প্রাণরক্ষার প্রাথমিক পাঠ দিতে এ বার প্রশিক্ষণ স্কুলে-স্কুলে

বন্ধুদের সঙ্গে অনর্গল গল্প করতে করতে স্কুলে টিফিন খাচ্ছিল বছর দশেকের ছেলেটি। আচমকাই বিস্কুট আটকে যায় গলায়। দম আটকে নীল হয়ে যায় গোটা শরীর। বন্ধুরা বিষয়টি টের পায় মিনিট কয়েক পরে। তারও বেশ কিছু সময় পার করে স্কুলের আন্টিদের খবর দেয় তারা। তাঁরা এসে গোটা বিষয়টি জেনে গাড়ি ডেকে কাছের এক হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই শেষ হয়ে যায় একরত্তি একটা জীবন।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০২:০৭
Share:

বন্ধুদের সঙ্গে অনর্গল গল্প করতে করতে স্কুলে টিফিন খাচ্ছিল বছর দশেকের ছেলেটি। আচমকাই বিস্কুট আটকে যায় গলায়। দম আটকে নীল হয়ে যায় গোটা শরীর। বন্ধুরা বিষয়টি টের পায় মিনিট কয়েক পরে। তারও বেশ কিছু সময় পার করে স্কুলের আন্টিদের খবর দেয় তারা। তাঁরা এসে গোটা বিষয়টি জেনে গাড়ি ডেকে কাছের এক হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই শেষ হয়ে যায় একরত্তি একটা জীবন।

Advertisement

টিফিনের সময়ে কম্পিউটার রুমের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল ক্লাস ওয়ানের ছাত্র। শিক্ষিকারা তুলে সিক-রুমে নিয়ে যান। প্রাথমিক পরিচর্যায় কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে সেখানেই প্রাণ হারায় বছর পাঁচেকের ছোট্ট ছেলে।

গরমের সকালে স্কুলের মাঠে ‘প্রেয়ার’ চলছিল। আচমকাই পড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারায় বছর সাতেকের ছাত্রীটি। মাথায় চোটও লাগে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন সকলেই। স্থানীয় এক ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়। তিনি যখন এসে পৌঁছলেন, ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

স্কুলে এমন বিপত্তির খবর ইদানীং মাঝেমধ্যেই সামনে আসছে। আর তখনই বড় হয়ে উঠছে একটা প্রশ্ন, কোনও ভাবে কি এমন বিপদ এড়ানো যেত? কিছুটা সাবধানতা আর সচেতনতা কি বাঁচিয়ে দিতে পারত কিছু জীবন? বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষই মানছেন, এমন ঘটনা সামলানোর মতো পরিকাঠামো তাঁদের নেই। ফলে অসুস্থ শিশুটিকে নিয়ে ঠিক কী করা হবে, কোনও চিকিৎসককে ডেকে আনা হবে নাকি শিশুটিকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে পৌঁছনো হবে এমন সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই অনেকটা সময় কেটে যায়। ভয় না পেয়ে ঠান্ডা মাথায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারলে হয়তো অনেক বিপত্তিই এড়ানো যেত বলে মানছেন তাঁরা। কিন্তু সেটা কী ভাবে?

স্কুলপড়ুয়াদের আকস্মিক বিপদ এড়াতে ই এম বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতাল এ বার এমনই একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ইতিমধ্যেই শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ‘বেসিক লাইফ সাপোর্ট ইন স্কুলস’ বা সংক্ষেপে ব্লিস নামে এই প্রশিক্ষণটি নিয়েছেন। শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকা নন, সম্পূর্ণ নিখরচার এই প্রশিক্ষণটি দেওয়া হচ্ছে স্কুলের উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদেরও, যাতে প্রয়োজন পড়লে তারাও এমন দুর্ঘটনার মোকাবিলা করতে পারে।

পিয়ারলেস হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, তাঁরা তিনটি বিষয়ে জোর দেন। ‘কমন সেন্স’, ‘ফার্স্ট এড’ আর ‘কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন’। তাঁর কথায়, “কোনও পড়ুয়া যদি আচমকা খেলতে খেলতে পড়ে গিয়ে চোট পায় কিংবা খাবার গলায় আটকে যায় অথবা কোনও ভাবে অসুস্থ হয়ে কারও হৃৎপিণ্ড স্তব্ধ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে কী করা উচিত, সেটাই হাতেকলমে শেখাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রেই সদিচ্ছা থাকে, কিন্তু আনাড়ি হাতে সেবা করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়। আমরা নিরাপদ পদ্ধতিটা শেখাচ্ছি।”

হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার-এর চিকিৎসক সংযুক্তা দে জানিয়েছেন, কলকাতার দু’টি নামী স্কুলে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পরেই এই প্রশিক্ষণের বিষয়টি তাঁদের মাথায় আসে। ওই সব ক্ষেত্রে শিশুদু’টির আগে থেকে কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল কি না, সেটা স্বতন্ত্র প্রশ্ন। কিন্তু এমন কিছু ঘটলে স্কুলের কর্মীরা প্রাথমিক ভাবে কী করতে পারেন, সেই প্রচারটা জরুরি বলে মনে হয়েছে তাঁর। সংযুক্তাদেবী বলেন, “বিদেশে এমন প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। তা হলে এখানেই বা হবে না কেন? অভিভাবকরা কি নিশ্চিন্ত হয়ে তাঁদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারবেন না? আমরা গোড়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে এই সচেতনতাটা গড়ে তুলতে চাইছি। তার পরে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।”

এই প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছে শহরের বিভিন্ন স্কুল। লা মার্টিনিয়ার্স-এর তরফে সুপ্রিয় ধর যেমন বলেন, “খুব জরুরি বিষয় এটা।

প্রাথমিক চিকিৎসা কী করা উচিত, অনেক সময়েই সেটা খেয়াল থাকে না। ফলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে অবস্থার অবনতি হওয়ার ভয় থাকে। এমন প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে সেই অনিশ্চয়তা অনেকটাই কাটানো সম্ভব।”

সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তরফে কৃষ্ণ দামানি বলেন, “শিশুদের নিয়ে যেখানে অনেকটা সময় কাটে, সেখানে এমন প্রশিক্ষণ খুব জরুরি। সেটা আমরা সকলেই উপলব্ধি করছি। আমরা আগেও কর্মীদের জন্য এমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলাম। ভবিষ্যতেও করব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement