ধৃত অভিষেক।—নিজস্ব চিত্র
‘নমস্কার, আমি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছি।’ টেলিফোনে সরকারি উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে এই ভাবে কথা শুরু করে নিজের পরিচয় দেওয়ার মাঝে বারংবারই সে মনে করিয়ে দিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্কের কথা। অভিযোগ, পরিচয়-পর্বের পরে সরকারি দফতরের অফিসারদের কাছে নির্দেশ আসত, বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে কোনও কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য। কারও জমি-বাড়ির মিউটেশন সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সে বিডিও অফিসে আধিকারিকদের ফোন করে নির্দেশ দিত বলেও অভিযোগ। আরও অভিযোগ, সময়ে কাজ শেষ না হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হত। সম্প্রতি রাজারহাটে জমির মিউটেশন করাকে কেন্দ্র করে সে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছিল বলেও অভিযোগ।
এত কীর্তি করেও অবশ্য শেষরক্ষা হল না। আসল অভিষেকের অভিযোগের ভিত্তিতে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে ধরা পড়ে গেল নকল অভিষেক। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, ধৃত অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে পাপন লেকটাউন থানা এলাকার বাঙুরের বাসিন্দা। নাম ভাঁড়িয়ে সে এই প্রতারণার কারবার চালিয়ে যাচ্ছিল।
বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানান, সোমবার বিকেলে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, তাঁর নাম ভাড়িয়ে রাজারহাটের একটি জমির মিউটেশন নিয়ে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তিনি। বিশদে খোঁজ নিয়ে অভিষেক আরও জানতে পারেন, ওই ব্যক্তি লেকটাউন থানা এলাকায় থাকে। তার পরেই তিনি বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিমের কাছে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পেয়ে রাতেই বাগুইআটির একটি বিশেষ জায়গায় নকল অভিষেককে ডেকে পাঠায় পুলিশ। কঙ্করবাবু বলেন, “অভিষেক আমাদের জালে ধরা পড়তেই তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নাম ভাঁড়িয়ে প্রতারণার ঘটনা স্বীকার করে নেয় সে।”
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে কেউ যে ফোন করছেন, তা এলাকার বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসুরও কানে এসেছিল। কিন্তু তখন তিনি এর মধ্যে ঢুকতে চাননি। পুলিশ নকল অভিষেককে ধরার পরে মঙ্গলবার পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। জানলেও বলব না। যা বলার পুলিশ বলবে।”
পুলিশের দাবি, অভিষেক ওরফে পাপন তাদের জানিয়েছে, সে পেশায় আইনজীবী। এ দিন তাকে বারাসত আদালতে তোলা হলে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। কঙ্করবাবু বলেন, “ধৃতকে আরও জেরা করার জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখতে চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। কত জনকে ওই যুবক ফোন করেছে এবং প্রভাব বিস্তার করে কী কী সুবিধা আদায় করেছে, আর্থিক সুবিধাই বা কতটা পেয়েছে, সব কিছু তদন্ত করে দেখা হবে।”
কী বলছেন আসল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? তিনি জানিয়েছেন, তাঁর নাম ভাঁড়িয়ে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় কেউ যে প্রতারণা করছে, সে খবর কানে আসার পরে তিনি আর দেরি করেননি। বিধাননগর কমিশনারেটের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।