বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা

কেউ হাসপাতালে। কেউ বাড়িতে। কেউ গুরুতর আহত। কেউ অল্পস্বল্প জখম। কিন্তু মনের ভিতরে আতঙ্কের রেশ সবারই এক রকম। হাড় হিম করা অভিজ্ঞতা। বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা। লিখলেন সল্টলেকে ভোট কভার করতে যাওয়া আক্রান্ত সাংবাদিকরা।কেউ হাসপাতালে। কেউ বাড়িতে। কেউ গুরুতর আহত। কেউ অল্পস্বল্প জখম। কিন্তু মনের ভিতরে আতঙ্কের রেশ সবারই এক রকম। হাড় হিম করা অভিজ্ঞতা। বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা। লিখলেন সল্টলেকে ভোট কভার করতে যাওয়া আক্রান্ত সাংবাদিকরা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০০
Share:

শৌভিক দে

Advertisement

চিত্র সাংবাদিক, আনন্দবাজার পত্রিকা

সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ গিয়েছিলাম এবি ব্লকে। সেখানে কমিউনিটি সেন্টারে বুথ হয়েছে। শুনেছিলাম সেখানে অনেক বাইরের লোক জড়ো হয়েছে। যখন সেখানে পৌঁছই তখনই দেখি হাজির কয়েকশো লোক। বেশির ভাগই বহিরাগত। অভিযোগ ওঠায় বুথ কেন্দ্র ফাঁকা করতে ওখানে পুলিশ লাঠি চালায়। যারা পালাচ্ছিল তাদের ছোঁড়া ইট এসে পড়েছিল পিঠে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম। ওই ভাবে কিছুক্ষণ কাটানোর পরে কিছটা সুস্থ হই।

Advertisement

তারপরে ফের নেমে পড়ি রাস্তায়। শুনতে পাই ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের বুথে আমাদেরই এবিপি আনন্দের অরিত্রিককে ব্যাপক মারধর করছে বহিরাগতেরা। সেখানে চলে যাই। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি তখন অরিত্রিকেরা কেউ নেই। কিন্তু রয়েছে বিরাট জনতা, প্রায় হাজার দেড়েক লোক। মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তৃণমূলের দুই বিধায়ক সুজিত বসু এবং পরেশ পাল।

একটু দূরে বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান কঙ্কর প্রসাদ বারুই সহ অন্যান্য অফিসারেরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমরা পুলিশ দেখে বুকে বল নিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের ভিতর দিকে এগিয়ে যাই। ভিতরে ঢোকা মাত্রই সুজিতবাবু আমাদের দিকে প্রায় তেড়ে আসেন। পাশ থেকে শুরু হয় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। আমরা পুলিশদের দিকে এগিয়ে প্রশ্ন করি, আপনারা এসব দাঁড়িয়ে দেখছেন! আমার সঙ্গে আরো চার-পাঁচটি অন্য মিডিয়ার প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তাঁরাও বলতে থাকেন। এর মধ্যেই আমাদের দিকে তেড়ে আসে জনতা। দু’জন ক্যামেরাটা টেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। পিঠে কয়েকটা কিল ঘুষিও পড়ে।

কোনও মতে নিজেকে বাঁচিয়ে অন্যদিকে সরে যাই। কিন্তু তার মধ্যেই আচমকা একটি আধলা ইট উড়ে এসে আবারও মুখে লাগে। ঠোঁট ফুলে যায়। কিন্তু অরিত্রিক এবং এবিপি আনন্দের চিত্র সাংবাদিক পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীর অবস্থা দেখে নিজেরই মনে হল, আমার তো তেমন লাগেনি। এর মধ্যেই ফোন আসতে শুরু করেছে। মোবাইলে। আর তখনই বুকটা কিছুটা কেঁপে উঠল। ইটটা যদি চোখে বা মাথয় এসে লাগত!

