প্রতীকী ছবি
গত রবিবারই খড়্গপুরের নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। পরিবার চাইলেও সেখানে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না তাঁর। তবু বুধবার সকালে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের লোক তাঁকে নিতে এসে দেখেন, বাড়ির সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিবেক সাংভি নামে বছর উনচল্লিশের ওই যুবকের দেহ। ঘটনাটি ঘটেছে ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া রোড (দক্ষিণ)-এ। পরিবারের দাবি, নেশামুক্তি কেন্দ্রে যাবেন না বলেই এ দিন ভোরে চারতলা বাড়ির ছাদে উঠে ঝাঁপ দেন বিবেক। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে ভবানীপুর থানা।
পুলিশ সূত্রের খবর, আদতে গুজরাতের বাসিন্দা হলেও বিবেকের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে কলকাতাবাসী। ভবানীপুরের বাড়িতে বিবেক থাকতেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে। বড়বাজারে তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা। বহু দিন থেকেই বিবেক মাদকাসক্ত ছিলেন। সে কারণে তাঁর স্ত্রী বছরখানেক আগে তাঁকে ছেড়ে চলে যান বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে বিবেকের পরিবার। কোনও ভাবেই মাদক ছাড়াতে না-পেরে কয়েক মাস আগে খড়্গপুরের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে ছেলেকে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন বিবেকের বাবা ধীরেন সাংভি।
গত রবিবার সেখান থেকে বাড়ি ফেরেন বিবেক। তাঁর এক আত্মীয় সুনীল মেহতা বলেন, ‘‘নেশামুক্তি কেন্দ্র লিখে দিয়েছিল, বিবেক সুস্থ। কিন্তু বাড়ি ফেরার পরে আবারও মদ্যপান করতে শুরু করে। বাবা-মা বারণ করলে তাঁদের হেনস্থা করত। এর পরেই আমরা ওকে ফের নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই।’
ওই আত্মীয় জানান, এ দিন ভোরে নেশামুক্তি কেন্দ্রের লোকজন বিবেককে নিতে আসেন। দরজায় নেশামুক্তি কেন্দ্রের গাড়ি দেখে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন বিবেক। তার পরে ওই কেন্দ্রের লোক বাড়িতে ঢুকলে কোনও ভাবে ছাদে উঠে যান। পরিবারের লোক এবং নেশামুক্তি কেন্দ্রের লোক ছাদে উঠছেন দেখে নীচে ঝাঁপ দেন ওই যুবক।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যে জায়গায় বিবেকের মৃতদেহটি পড়ে ছিল সেখানে চাপ চাপ রক্ত। পাশেই একটি নির্মীয়মাণ বহুতল। বিবেকের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে ছাদে যাওয়ার জন্য রয়েছে একটি কাঠের সিঁড়ি। পরিবারের এক জন জানান, ছাদ থেকে প্রথমে দোতলার একটি জানলার অ্যাসবেস্টসের ছাউনির উপরে পড়ে বিবেকের দেহ। সেখান থেকে নীচে।
ছেলের শোকে কাঁদতে থাকা ধীরেনবাবু এ দিন বলেন, ‘‘৭৫ বছর বয়সে এসে এ জিনিস দেখতে হবে ভাবিনি। বুঝতেই পারিনি, নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠাতে চাইলে ছেলে এমন করে ফেলবে।’’ সেই সঙ্গে বৃদ্ধের আর্তি, ‘‘ছেলেকে নিয়ে আসুন, ওকে কোথাও পাঠাব না।’’