মার্চে তো এলই না, পেরিয়ে গেল এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহও। কলকাতায় তবু দেখা মিলল না কালবৈশাখীর!
কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে চৈত্র-বৈশাখের বিকেলে আকাশ কালো করে ঝড়-বৃষ্টি নামাটাই চেনা ছবি। আম-বাঙালির দহন-জ্বালা জুড়োনোর অব্যর্থ দাওয়াইও লুকিয়ে থাকে তার মধ্যে। কিন্তু এ বছর সে স্বস্তি এখনও মিলল না। মার্চের শেষ থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ঝলসে দেওয়া গরম। কিন্তু কালবৈশাখীর দেখা মেলেনি।
গত ২৫ মার্চ বিকেলে কলকাতায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেই ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার না পেরোনোয় তাকে খাতায়-কলমে ‘কালবৈশাখী’ বলতে পারেননি আবহবিজ্ঞানীরা। যদিও আলিপুর আবহাওয়া অফিসেরই একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, গতিবেগ বেশি না হলেও ওই ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা কালবৈশাখীর মতোই হয়েছিল।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, গ্রীষ্মে বাংলার পশ্চিমাঞ্চল এবং সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের হাওয়া গরম হয়ে উপরে উঠে যায়। সাগর থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা জলীয় বাষ্প সেই শূন্যস্থানে ঢুকে পড়ে। ঠান্ডা ও গরম হাওয়ার মিলনে তৈরি হয় উল্লম্ব, বজ্রগর্ভ মেঘ। তা বায়ুমণ্ডলের যত উপরে ওঠে, ততই ঘনীভূত হতে থাকে। বাড়তে থাকে উচ্চতাও। সেই মেঘই বয়ে আনে ঝড়-বৃষ্টি। কালবৈশাখী ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বা তার বেশি হয়।
এ বার মার্চে তেমন পরিস্থিতি তৈরিও হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় সেই মেঘে জমেছিল শিলা। ২২ মার্চ রাতে সেই মেঘ থেকেই প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছিল নদিয়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনায়। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, ২২ মার্চের পরেও বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায়, যার মধ্যে কয়েকটি কালবৈশাখী। এপ্রিলেও কিছু কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কালবৈশাখী হয়েছে। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, সাধারণত মার্চে দক্ষিণবঙ্গে গড়ে দু’টি কালবৈশাখী হয়। এপ্রিলে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় তিন-চারটি। “সেই হিসেবে দক্ষিণবঙ্গে স্বাভাবিক কালবৈশাখী হয়েছে। কিন্তু তার কোনওটাই কলকাতায় হাজির হয়নি”, মন্তব্য মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানীর।
কিন্তু কেন কলকাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকছে কালবৈশাখী?
আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কালবৈশাখীর মেঘ কোন দিকে যাবে, তা নির্ভর করে হাওয়ার অভিমুখ এবং জলীয় বাষ্পের উপরে। কলকাতায় এর আগে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, গত শুক্রবারই বীরভূমে একটি বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল। সেটি নদিয়া-মুর্শিদাবাদের দিকে আসতে পারে বলে মনে করেছিলেন আবহবিজ্ঞানীরা। কিন্তু বায়ুমণ্ডলের পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় মেঘটি চলে যায় বাংলাদেশের দিকে। প্রবল ঝড়-শিলাবৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়ে যায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল।
কালবৈশাখীর এই মুখ ফিরিয়ে থাকার কারণে বেড়েই চলেছে গরম। হাওয়া অফিসের খবর, গত কয়েক দিন ধরেই দিনের তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। হাওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণও বেড়েছে। কাজেই কবে ঘন মেঘে আকাশ কালো করে ঝড় উঠবে, সেই অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন শহরবাসী।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, তাপমাত্রা ও বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়ছে। বাংলাদেশে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। ইঙ্গিত মিলছে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হওয়ারও। “এ সব মিলিয়ে দিন দুয়েকের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। কোনও কোনও এলাকায় কালবৈশাখীও হতে পারে”, মন্তব্য গোকুলবাবুর। কিন্তু সেই কালবৈশাখী কলকাতায় হবে কি না, তা অবশ্য এত আগে বলা সম্ভব নয়।
কাজেই এখনও দেখা যাচ্ছে না কোনও আশার আলো। কালবৈশাখী না হয় না-ই হল, একটু ঝড়-বৃষ্টির জন্যই হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে সারা কলকাতা।
অলঙ্করণ: প্রবাল ধর