—প্রতীকী ছবি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরি সংক্রান্ত একটি গ্রুপে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন এক তরুণী। অভিযোগ, তাঁকে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রথমে অশালীন প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে সেই প্রস্তাব নাকচ করায় ওই তরুণীর ছবি ফেসবুক থেকে নিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। তরুণী সেই হুমকির জবাব না দেওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে তাঁকে অ্যাসিড ছুড়ে মারার ও খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এমনকি, তাঁর নামে একটি ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে। ওই তরুণী লালবাজারের সাইবার অপরাধ থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। ইতিমধ্যেই সেখানকার অফিসারেরা তদন্ত শুরু করেছেন বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
ওই তরুণীর অভিযোগ, লালবাজারে নালিশ জানানোর পরেও শুক্রবার ফের অন্য এক ব্যক্তির মেসেঞ্জার থেকে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। তরুণীর দাবি, তিনি ফোনে লালবাজারের সাইবার অপরাধ থানায় বিষয়টি জানালে তাঁকে জানানো হয়, ফেসবুকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তথ্য হাতে পেতে কয়েক দিন সময় লাগবে।
যাদবপুর থানা এলাকার বাসিন্দা, বিবাহিতা ওই তরুণী একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। তিনি জানান, আরও ভাল চাকরির খোঁজে গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন তিনি। আর সেই সূত্রেই মাস তিনেক আগে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার ‘জবস ইন কলকাতা’ বলে একটি গ্রুপে চাকরির আবেদন করেন। এর পরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সেই গ্রুপ থেকে এক মহিলা তাঁর সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে একটি মোবাইল ফোনের নম্বর দেন এবং তাতে যোগাযোগ করতে বলেন। তরুণী জানিয়েছেন, ওই নম্বরে ফোন করলে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে, তিনি কী ধরনের কাজ করতে চান এবং আগের কোনও অভিজ্ঞতা রয়েছে কি না।
তরুণীর অভিযোগ, তিনি সব তথ্য দেওয়ার পরেই ওই ব্যক্তি তাঁকে জানায়, কাজ পেতে গেলে কিছু ‘আপস’ করতে হবে। তরুণীর দাবি, তিনি ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সেই ব্যক্তি তাঁকে হুমকি দিয়ে বলে, ফেসবুক থেকে তাঁর ছবি নিয়ে তা বিকৃত করে নকল আইডি-র মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাঁকে বলা হয়, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও তাঁর গলায়-হাতে থাকা সোনার গয়নাগুলি দিলে তিনি বেঁচে যাবেন। কোনও ছবি পোস্ট করা হবে না।
তরুণী জানিয়েছেন, তখনই তিনি ওই মোবাইল নম্বরটি ‘ব্লক’ করে দেন। কিন্তু সেই নম্বর ব্লক করলেও অন্যান্য অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসা শুরু হয়। হোয়াটসঅ্যাপেও মেসেজ আসতে শুরু করে। ভয় পেয়ে ওই তরুণী নিজের পরিচিত এক আইনজীবী ও স্বামীকে বিষয়টি জানান। এরই মধ্যে তরুণীর নামে একটি ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয় এবং সেখান থেকে অশ্লীল কিছু মেসেজ পোস্ট করা হয়। শুধু তা-ই নয়, তাঁর স্বামীর সঙ্গেও মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে তাঁকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি।
পরপর একাধিক নম্বর ‘ব্লক’ করলেও আবার নতুন নম্বর থেকে যোগাযোগ করা শুরু হয়। তরুণীর সম্পর্কে নানা রকম অশ্লীল কথা লিখে পাঠানো হয় তাঁর স্বামীকেও। তরুণী জানিয়েছেন, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী কেউই ওই সমস্ত মেসেজের উত্তর দিচ্ছেন না দেখে এর পরে তাঁর বাপের বাড়িতে চড়াও হওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। বাইরে বেরোলে তাঁকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোড়ার ও খুনের হুমকিও আসে। এর পরে ওই তরুণী আর অপেক্ষা করেননি। বৃহস্পতিবার যাদবপুর থানায় অভিযোগ জানাতে যান তিনি। তাঁকে লালবাজারের সাইবার অপরাধ থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়।
শুক্রবার ওই তরুণী জানান, যে নম্বরগুলি থেকে ফোন করা হয়েছিল, সেগুলি ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি সংস্থার নামে। তবে ফোন করা ব্যক্তি নিজের কোনও নাম বলেনি। আপাতত ভয়ে ওই তরুণী বাড়ির ভিতরেই বন্দি। তিনি বলেন, ‘‘বেরোতে পারছি না। অফিস যেতে পারছি না। ভয়ে রয়েছি। জানি না, কী হবে।’’