—ফাইল চিত্র
আর্থিক সঙ্কট শুরু হয়েছিল বছর চারেক আগে থেকেই। ব্যাঙ্কের গচ্ছিত টাকা ভাঙিয়ে কোনও রকমে চলছিল এত দিন। চরম অর্থসঙ্কটে এ বার ডুবতে বসেছে গঙ্গায় পারাপারের লঞ্চ পরিষেবা সংস্থা হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে কোভিড আতঙ্ককে ছাপিয়ে রুটি-রুজির চিন্তাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে সংস্থার সাড়ে তিনশো কর্মীর কাছে। কোনও জায়গায় সাড়া না পেয়ে শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে সাহায্য চেয়েছেন তাঁরা।
১৯৮০ সালের ২ মে থেকে গঙ্গা দিয়ে লঞ্চ চলাচল শুরু করে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। প্রথমে কয়েকটি ঘাটে লঞ্চ চললেও এই সংস্থার কলেবর বেড়ে চলায় বর্তমানে ১০টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে। সেই রুটগুলি হল হাওড়া-আর্মেনিয়ান ঘাট, হাওড়া-ফেয়ারলি, হাওড়া-চাঁদপাল, হাওড়া-বাগবাজার ভায়া শোভাবাজার, আহিরীটোলা-গোলাবাড়ি। এ ছাড়াও রয়েছে চাঁদপাল-শিবপুর, নাজিরগঞ্জ-মেটিয়াবুরুজ, বাউড়িয়া-বজবজ, গাদিয়াড়া-গেঁওখালি, নুরপুর। সংস্থায় কাজ করেন ২১২ জন স্থায়ী কর্মী এবং ১০৮ জন দৈনিক মজুরির কর্মী। প্রতি মাসে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও কোঅপারেটিভে জমা নিয়ে বেতন দিতে খরচ হয় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।
ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪০ বছর পরে গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর রাজ্য সমবায় দফতর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জলপথ সংস্থার পরিচালন সমিতি ভেঙে দিয়ে এক জন প্রশাসক নিয়োগ করে। পরে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য তিন প্রশাসককে নিয়োগ করে সমবায় দফতর। ওই সমবায় সমিতি সূত্রে খবর হল, প্রশাসক বসার আগে ব্যাঙ্কে সংস্থার গচ্ছিত মূলধন ছিল ৫০ লক্ষ টাকা। পরে এই টাকার অঙ্ক বেড়ে হয় ১ কোটি ২০ লক্ষ।
সংস্থার কর্মী দুলাল ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘আগে যেখানে দিনে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আয় হত, কোভিডের জন্য ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজারে। গত কয়েক মাসে ব্যাঙ্কের গচ্ছিত ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ভেঙে বেতন হয়েছে। বর্তমানে সব টাকা শেষ। তাই অগস্টের বেতন আজ পর্যন্ত হয়নি।’’
কর্মীদের অভিযোগ, সমবায় দফতরে চারটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়ে। কিন্তু কোনও উত্তর আসেনি। শুধু তা-ই নয়, সংস্থায় বছর তিনেক আগে হওয়া অর্থ তছরুপ-সহ গোটা বিষয়টি জানিয়ে সমবায় দফতর নিযুক্ত এক জন প্রশাসক সমবায় দফতরের কাছে অর্থ সাহায্য চেয়ে চিঠি লেখার পরে রাতারাতি তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয়।
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় নামে এক কর্মী বলেন, ‘‘টিকিট বিক্রি কমে যাওয়ায় স্টোরে মালপত্র নেই। ৪০ বছর ধরে চলা লঞ্চগুলি মেরামত হয়নি বহু দিন। এর উপরে করোনার জন্য গত চার মাস ধরে ১৬টি বড় লঞ্চ বসে আছে। সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণও করা যায়নি।’’
পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে চলে গিয়েছে তা বুঝতে পেরে সমস্ত কর্মী গেট মিটিং করেছেন। সাহায্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কিন্তু সমবায় দফতর এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন?
রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘জলপথ পরিবহণ চালায় পরিবহণ দফতর। সমবায় দফতর রেজিস্ট্রেশন দেয়। জলপথের আয় থেকে কর্মীদের বেতন হয়। পরিবহণ দফতরকে প্রধান সচিবের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।।’’
পরিবহণ দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়েছি। এ নিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’