শরমিন বেগম

সাংবাদিক, কলকাতা টিভি

সকাল থেকেই চিত্র সাংবাদিক তন্ময় দত্ত বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে বিধাননগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছিলাম। বেলা আড়াইটে নাগাদ পৌঁছলাম এফডি ব্লকে রমলা চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকেই দেখতে পেলাম জনা কুড়ি যুবকের জটলা। রয়েছে পুলিশের একটি দলও। ভাবলাম এখানে খবর হতে পারে তাই ওই জটলার কিছুটা দুরেই গাড়ি থেকে নামলাম তন্ময়দাকে নিয়ে। আমার ছবি তুলছি দেখে বেশ কয়েকজন এগিয়ে এসে দুরে কয়েকজনকে দেখিয়ে আস্তে আস্তে বললেন,‘দেখছেন সিপিএম লোক ঢোকাচ্ছে।’ এর মধ্যেই হঠাৎ করে দেখতে পেলাম বাঁদিক থেকে তিনটি সাদা গাড়ি এসে থামল। পিছনে প্রায় জনা কুড়ি ছেলে। গাড়িগুলিকে থামতে দেখেই এক পুলিশকর্মী সেদিকে এগিয়ে গেল। দেখলাম ওই পুলিশকর্মীকে ধাক্কা মারল গাড়িতে থাকা যুবকরা। পুলিশকর্মীকে ধাক্কা মারা হচ্ছে দেখে একজন উচ্চ পদস্থ পুলিশ অফিসার ওই যুবকদের দিকে এগিয়ে গেলেন। যুবকরা ওই পুলিশ অফিসারকে প্রায় ধাক্কা মারতে মারতে ২৫ মিটার নিয়ে গেল। আমি মোবাইলে এবং তন্ময়দা ক্যামেরায় সেই ছবি তুলছি। হঠাৎ করে দেখলাম ওই যুবকরা পুলিশদের ছেড়ে আমাদের দিকে তেড়ে এল। একজন জানতে চাইল কেন ছবি তুলছি। এর মধ্যেই একজন তন্ময়দাকে ধাক্কা মারল, ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। তন্ময়দা ক্যামেরা বাঁচানোর চেষ্টা করতেই ওকে মারতে শুরু করল ওই যুবকরা। প্লাষ্টিকের চেয়ার তুলে মারতে শুরু করে ওই যুবকরা। কিছুক্ষণ আগেই রাস্তার পাশে থাকা ওই চেয়ার তুলে আছড়ে ভাঙতে দেখেছি। আমি তখন অন্যদিকে সরে গেছি। বুঝতে পারছি বিপদ। তাই ফুটপাতে থাকা গাছের পিছনে দিয়ে দৌড় শুরু করি। কিন্তু ওদের সঙ্গে দৌড়ে পেরে উঠলাম না। কয়েকজন আমাকে ঘিরে ফেলল। শুরু হল অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ। আমাকে রাস্তার ধারে একটি পাঁচিলে ঠেসে ধরে ওই যুবকরা আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দিতে থাকে। বাকিটা যা বলল তা আর মনে করতে চাইছি না। আমি ওই যুবকদের বলি আমাকে ছেড়ে দিন। আমি চলে যাচ্ছি। আমার হাতের দুটি ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ওই যুবকরা। এর মধ্যেই আমি কোন মতে দৌড় শুরু করি প্রাণে বাঁচার জন্য। প্রথমে একটি বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করি। কিন্তু ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা আমাকে ঢুকতে বাধা দেয়। ওই নিরাপত্তারক্ষীরা কিন্তু দুর থেকে দেখেছে আমার অবস্থা। ফের কিছুটা দৌড়নর পর পিছনে ফিরে দেকতে পেলাম ওই যুবকরা আর আসছে না। এর মধ্যেই আমি পৌছে যাই এফডি কমিউনিটির সামনে। সেখানে দেখি অন্য চ্যানেলের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আছে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে। আমি তখনও জানিনা তন্ময়দার কী অবস্থা। আমি দৌড়ে এক পুলিশ অফিসারকে পুরো ঘটনা বলে সাহায্য চাই। ওই অফিসার আমাকে বলেন,‘জানেন তো আজকে ঝামেলা হবে। এখানে এসেছেন কেন।’ সাহায্য চাইলে তিনি ফের বলেন,‘এই সব বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না।’ এর মধ্যেই অফিস থেকে অন্য একটি দল সেখানে এসে পৌঁছেছে। তাঁদের কাছেই জানতে পারলাম, আমাদের গাড়ির চালক তন্ময়দাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। কিন্তু যা ঘটল আজকে তা ভুলতে পারব কিনা জানি না।

অরিত্রিক ভট্টাচার্য

রিপোর্টার, এবিপি আনন্দ

বিধাননগর পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তী। শাসকদলের সমর্থকেরা অনেক আগে থেকেই এই ওয়ার্ডটি বিশেষ নজরদারিতে রেখেছিলেন। তাই সকাল থেকেই ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের বুথে বহিরাগতদের ভিড় জমছিল। শাসক দলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে বারবার বুথ জ্যাম করার অভিযোগও আসছিল। খবর পেয়ে ওখানে যখন যাই তখন সকাল সাড়ে ১০টা বেজে গিয়েছে।

