পুরীতে খোঁজ মিলল প্রতারণা চক্রের, গ্রেফতার আরও তিন

মোবাইল বদলেও শেষরক্ষা হল না। নতুন মোবাইল থেকে এক আত্মীয়ের কাছে ফোন গিয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই সল্টলেকে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার মূল চক্রী পার্থ গুহ ও সঞ্চিতা গঙ্গোপাধ্যায়কে পুরী থেকে গ্রেফতার করল সল্টলেক পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা ও একটি গাড়ি। এ ছাড়াও, বিহারের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ২২ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে সঞ্চিতার আত্মীয় অমিত সাহাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০১:১৫
Share:

পার্থ এবং সঞ্চিতা

মোবাইল বদলেও শেষরক্ষা হল না। নতুন মোবাইল থেকে এক আত্মীয়ের কাছে ফোন গিয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই সল্টলেকে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার মূল চক্রী পার্থ গুহ ও সঞ্চিতা গঙ্গোপাধ্যায়কে পুরী থেকে গ্রেফতার করল সল্টলেক পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা ও একটি গাড়ি। এ ছাড়াও, বিহারের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ২২ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে সঞ্চিতার আত্মীয় অমিত সাহাও।

Advertisement

বুধবার সল্টলেক আদালতে ধৃতদের দশ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়। এই নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় মোট ৫ জন ধরা পড়ল। আগেই গ্রেফতার হয়েছিল সাকিল আহমেদ ও নাসিম আনোয়ার।

এ দিন সল্টলেকের গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, বিএল ব্লকে এক বেসরকারি সংস্থা সংবাদপত্রে যাদবপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানোর বিজ্ঞাপন দেয়। এনআরআই ও ম্যানেজমেন্ট কোটায় ভর্তি করানো হবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। প্রায় ২২ জন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে মোট ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা নেয় ওই সংস্থা। সেই মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার বন্দোবস্তও করা হয়। কিন্তু মেধা-তালিকায় নাম না ওঠায় ছাত্রছাত্রীরা ওই সংস্থায় খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন, তা বন্ধ। কর্মকর্তাদের মোবাইলও বন্ধ।

Advertisement

এর পরে এক অভিভাবক সল্টলেক পূর্ব থানায় অভিযোগ করেন। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, চেকে ও নগদে টাকা নেওয়া হয়েছিল। ওই মেডিক্যাল কলেজটির নামে জাল তথ্য জমা করে বিহারের গোপালগঞ্জের একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টও খোলে প্রতারকেরা। পরে পটনায় আস্থা কনস্ট্রাকশন নামের আরও একটি সংস্থা খোলে চক্রটি। কলকাতা থেকে প্রতারণার অধিকাংশ টাকাই নতুন সংস্থার অ্যাকাউন্টে সরিয়েছিল ওই চক্র।

পুলিশ প্রথমেই সাকিল ও নাসিমকে গ্রেফতার করে। জেরায় পার্থ, সঞ্চিতা ও অমিতের নাম উঠে আসে। অবশেষে মঙ্গলবার পুরীর একটি হোটেল থেকে ধরা হয় ওই তিন জনকে। সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে প্রথমে ধৃত ৫ জনই উত্তরবঙ্গে যান। সেখান থেকে নাসিম ও সাকিল কলকাতায় ফেরে। বাকিরা পুরী পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা দক্ষিণের কোনও রাজ্যে পালানোর ছক কষেছিল বলেও পুলিশ জেনেছে।

গোয়েন্দা প্রধান জানান, পার্থ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে। সঞ্চিতা বিমান সেবিকার কাজ করত। ধৃতেরা প্রত্যেকেই নানা সময়ে নানা পরিচয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলত। সঞ্চিতা নাম নিয়েছিল সুদেষ্ণা রায়। সাকিল অবিনাশ বর্মা নামে পরিচিত ছিল। পার্থর নাম ছিল অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়। নাসিমের নাম কখনও রবি কুমার, কখনও ইরশাদ আহমেদ, আবার কখনও বা তরুণ রায়।

পুলিশ জানায়, বেসরকারি ওই মেডিক্যাল কলেজটি যেহেতু যাদবপুরে, তাই ছাত্রছাত্রীদের ঠকাতে গোপালগঞ্জের যাদবপুর নামের একটি গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়। সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ফলে প্রাথমিক ভাবে ছাত্রছাত্রীরা সন্দেহ করেননি। ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষায় বসার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা জমা পড়লেই সংস্থার তরফে তার ‘কনফার্মেশন’ দেওয়া হত। ফলে ছাত্রছাত্রীদের মনে সংস্থা সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ধৃত পার্থ তথ্যপ্রযুক্তির বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে ওই মেডিক্যাল কলেজের ল্যান্ডলাইন নম্বরটিকে ব্যবহার করত।

গোয়েন্দা প্রধান জানান, পার্থই চক্রের মূল মাথা। চক্রে আরও কেউ যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এর আগেও এই চক্রটির বিরুদ্ধে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও একটি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানোর নামে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সে সব ঘটনারও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement