আমজাদ আলি
ক্যারম খেলা নিয়ে বচসার জেরে প্রাণ গেল কিশোরের। বুধবার রাত ন’টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে মধ্য কলকাতার সারেঙ্গ লেনে।
পুলিশ জনিয়েছে, মৃতের নাম আমজাদ আলি ওরফে ইফতিয়াক (১৬)। সে স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের প্রত্যেকের বয়স চোদ্দ থেকে পনেরো মধ্যে। প্রত্যেককে জুভেনাইল আদালতে পেশ করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে মূল অভিযুক্তও রয়েছে।
দিন তিনেক আগে দুপুরে পাড়াতেই চার বন্ধু মিলে ক্যারম খেলছিল বলে জানান বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, তখন এক বন্ধুর বাবা এসে খেলার মাঝেই ক্যারমের ঘুঁটি এলোমেলো করে দেন। নিজের সন্তান-সহ অন্যদেরও বকাবকি করেন তিনি। এই ঘটনার পরে আমজাদ ওই বন্ধুর বাবার আচরণের প্রতিবাদ করে। বন্ধুর বাবাকে সে গালিগালাজও করে বলে অভিযোগ।
বাসিন্দা মহম্মদ রফি বলেন, “দিন কয়েক ধরেই আমজাদকে হুমকি দিচ্ছিল তার ওই বন্ধু। মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে এসে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেয় সে।” এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানায়, বাবার অপমানের বদলা নেওয়ার জন্য দিন কয়েক ধরে রীতিমতো ফঁুসছিল অভিযুক্ত ওই কিশোর।
কী হয়েছিল বুধবার রাতে?
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও সন্ধ্যা থেকে পাড়াতেই ছিল আমজাদ। রাত ন’টা নাগাদ আচামকাই পাড়ার মোড়ে এক দোকানের সামনে আমজাদকে পেয়ে ঘাড় পেঁচিয়ে জোরে ঘুষি মারে ওই কিশোর। ঘুষির আঘাতে রাস্তায় পড়ে যায় আমজাদ। অন্যতম প্রতক্ষ্যদর্শী আব্দুল খালেক বলেন, “ছেলেটাকে ধরে আমি দুটো থাপ্পড়ও মারি। কিন্তু ও ছিটকে পালিয়ে যায়। আমাজাদকে তুলে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকেরা বলেন, মারা গিয়েছে।”
পারিবারিক সূত্রে খবর, তিন ভাইয়ের মধ্যে আমজাদই বড়। ছোট বেলাতেই তাদের মা মারা যান। বাবা আরশাদ আলি পেশায় দর্জি। তিনি একটি পোশাক কারখানার কর্মী। বাড়ির সামনে তাঁর একটি ছোট দোকানও রয়েছে। এ দিন আমজাদের সত্ মা সাম্মাজ বিবি বলেন, “বুধবার সন্ধ্যায় ছেলেটা ঘর থেকে বেড়িয়ে পাড়ায় ঘুরছিল। রাতে ওকে ধরে ওরই এক বন্ধু মেরে দেয়।”
ঠিক কী কারণে আমজাদের মৃত্যু হয়েছে, তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার এনআরএসের মর্গে ময়না-তদন্তের পরে তার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, আমজাদের সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরেই তার বন্ধুদের ঝামেলা চলছিল। এর আগেও বেশ কয়েক বার বন্ধুদের সঙ্গে বচসায় জড়ায় সে। তবে দিন কয়েক আগে ক্যারম খেলা নিয়েই এ বারের ঘটনার সূত্রপাত বলে জানান তাঁরা। তবে এই ঘটনায় মূল অভিযুক্তের বাবার সরাসরি কোনও যোগ নেই বলে তদন্তকারীরা দাবি করেছেন।