ফাইল চিত্র।
অ্যাপ-ক্যাবের ‘দুর্দিনে’ যেন হারানো জমি ফিরে পাচ্ছে হলুদ ট্যাক্সি।
যাত্রী খুইয়ে সঙ্কটে ভুগছে অ্যাপ-ক্যাব। অতিমারি-পূর্ব পরিস্থিতির তুলনায় শহরে তাদের সংখ্যা কমেছে ৩০-৪০ শতাংশ। বহু ক্যাবমালিক ও চালক ঋণ প্রদানকারী সংস্থার কিস্তির টাকা মেটাতে না পেরে গাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন বলেও খবর। তা সত্ত্বেও টিকে থাকা চালকদের আয় আশানুরূপ হচ্ছে না, মানছেন প্রায় সব অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের নেতৃত্ব।
গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, শপিং মল এলাকায় যাত্রীদের একাংশ তুলনামূলক কম ভাড়ার কারণে হলুদ ট্যাক্সির দিকে ঝুঁকছেন বলেও জানা যাচ্ছে। হলুদ ট্যাক্সির চালকদের অনেকেই অ্যাপ-ক্যাবের তুলনায় ভাড়া কম নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে যাত্রীদের দাবি, বাড়ি থেকে যাত্রী তোলা এবং বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রশ্নে হলুদ ট্যাক্সি এখনও পিছিয়ে। যদিও ব্যস্ত এলাকার মধ্যে সফরে তাদের সঙ্গে দর কষাকষির সুবিধা পাচ্ছেন যাত্রীরা। অ্যাপে যে দূরত্ব যেতে ১৭০ টাকা দেখাচ্ছে, সেই দূরত্বই ক্ষেত্র বিশেষে হলুদ ট্যাক্সিতে ১০০-১২০ টাকায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে যাত্রীদের দাবি। সজল বসু নামে এক যাত্রী জানাচ্ছেন, সম্প্রতি সায়েন্স সিটি থেকে কসবার একটি জায়গায় যাওয়ার জন্য অ্যাপ-ক্যাবে ১৮০ টাকা ভাড়া দেখিয়েছিল। তিনি হলুদ ট্যাক্সিতে কসবার একটি শপিং মল পর্যন্ত যাওয়া স্থির করেন। তাঁকে দিতে হয় ১১০ টাকা। বাকি পথ রিকশায় যান।
ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আয়ে টান পড়েছে অ্যাপ-ক্যাব চালকদের। সারা দিন গাড়ি চালিয়ে আগে যেখানে দেড় থেকে দু’হাজার টাকা আয় হত, এখন সেখানে সব খরচ বাদ দিয়ে আয় ঠেকেছে সাড়ে সাতশো থেকে হাজার টাকায়। তা বজায় রাখতে গিয়ে এসি না চালানোয় যাত্রীদের অনেকের কাছেই অ্যাপ-ক্যাবের আকর্ষণ ফিকে হয়েছে।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অতিমারির দু’বছরে শহরে সাত থেকে আট হাজার গাড়ি কমেছে। তা ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি-সহ বহু ক্ষেত্রে এখনও বাড়ি থেকে কাজ হচ্ছে। ফলে নিয়মিত সফরের প্রয়োজন কমেছে।’’ সিটুর অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের নেতা ইন্দ্রজিৎ ঘোষের কথায়, ‘‘অনেকেই দু’চাকা বা চার চাকার ব্যক্তিগত গাড়ির দিকেও ঝুঁকেছেন।
রাতের দিকে বাস কমে আসার পরে এসপ্লানেড, খিদিরপুর, টালিগঞ্জ, পার্ক সার্কাস, রুবি মোড়, গড়িয়াহাট-সহ একাধিক জায়গায় শাট্ল ট্যাক্সির চাহিদা বেড়েছে। ট্যাক্সিচালকেরাও মানছেন, বাতানুকুল পরিষেবা না থাকায় অ্যাপ-ক্যাবের আগ্রহ কমছে। এআইটিইউসি-র অ্যাপ-ক্যাব এবং ট্যাক্সি সংগঠনের নেতা নওলকিশোর শ্রীবাস্তবের মতে, পরিস্থিতির কিছুটা সুবিধা ট্যাক্সিচালকেরা পাচ্ছেন। তবে তা আদতে পরিবহণ ক্ষেত্রের দুর্দশাকেই আরও প্রকট করছে। তাঁর কথায়, ‘‘ট্যাক্সির সংখ্যা কয়েক বছর ধরেই কমছিল। আর অতিমারি অ্যাপ-ক্যাবকেও রেহাই দেয়নি। কয়েক হাজার ট্যাক্সিচালকের স্বার্থে এ বার সরকারের অ্যাপ চালু করা উচিত।’’