প্রতীকী ছবি।
এক যৌনকর্মীর নাবালিকা মেয়েকে বার বার ধর্ষণের অভিযোগ উঠল তারই সৎবাবার বিরুদ্ধে। সোনাগাছির এই ঘটনায় বছর তেরোর ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। শনিবার বিষয়টি জানাজানি হতে বছর তিরিশের ওই অভিযুক্তকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন প্রতিবেশীরা। পকসো আইনে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছেন বড়তলা থানার অফিসারেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, আদতে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ওই যৌনকর্মী বেশ কয়েক বছর ধরেই তাঁর প্রথম পক্ষের মেয়েকে নিয়ে সোনাগাছিতে থাকছেন। সেখানকারই একটি স্কুলে পড়ে ওই কিশোরী। কয়েক বছর আগে মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয় ওই যুবকের। তাঁরা বিয়েও করেন। সোনাগাছির সাত নম্বর মনিরুদ্দিন লেনে একটি ঘর ভাড়া নেন মহিলা। ওই যৌনকর্মী পুলিশকে বলেছেন, “গত কয়েক দিন ধরেই মেয়ে ঝিমিয়ে পড়ছিল। সেই সঙ্গে বার বার বমি করছে। কী হয়েছে, জানতে চাইলে অদ্ভুত এক ভয় দেখেছি ওর চোখে-মুখে। এ দিন ভোরেও ওর এ রকম শারীরিক অবস্থা দেখে চেপে ধরি। তখনই বলে সব। ও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে।” ওই যৌনকর্মী আরও বলেন, “এর পরে আর মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। যাকে ওর বাবা হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম, সে-ই এ রকম করল! নিজের মেয়ে না হোক, সন্তানের মতো কারও সঙ্গে কেউ এ রকম করতে পারে?”
বিষয়টি জানাজানি হতেই ওই যুবককে মারধর শুরু করেন প্রতিবেশীরা। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অভিযুক্তকে বেঁধে বড়তলা থানায় নিয়ে যান তাঁরা। আহত অভিযুক্তকে এর পরে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয় পুলিশকে। পুলিশ ওই যৌনকর্মী ও তাঁর মেয়েকেও থানায় নিয়ে যায়। সরকারি হাসপাতালে কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। তাতে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। জানা যায়, তার মায়ের দাবিই ঠিক। সে দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নাবালিকার মায়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এর পরে ধরা হয় ওই যুবককে।
ওই নাবালিকা পুলিশকে জানিয়েছে, যখনই তার মা রোজগারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তেন, তখনই তার উপরে অত্যাচার চালাত তার সৎবাবা। এমনকি, সোনাগাছিতে অতীতে হওয়া একাধিক খুনের কথা তুলে সে ওই কিশোরীকে বলত, “এ সব কথা কাউকে জানালে তোর মাকে খুন করে দেব।”
এ দিন বিকেলে ওই কিশোরীকে যখন হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে পুলিশ, তখনও সে সমানে বলে চলেছে, “বাবার কথাই তো সত্যি হল। আমাকে কোথায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে! তোমাকে তো মেরে ফেলবে বাবা!” পুলিশের দাবি, জেরার মুখে অপরাধ কবুল করলেও এ দিন তার বেশি কিছুই বলেনি অভিযুক্ত। আজ, রবিবার তাকে আদালতে তোলার কথা। সোনাগাছিতে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি বিশাখা দত্ত বললেন, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিযুক্তের কড়া শাস্তি চাইছি। করোনার জেরে এমনিই বন্ধ সোনাগাছির রোজগার। সকলে মিলে বেঁচে থাকার লড়াই লড়ছেন। সেখানে অপরাধপ্রবণতা বাড়তে দেওয়া চলে না। সেই কারণেই চাই নজিরবিহীন শাস্তি।”