এজেন্ট পরিচয়ে মাদক পাচার, গ্রেফতার চাঁই

সকলেই তাঁকে চেনেন ট্র্যাভেল এজেন্ট হিসেবে। প্রতি মাসে পাঁচ-ছ’বার কলকাতা থেকে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যেতেন তিনি। কিন্তু কখনও দুই থেকে তিন জনের বেশি পর্যটককে সঙ্গে নিতেন না। শুক্রবার নিউ মার্কেটের একটি হোটেল থেকে ওই ‘ট্র্যাভেল এজেন্ট’কে গ্রেফতার করার পরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পারলেন, ওই ব্যক্তি আসলে ট্র্যাভেল ব্যবসার নামে উত্তর ভারত থেকে কলকাতায় মাদক এনে বিক্রি করতেন।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৬
Share:

সকলেই তাঁকে চেনেন ট্র্যাভেল এজেন্ট হিসেবে। প্রতি মাসে পাঁচ-ছ’বার কলকাতা থেকে উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যেতেন তিনি। কিন্তু কখনও দুই থেকে তিন জনের বেশি পর্যটককে সঙ্গে নিতেন না। শুক্রবার নিউ মার্কেটের একটি হোটেল থেকে ওই ‘ট্র্যাভেল এজেন্ট’কে গ্রেফতার করার পরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পারলেন, ওই ব্যক্তি আসলে ট্র্যাভেল ব্যবসার নামে উত্তর ভারত থেকে কলকাতায় মাদক এনে বিক্রি করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম শাহিদ ওরফে চাচা (৬০)। বাড়ি তালতলা থানা এলাকায়। পুলিশের দাবি, তিনি কলকাতায় মাদক পাচার চক্রের অন্যতম মূল চাঁই। তাঁর কোনও ট্র্যাভেল ব্যবসাই নেই। ধৃত ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’কেজিরও বেশি চরস।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত চাচা সকলের কাছে মাদক বিক্রি করতেন না। তাঁর নিজস্ব একটি চক্র রয়েছে। যাঁদের কাছেই শুধু তিনি মাদক বিক্রি করতেন নিউ মার্কেটের একটি হোটেল থেকে। ওই হোটেলে যাঁরা মাদক কিনতে আসতেন, তাঁরা চাচার পূর্ব পরিচিত এবং বিশ্বাসভাজন। পুলিশের দাবি, আস্থাভাজনদের নিয়ে এ ভাবেই কলকাতাকে মাদক পাচারের আস্তানা হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন চাচা। মূলত তাঁর মাধ্যমেই উত্তর ভারত থেকে শহরে চরস ঢুকত। চাচাকে গ্রেফতারের ফলে ওই মাদক পাচার চক্রটিকে অকেজো করা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

কী ভাবে ধরা পড়লেন চাচা? তদন্তকারীরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁদের কাছে খবর ছিল, এক ব্যক্তি উত্তর ভারত থেকে কলকাতায় মাদক পাচার করছে। মাসখানেক আগে শেখ দিলওয়ার নামে এক মাদক পাচারকারীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই ব্যক্তির বাড়ি তালতলা থানা এলাকায় হলেও নিউ মার্কেটের একটি হোটেল তার আস্তানা। পুলিশ জানায়, আস্থাভাজন ব্যক্তি ছাড়া কারও সঙ্গে চাচা দেখা করছেন না এটা জানার পরে তাঁর এক ক্রেতাকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন গোয়েন্দারা। ওই সোর্স মারফত এক পুলিশ অফিসার ক্রেতা সেজে খিদিরপুরে একটি হোটেলে দেখা করেন চাচার সঙ্গে। প্রথমে ওই ক্রেতাকে বিশ্বাস না করলেও পরে চাচা তাঁকে নিউ মার্কেটের ওই হোটেলে দেখা করতে বলেন। কথা মতো শুক্রবার সেই হোটেলে পৌঁছে যান ছদ্মবেশী ওই ক্রেতা।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, ওই ছদ্মবেশী গোয়েন্দাকে প্রায় এক ঘণ্টা হোটেলে বসিয়ে রাখেন চাচা। পরে অবশ্য তিনি নিজের কাছে থাকা মাদক তাঁকে দেখান। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “আস্থাভাজন মনে হওয়ার পরেই চাচা নিজের পকেট থেকে ওজন মাপার একটি ফোল্ডিং যন্ত্র বার করে মাদক মাপেন। তার পরেই তাঁকে আমরা গ্রেফতার করি।”

ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্ত আদতে কলকাতার বাসিন্দা হলে বেশির ভাগ সময় ট্র্যাভেল ব্যবসার ছুতোয় বাইরে থাকতেন। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে কারা নিয়মিত মাদক কিনতেন, সেই খদ্দেরদের একটি তালিকাও পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

তদন্তকারীদের দাবি, প্রতি মাসেই উত্তর ভারত যেতেন চাচা। সঙ্গে এলাকার দু’-তিন জন যুবককে নিয়ে যেতেন। কিন্তু উত্তর ভারত বিশেষত মানালি থেকে ওই মাদক সংগ্রহ করার পরে কলকাতায় ফেরার সময়ে চাচা নিজের কাছে তা রাখতেন না। পরিবর্তে ওই মাদক থাকত চাচার সঙ্গী যুবকদের কাছে। ফলে, দু’বার পুলিশ চাচাকে মাদক পাচারের দায়ে আটক করলেও তাঁর কাছ থেকে কিছু না মেলায় ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় বলে লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে।

তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ২০১৪ সালে মোট চল্লিশ বার চাচা কলকাতা থেকে উত্তর ভারতে গিয়েছিলেন মাদক আনতে। এখানে অভিযুক্তের হয়ে বেশ কয়েক জন লিঙ্কম্যানও কাজ করত বলে পুলিশ জানিয়েছে।

লালবাজারের সূত্রে জানা গিয়েছে, চাচাকে গ্রেফতার করা সহজ ছিল না। কারণ তিনি নিজে সব সময়ে অসুস্থ বলে দাবি করতেন। এমনকী পকেটে জাল প্রেসক্রিপশনও রাখতেন। সেই সঙ্গে কোমরে একটি মোটা বেল্ট ব্যবহার করতেন (কোমরে ব্যথা হলে যে ধরনের বেল্ট ব্যবহার করা হয়)। পুলিশের দাবি, আসলে ওই বেল্টের আড়ালেই মাদক লুকিয়ে রেখে দিতেন চাচা। পরে প্রয়োজন মতো তা বার করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করতেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement