন গুপ্ত পরিবারের সদস্যেরা। সৌম্যকান্তির মায়ের কথায়, “তিস্তাই আমার বাড়ির বৌমা। আর পাঁচটা বৌয়ের মতো ওকে নিয়ে আমরা সুখে সংসার করতে চাই। শুধু অনুরোধ করেছি, ওঁরা যেন কারও কাছে যেচে তিস্তার অতীত বলতে না বসে।” তিনি আরও বলেন, “লোকের মুখ বন্ধ হবে না। আমার ছেলে বা আমরা কিসে ভাল থাকব সেটা আমরাই ঠিক করব।” রূপান্তরিত অধ্যাপিকা মানবী যা শুনে বলেছেন, “সমাজ যে অল্প হলেও বিবর্তিত হচ্ছে তাতে আমি রোমাঞ্চিত।”
বিয়ের পরে তিস্তা-সৌম্যর যৌন জীবন যাপনে অসুবিধা হবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, ইতিমধ্যে অস্ত্রোপচার করে তিস্তার ভ্যাজাইনা ও ইউরেথ্রা তৈরি করা হয়েছে। তবে সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন না তিনি। অবশ্য, সারোগেট মাদারের সাহায্য নিয়ে মা হতে সমস্যা নেই। অপেক্ষা শুধু ২৪ নভেম্বরের।