ওই ইন্সটিটিউটের ভিতরে ঢুকতেই বুঝতে পারি লাইনের বেশির ভাগ ‘ভোটার’ই বহিরাগত। আমরা প্রশ্ন করতেই আস্তে আস্তে ভিড় পাতলা হতে থাকে। প্রচুর বহিরাগত মহিলাও ছিলেন ওখানে। তাঁদেরও প্রশ্ন করি, ‘আপনারা ভোটার’? এতেই তেতে ওঠে ওই সব বহিরাগতেরা। কাপড় দিয়ে মুখে ঢেকে তারা চিৎকার করে গালাগালি দিতে দিতে অনেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। তারপরে পুলিশের কাছে দাঁড়িয়ে আমাদের শাসাতে থাকে।

কিছুক্ষণ পরে আমার ক্যামেরাম্যান পার্থসারথি ক্যামেরা নিয়ে আসতেই একজন ক্যামেরাটি জোর করে কেড়ে নেয়। আমরা চিৎকার করতেই তারা ক্যামেরা নিয়ে দৌড় দেয়। আমরাও ওদের পিছু নেই। তারপরেই কয়েক জন এসে আমায় ঘিরে ধরে। ততক্ষণে ক্যামেরাটা রাস্তায় ফেলে দিয়ে লোকটা ভিড়ে মিশে গিয়েছে।

এরপরেই আচমকা আমার ঘাড়ে, মাথায় পিঠে কিল চড় পড়তে থাকে। একজন এমন ভাবে ঘাড়ে ধাক্কা মারে যে আমি মাটিতে পড়ে যাই। তারপরে এক জন আমার মুখ লক্ষ্য করে ঘুষি চালাতে থাকে। তাতে আমার ঠোঁট ফেটে যায়। ঝরঝর করে রক্ত পডতে শুরু করে। মুখ ফুলে ওঠে। আমি জ্ঞান হারাই। তারপরে আর মনে নেই।

জ্ঞান ফেরার দেখি আমায় আরেকটি বাড়ির চাতালে বসানো হয়েছে। মুখে ঘাড়ে বরফ দিচ্ছে পার্থ। একটু সুস্থ হতেই আমায় ওই নিয়ে আসে আমরি হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আমার নাকের হাড়ে চিড় ধরেছে। হাতে ও মুখেরও নানা জায়গাতেও ক্ষত হয়েছে। সন্ধ্যার পরে আবার গায়ে জ্বর এসেছে। কয়েক দিন থাকতে হবে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

দেবারতি ঘোষ

সাংবাদিক, ২৪ ঘন্টা

আমার বিধাননগর পুরসভার ভোটের ডিউটি ছিল এফডি ব্লকে। সকাল থেকেই দেখছি বহিরাগতরা ভিড় করে রেখেছে এফডি কমিউনিটির বুথের সামনে। একের পর এক অটো আসছে। তাতে কোন নম্বর প্লেট নেই। নেই কোন রুটের উল্লেখ। এরমধ্যেই খবর পেলাম এফডি কমিউনিটির ওই বুথে বহিরাগতরা অবাধে ভোট দিচ্ছে। আমি আমার চিত্র সাংবাদিক পার্থ পালকে নিয়ে সেই খবর সংগ্রহ করেছি। এ ছাড়া ওই নম্বর প্লেটহীন অটোর খবরও করেছি। ওই বহিরাগতদের বেশ কয়েকজন আমার কাছে এসে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে থাকে, আমি ওখানে থাকলে ওদের কাজে অসুবিধে হচ্ছে। তাই আমাকে নাকি সরাতে হবে ওখান থেকে। আমি ওদের কথায় গুরত্ব না দিয়ে কাজ করে যেতে থাকি। বেলা একটা নাগাদ ওই যুবকরা সরাসরি আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘এখান থেকে না সরলে, গাড়িতে তুলে নিয়ে যাব। তারপর যা করার করব।’

এরমধ্যেই শুনলাম এবিপি আনন্দের সাংবাদিক অরিত্রিক ভট্টাচার্যকে মারধরা করা হয়েছে ওই বুথের সামনে। আমি সেটা শুনেই এফডি ব্লকের এআইটি বুথের সামনে যেতেই ওই যুবকরা ফের আমাকে ঘিরে ফেলল। এবং ধাক্কা মারতে মারতে আমাকে একটি গাড়ির দিকে নিয়ে যায়। সঙ্গে চলতে থাকে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি এবং অশ্রাব্য গালিগালাজ। আমি ভয় পয়ে যাই। বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী কিন্তু তখন সামনেই দাঁড়িয়ে। আমি আক্রান্ত হয়েছি শুনে এর মধ্যেই সেখানে চলে আসে আমার সহকর্মী বিক্রম দাস সহ অনান্য সাংবাদিকরা। আমাকে ছেড়ে ওই যুবকরা এবার কিছটা পিছু হঠল ঠিকই। কিন্তু এলাকাতেই রয়ে গেল তারা। এরমধ্যেই আমি ফাঁক পেয়ে দৌড়তে শুরু করি। তখনও পিছনে চলছে ইটবৃষ্টি, টিউব লাইট ছোঁড়া। এরমধ্যেই দেখলাম ওই যুবকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে বিধায়ক সুজিত বসু। তাঁর সামনেই সমানে আমাদের দিকে ছোঁড়া হচ্ছে ইট, বাঁশ, পাথর। আমাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সেখানে তখন পৌঁছে গেছে বিরাট পুলিশ বাহিনী। এক পুলিশ অফিসারকে সুজিত বসু বললেন, ‘আপনারা সাংবাদিকদের বাঁচাতে এসেছেন।’ দেখলাম এর পরে পুলিশ আরও নির্বিকার হয়ে গেল। অবস্থা ভাল নয় বুঝে সহকর্মীরা আমাকে বললেন এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। তখন ঘড়ির কাঁটায় তিনটে। ভোট শেষ হতে অনেকটাই বাকি। কাজ বাকি রেখেই অফিসে ফিরলাম।

সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়

চিত্র সংবাদিক, দ্য টেলিগ্রাফ

সকালে আমার ডিউটি ছিল বিধানগর ভোটের। সহকর্মী তমোঘ্ন বন্দোপাধ্যায়। সকালে সাড়ে নটা নাগাদ ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের এসি ব্লকের কমিউনিটি হলের বুথে একটি গোলমালের খবর পাই। শুনি বহিরাগতরা একজন বৃদ্ধকে মাটিতে ফেলে মারধর করেছে। সেটা শুনেই আমার খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই বৃদ্ধের বাড়ি এবি ব্লকে। এলাকার একজন যুবককে অনুরোধ করে ওই বৃদ্ধের বাড়িতে নিয়ে যেতে। সেই মতো ওই যুবক আমাদের এবিএসি পার্কের মধ্য দিয়ে ওই বৃদ্ধের বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এরমধ্যেই দেখতে পাই পার্কের পাশে বসে রয়েছেন জনা পনেরো মহিলা ও পুরুষ। আমাদের দেখেই মহিলারা মুখ ঢাকতে শুরু করেন। তা দেখেই কিছুটা সন্দেহ হওয়াতে আমি ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে থাকি। কয়েকটা ছবি তোলার পরেই ওই মহিলারা আমার দিকে এগিয়ে আসে। এবং অবাক করে একজন মহিলা আমাকে লক্ষ্য করে পা চালাতে শুরু করে। ওই মহিলা আক্রমণ করার পরই সেখানে বসে থাকা অন্যরা তাতে যোগদেন। আমাকে মাটিতে ফেলে শুরু হয় মারধর। লাথি, কিল ঘুষি অনবরত চলতে থাকে আমার ওপর। এরমধ্যেই একজন আমার ক্যামেরাটা কেড়ে নেয়। আমাকে টানতে টানতে একটি গেটের দিকে নিয়ে যায় ওই বহিরাগতরা।

এর মধ্যেই দু’জন এগিয়ে আসে আমার দিকে। আমার ক্যামেরাটা ফেরত দেয় এবং আমাকে উদ্ধার করে ওই এলাকা ছেড়ে বের হতে সাহায্য করে। মারধর খাওয়ার পরেও আমি বিধানগর ছেড়ে যাই নি। পিঠে, ঘাড়ে ব্যথা হলেও ডিউটি করতে থাকি। দুপুর আড়াইটে নাগাদ খবর আসে এটিআই-এর সামনে অন্যান্য সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয়েছে। এবং পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হচ্ছে বহিরাগতদের। ওই খবর পেয়েই সেখানে পৌঁছই ছবি তুলতে। গাড়ি থেকে নেমে ছবি তোলার চেষ্টা করতেই একজন আমার মাথায় হেলমেট দিয়ে আঘাত করে। আঘাতের পরেই তাকিয়ে দেখি যে আমাকে আঘাত করল সে বিধায়ক সুজিত বসুর গাড়ির চালক।

বিকেলে ঘাড়ে এবং পিঠে ব্যথা বাড়ায় চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাকে দক্ষিণ কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন অনেক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার।

পড়ুন: পাছে দাপট কমে যায়, শাসকের ভরসা তাণ্ডবে

পড়ুন: দিনভর চলল ‘ভোট-লুঠ’, সব দেখেও সুশান্ত শান্তই

পড়ুন: ভোট দেওয়াই হল না, গেরো রহস্যের মেরো

পড়ুন: সাংবাদিক নিগ্রহের নিন্দা, গ্রেফতারির দাবি

পড়ুন: ভোট করাল ভজাইরা, পাহারা দিল পুলিশই

পড়ুন: এ রকম ‘পিসফুল’ ভোটই ভাল, তাই না!

পড়ুন: ইহারা জননীর গর্ভের লজ্জা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement