চকোলেটের বিজ্ঞাপনে বিগ বি পাপ্পুর পাশ করার আনন্দে লোকজনকে মিষ্টিমুখ করাতেন। মানিকতলার পাপ্পু অবশ্য প্রথম বার ফেল করাতেই খুশির ঢেউ লালবাজারে!
বিজ্ঞাপনের পাপ্পু পাশ করেছিল স্কুলের পরীক্ষায়। আর মানিকতলার পাপ্পু ফেল করেছেন জাল নোটের কারবারে। পাপ্পু ওরফে চন্দ্রশেখর জায়সবাল নামে ওই লোহা ব্যবসায়ীকে শনিবার গ্রেফতার করে লালবাজারের বিশেষ টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তাঁর বাড়ি ও গুদাম থেকে চারশো বস্তা জাল নোট এবং জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে গোয়েন্দারা মোটামুটি নিশ্চিত, জাল নোটের কারবারে এটাই ছিল পাপ্পুর প্রথম বরাত। কিন্তু সেই বরাত সরবরাহে সফল হতে পারলেন না তিনি! পুলিশের গোয়েন্দাকর্তারা জানিয়েছেন, চন্দ্রশেখরের প্রথম বরাত আটকে যাওয়ায় তাঁরা নিজেদের সাফল্য নিয়ে খুশি তো বটেই, সেই সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অন্য একটি কারণেও। ওই জাল ভারতীয় নোটের আর্থিক মূল্য ১০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা বাজারে ছড়িয়ে পড়লে অর্থনীতির উপরেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।
চন্দ্রশেখরকে জাল টাকার বরাত কে বা কারা দিল, সেই নিয়ে রহস্য এখনও কাটেনি। এসটিএফ জানিয়েছে, ওই চারশোটি বস্তার মধ্যে ইউরো, পাউন্ড, লিরা, দিনারের মতো প্রচুর বিদেশি নোটও রয়েছে। সব মিলিয়ে সেগুলির আর্থিক মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ওই বরাত কোথা থেকে এল, সেটা জানা গোয়েন্দাদের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “এত দেশের এত রকমের জাল নোটের প্রয়োজন কোনও বড় জঙ্গি সংগঠনেরই হতে পারে।”
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এত বিদেশি নোট মেলার খবর একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থাকেও জানানো হয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গেও। চন্দ্রশেখরের ঘাঁটি থেকে উদ্ধার হওয়া জাল টাকায় ‘সিকিওরিটি থ্রেড’ রয়েছে কি না, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। বুধবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দুই কর্তা লালবাজারে ডিসি (এসটিএফ) অমিত জাভালগির সঙ্গে বৈঠক করেন। লালবাজার সূত্রের দাবি, ২০১২ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে একটি টাকা ছাপানোর ছাঁচ চুরি যায়।
লালবাজার সূত্রের খবর, এই জাল টাকা রহস্যে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এবং সিবিআই-ও খোঁজখবর করছে। বুধবার রাতে এনআইএ এবং সিবিআই দল এসেও চন্দ্রশেখরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই ঘটনায় চন্দ্রশেখরের আরও তিন সঙ্গীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বুধবার তাঁদের দু’জনকে লালবাজারে নিয়ে গিয়ে জেরাও করেন গোয়েন্দারা। তবে এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নতুন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলেই জানিয়েছে এসটিএফ।