যুবককে পিষে দেয় এই লরিটি। স্থানীয় বাসিন্দারা ভাঙচুর করেন সেটি। সোমবার, শোভাবাজারে। নিজস্ব চিত্র
দেওঘর থেকে ফিরে পিসির বাড়িতে রাখা মোটরবাইক আনতে গিয়েছিলেন সিটি কলেজের বাণিজ্য শাখার প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্মরজিৎ সাহা (২০)। জোড়াবাগান থানা এলাকার শোভাবাজার স্ট্রিট দিয়ে মোটরবাইক নিয়ে রবিবার রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তখনই উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে বাইকটির মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তোলেন, রাস্তার পাশে বেআইনি ভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার জন্যই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে এই অভিযোগ নিয়ে স্থানীয়েরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। শুরু হয় গোলমাল। এমনকী, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও বোতল ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশের অভিযোগ, এই ঘটনায় আহত হয়েছেন দু’জন পুলিশকর্মী। ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গঙ্গার দিক থেকে মোটরবাইকটি চালিয়ে আসছিলেন ওই যুবক। সেই সময়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাঁর। বাইকটি ছিটকে পড়লে একটি ট্রাকের তলায় ঢুকে যান ওই যুবক। মোটরবাইকের গতি বেশি থাকায় ট্রাকের নীচে ঢুকেও ছিটকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পুলিশের অভিযোগ, হেলমেট না থাকার কারণে মাথায় গুরুতর আঘাত লেগে মৃত্যু হয়েছে যুবকের। যদিও পরিবারের দাবি, স্মরজিতের মাথায় হেলমেট ছিল।
তবে এই ঘটনার পরে অভিযোগের আঙুল উঠেছে ওই এলাকায় বেআইনি পার্কিং ঘিরে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দু’পাশে গাড়ি পার্ক করা থাকায় রাস্তার পরিসর সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে চালকেরা সমস্যায় পড়েন উল্টো দিক থেকে কোনও গাড়ি ধএয়ে এলে। আহিরীটোলা ও শোভাবাজার লঞ্চ ঘাটের অটোর রুট রয়েছে ওই রাস্তাতেই। সেখানে বড় ট্রাক ঢুকলে প্রতিদিনই সমস্যা হয়। এমনকী, দু’বছর আগে এ ভাবেই মোটরবাইকের সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কায় একই জায়গায় মারা গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। কিন্তু তার পরেও পুলিশের হুঁশ ফেরেনি বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়েরা বেআইনি পার্কিং নিয়ে অভিযোগ তুললেও পুলিশ জানাচ্ছে, রাস্তার এক পাশে কলকাতা পুরসভার বৈধ পার্কিং রয়েছে। রাস্তার অন্য পাশেও আগে পার্ক করা থাকত গাড়ি। কিন্তু বর্তমানে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
স্মরজিতের বাবা গৌতমবাবু সোমবার জানান, শোভাবাজার স্ট্রিটের পাশে শেখ পাড়ায় তাঁর বোনের বাড়ি। সেখানে মোটরবাইকটি রাখা ছিল। রবিবার রাতে সেখান থেকে মোটরবাইক নিয়ে কুমোরটুলিতে বাড়ি ফেরার সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। ছেলে আমাকে বলত আমি পড়াশোনা করে চাকরি পেয়ে তোমাদের পাশে দাঁড়াব। বোনের লেখাপড়ার ভার নেব। কিন্তু ভাবতে পারিনি এ রকম ঘটনা আমাদের সঙ্গে ঘটতে পারে।’’ পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ স্মরজিতকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি করেছিল। না হলে বাঁচানো যেত তাঁকে। পুলিশের অবশ্য দাবি, দ্রুতই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই যুবককে।