প্রতীকী ছবি।
বান্ধবীর বাড়ির ছাদ থেকে নয়, ফ্ল্যাটের শৌচাগারের ফোকর থেকে পড়েই মৃত্যু হয়েছিল মধ্য কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটের বাসিন্দা হায়দর আলি খানের। বান্ধবীর স্বামীর হাত থেকে বাঁচতে চারতলার ওই শৌচাগারের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। পরে ওই ফোকর দিয়ে বাইরে পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে যান হায়দর। চারতলার উপর থেকে পড়ে গিয়েই তাঁর মৃত্যু হয় বলে অনুমান পুলিশের।
গত সোমবার একবালপুরের নবাব আলি লেনের বাদশা হাইস্কুলের পাঁচিলের পাশ থেকে বছর পঁচিশের হায়দরের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। যার অন্য পাশেই রয়েছে হায়দরের ফেসবুক বান্ধবী সাজদা খাতুনদের চারতলার ফ্ল্যাট। হায়দরের পরিবারের দায়ের করা খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে সাজদা খাতুন ও সাজদার স্বামী শেখ শাকিলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তাঁরা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। লালবাজারের একাংশ জানিয়েছে, আদালতে বিচারকের সামনে ধৃত দু’জনের গোপন জবানবন্দি গ্রহণের আর্জি জানানো হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, হায়দরের মৃত্যুর প্রায় ১৮ ঘণ্টা পরে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ধৃত দম্পতিকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ১ অগস্ট রাতে শাকিলের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাজদার ফ্ল্যাটে যান হায়দর। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ শাকিল বাড়ি ফিরে এলে হায়দর শৌচাগারের ভিতরে আশ্রয় নেন। কিন্তু তা জেনে যান শাকিল। তদন্তকারীদের দাবি, প্রথমে সাজদা ও শাকিলের মধ্যে তীব্র বচসা ও হাতাহাতি শুরু হয়। এর পরে শৌচাগারের মধ্যেই শাকিলের সঙ্গে হায়দারের ধাক্কাধাক্কি হয়। ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ফের সাজদা এবং শাকিলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হওয়ায় তাঁরা ফ্ল্যাটের অন্য দিকে চলে যান। তদন্তকারীদের অনুমান, এর পরেই শৌচাগারের ফোকর দিয়ে বাইরে পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে যান হায়দর।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ফোকর প্রথমে মাথা গলিয়েছিলেন হায়দর তাই মাটিতে পড়ার সময় মাথাই প্রথমে মাটি স্পর্শ করায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর পিছনে সেই কারণের কথাই বলা হয়েছে। ঘটনাস্থল ঘুরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদেরও তাই অনুমান বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, খুনের মামলা দায়ের হলেও তা আদতে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর মামলা।
ধৃত দম্পতি পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ ছাদে এবং অন্য জায়গায় খোঁজ করেন। কিন্তু হায়দরের সন্ধান না মেলায় ভেবেছিলেন তিনি বাড়ি চলে গিয়েছেন। তাই তাঁরা কাউকে কিছু জানাননি। হায়দারের মৃত্যু দুর্ঘটনার ফলে ঘটেছে বলে ধৃতেরা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, হায়দরের সঙ্গে সাজদার আলাপ ফেসবুকের মাধ্যমে। কিন্তু হায়দার জানতেন না সাজদা বিবাহিত।