শাসক দল বা রাজ্য সরকারের জন্য দিনটা ভাল ছিল না মোটেও। সাংসদ সৃঞ্জয় বসু, অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূল-ত্যাগ ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই-তদন্ত সংক্রান্ত মামলার ধাক্কার খবর বিকেলের মধ্যে চাউর হয়ে গিয়েছে।
এমন দিনেই পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, যুবসমাজকে উত্সর্গ করে কলকাতাকে ‘ওয়াইফাই’ নগরী করার প্রকল্প শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর টুইটে এই আবির্ভাব-বার্তার পরেই মঞ্চে গান শুরু হয়েছিল বিকেলের পার্ক স্ট্রিটে। ‘একরাশ বিপদের মাঝখানে শুয়ে আছি, কানাঘুষো শোনা যায় বসন্ত এসে গেছে...।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছ’টার পরে ঘোষণা মাফিক সেই বসন্তের হদিস পেতে কিন্তু অনেককেই নাজেহাল হতে হল। বহুজাতিক বার্গার-বিপণির সামনে দাঁড়িয়ে স্মার্টফোনে বেশ খানিক ক্ষণ ধস্তাধস্তির পরে গলদঘর্ম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক ঝাঁক পড়ুয়া। জনৈক তরুণী ফোড়ন কাটলেন, ‘এ তো দেখি, ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলাম আর পেলাম না!’
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, মাস দু’য়েকে গোটা কলকাতাতেই মিলবে নিখরচার ওয়াইফাই পরিষেবা। মাটির তলায় অপটিক্যাল ফাইবার পাতার কাজ ৯০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। তবে আপাতত শুধু পার্ক স্ট্রিটেই এই নিখরচার ওয়াইফাই পাওয়ার কথা। সেখানে দাঁড়িয়ে ওয়াইফাই-এর তালিকায় জিও বা জিওনেটের সংযোগটি অবশ্য বিকেল থেকেই স্মার্টফোনে দেখা যাচ্ছিল। এই পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা রিলায়্যান্স জিও-র কর্তারা বোঝাচ্ছিলেন, নেট-সুরক্ষা সংক্রান্ত কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে নিজের মোবাইল নম্বর টাইপ করার পরে মোবাইলে একটি পাসওয়ার্ড পাঠানো হবে। সেই পাসওয়ার্ড ধরেই ঢুকতে হবে নেটে। তবে বারংবার ক্লিক করেও নেট সংযোগ মেলা এ দিন সহজ হয়নি অনেকের জন্যই।
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এই বিশেষ দিনেই নিজের টুইটার-অ্যাকাউন্ট খোলার কথা ঘোষণা করলেন। তবে এই দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে ঘোষণা করলেও তাঁর নিজের আই ফোন থেকে ফ্রি ওয়াইফাই যোগে ঢুকতে পারেননি ইন্টারনেটে।
শুরুর এ সব ধাক্কায় বিচলিত না হয়ে কলকাতাবাসীকে অবশ্য ধৈর্য রাখতে বলেছেন রিলায়্যান্স জিওর কর্তারা। সংস্থার পূর্ব ভারতের বিজনেস হেড তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা প্রত্যয়ী, দ্রুত গতির ফোর-জি ওয়াইফাই-এর সৌজন্যে কলকাতা প্রযুক্তিতে গোটা দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। কিন্তু কয়েক দিন আগে এই পরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, কার্যত তা নস্যাত্ করে দিয়েছেন রিলায়্যান্স-কর্তারা। কলকাতায় পুরভোটের প্রাক্কালে মুখ্যমন্ত্রী ও পরে শাসক দলের তরফে শুরুর এক বছর গোটা শহরে নিখরচায় ওয়াইফাই দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। রিলায়্যান্স-কর্তারা এ দিন অবশ্য বলেছেন, এই নিখরচার পরিষেবা কিছু দিন চলবে। তার পরে এর খরচ ধার্য হবে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, শুধু কলকাতা নয়, ক্রমশ সল্টলেক, হাওড়া, রাজারহাট, বারাসতেও পাওয়া যাবে ওয়াইফাই।
বর্ধমানের জেলাশাসকও এই বিষয়টি নিয়ে উত্সাহিত বলে জানালেন মমতা। মঞ্চে উপস্থিত মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে বললেন, বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এই পরিষেবার বিস্তার নিয়ে কথা বলতে।
তবে নিখরচার ওয়াইফাই চালু হলেও এক সঙ্গে অনেক লোক এই পরিষেবার জন্য ঝাঁপালে সংযোগ পেতে অসুবিধে হতে পারে। পার্ক স্ট্রিটের নামী কনফেকশনারির শেফ বিকাশ কুমার বলছিলেন, “বিদেশেও দেখেছি, বিভিন্ন হটস্পটে ওয়াইফাই-এর সুবিধে থাকলেও নেটে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয়।”
তবে কয়েক জনের কপালে নেটভাগ্যের শিকে ছিঁড়তেও দেখা গিয়েছে। বহুজাতিক সংস্থার কর্মী অনির্বাণ সাহা কফি খেতে খেতে কষ্টেসৃষ্টে ল্যাপটপে নেটে ঢুকে নিজের ব্লগের পাতা খুললেন। স্মার্টফোন থেকে ফ্রি ওয়াইফাই-এ নেটে ঢুকে উল্লসিত আর এক তরুণী পূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। “কাঁটায় কাঁটায় ছ’টায় ক্লিক করব বলে তক্কে তক্কে ছিলাম। যা ভাগ্য আমার, আজ মনে হচ্ছে লটারির টিকিট কাটলেও প্রাইজ পেতাম।”