ভর্তি নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কলেজের ডামাডোল থেকে বাইরে থাকতে পারছে না প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। তফাত একটাই। অন্যত্র গোলমাল কলেজ স্তরে ভর্তি নিয়ে। আর প্রেসিডেন্সিতে ঝামেলা বেধেছে স্নাতকোত্তরে বাড়তি আসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবিকে ঘিরে।
প্রথম দফায় রাতভর অবস্থানের পরে আসন বাড়ানো এবং প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল যে-সব ছাত্রছাত্রী এমএ, এমএসসি-তে ভর্তি হতে পারছেন না, তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়ার দাবিতে অনড় রয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। বুধবার ছাত্র সংসদের জেনারেল বডির বৈঠকের পরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসলিডেশন (আইসি) সমর্থক ছাত্রছাত্রীরা এ কথা জানান। একই দাবি তুলেছে এসএফআই-ও। সব মিলিয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি-পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠেছে।
কী করতে চায় ছাত্র সংসদ?
আইসি জানিয়ে দিয়েছে, দাবি জানাতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিশন বা ভর্তি কমিটির বৈঠকের বাইরে অবস্থান করবে। তাতেও দাবি মানা না-হলে আন্দোলন চলবে। এসএফআই-সমর্থক পড়ুয়ারাও এ দিন জানিয়ে দেন, তাঁরা স্নাতকোত্তরে আসন বাড়ানোর পক্ষে। তার জন্য যথাযথ ভাবে পরিকাঠামো বাড়াতে হবে। ভর্তি কমিটির বাইরে তাঁরাও অবস্থান করবেন বলে জানান এসএফআই-সমর্থক ছাত্রছাত্রীরা। দাবি এবং আন্দোলনের পদ্ধতিতে মিল আছে ঠিকই। তবে বিরোধী শিবির আইসি-র সঙ্গে মিলিত ভাবে তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি চলবে কি না, তা এখনও স্থির হয়নি বলে জানান এসএফআই-সমর্থক এক পড়ুয়া।
কর্তৃপক্ষ কী করছেন?
যত দ্রুত সম্ভব ভর্তি কমিটির বৈঠক ডাকা হবে বলে প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ন্যূনতম নম্বর থাকলে এবং প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই ভর্তি নিশ্চিত হয়ে যায় না। আসন-সংখ্যার উপরে বিষয়টি নির্ভরশীল। সেই আসন বাড়ানোর দাবিই তুলেছেন পড়ুয়ারা। এই দাবিতে সোমবার বিকেল থেকে উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার ঘরের বাইরে অবস্থান করেন ছাত্র সংসদের এক দল সদস্য। আসন বাড়ানোর ক্ষমতা তাঁর হাতে মোটেই নেই বলে মঙ্গলবার অবস্থানকারী ছাত্রদের জানিয়ে দেন অনুরাধাদেবী। তবে বিষয়টি নিয়ে ভর্তি কমিটিতে আলোচনা করা হবে বলে আশ্বাসও দেন তিনি। সেই আলোচনার পরে মঙ্গলবার বিকেলে অবস্থান ওঠে। পরে উপাচার্য বলেন, “ওদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পড়ুয়াদের দাবির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই বৈঠকে বসবে ভর্তি কমিটি। সেই বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত হবে, তা নিয়ে আলোচনা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা গভর্নিং বোর্ডে।
রাজ্য সরকার অবশ্য ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলনকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবারেই জানিয়ে দেন, এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধুর্য নষ্ট হয় বলে মনে করেন তিনি। তা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি-জট আরও জটিল হল বলেই শিক্ষা-শিবিরের আশঙ্কা।