নাতি নিয়ে পথভোলা প্রৌঢ়া ফিরলেন বাড়ি

তত ক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে নেই কোনও ফোন নম্বর বা মোবাইল ফোন। আর বাউড়িয়া ফিরতে পারেননি তিনি। শেফালিদেবী বলেন, ‘‘রাত আটটা নাগাদ দুই মহিলা সমস্ত ঘটনা শুনে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে সকালে আমাকে বাউড়িয়ার ট্রেনে তুলে দেন।’’

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০৫
Share:

ফেরা: নাতি অঙ্কুরকে কোলে নিয়ে শেফালিদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

পাঁচ বছরের নাতিকে নিয়ে মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য ট্রেনে উঠেছিলেন এক প্রৌঢ়া। ট্রেন থেকে নামা পর্যন্তও সব ঠিক ছিল। কিন্তু তার পরে হঠাৎ রাস্তা হারিয়ে ফেলেন তিনি। সঙ্গে মোবাইল না থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি। এ দিকে, রাত দশটা পেরিয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় খোঁজ শুরু হয়। অবশেষে সারা রাত জেগে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার দেওয়ার সূত্রেই ওই শিশু ও প্রৌঢ়াকে খুঁজে পেল পরিবার। মাকে খুঁজে পেয়ে ছেলের প্রতিজ্ঞা, ‘‘মাকে মোবাইল ব্যবহার করা শেখাতেই হবে।’’

Advertisement

মহেশতলার নতুনহাট এলাকায় বাড়ি শেফালি নস্করের। দুই ছেলে ও নাতির সঙ্গে সেখানে থাকেন তিনি। শুক্রবার শেফালিদেবী জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হাওড়ার বাগনানে মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য মহেশতলার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। পাঁচ বছরের নাতি অঙ্কনের আবদারে তাকেও সঙ্গে নেন। প্রথমে নৌকা পার করে বাউড়িয়া, পরে বাগনানের ট্রেনে ওঠেন। কিন্তু সেখানে নামার পরে মেয়ের বাড়ির ঠিকানা ভুলে যান শেফালিদেবী।

তত ক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে নেই কোনও ফোন নম্বর বা মোবাইল ফোন। আর বাউড়িয়া ফিরতে পারেননি তিনি। শেফালিদেবী বলেন, ‘‘রাত আটটা নাগাদ দুই মহিলা সমস্ত ঘটনা শুনে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে সকালে আমাকে বাউড়িয়ার ট্রেনে তুলে দেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: হেলমেট ছাড়া তেল, বিপাকে পাম্প

কিন্তু তত ক্ষণে পরিবারের লোকেদের ঘাম ছুটে গিয়েছে। বাউড়িয়া থেকে শুরু করে মেদিনীপুর পর্যন্ত সারা রাত প্রতিটি স্টেশনে খুঁজে বেড়িয়েছে পরিবার। শেফালিদেবীর ছোট ছেলে অমিতবাবু জানান, থানা থেকে হাসপাতাল, স্টেশন থেকে শুরু করে জাতীয় সড়ক— সমস্ত জায়গাতেই খোঁজা হয়। সেই সঙ্গে নিখোঁজ দু’জনের ছবি দিয়ে পোস্টার লাগানো হয় সর্বত্র। সেই সূত্রেই শেফালিদেবী ও তাঁর নাতির সন্ধান মেলে।

শুক্রবার অমিতবাবু বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, মা ট্রেনে উঠতে পারেননি। তাই সকাল থেকেই গোটা বাউড়িয়ায় ঘুরছিলাম। রাস্তার লোকজনকে মা আর ছেলের বিবরণ দিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকি। তখনই এক জন জানান, গঙ্গার ফেরিঘাটে এক প্রৌঢ়া ও শিশুকে দেখা গিয়েছে।’’

দুপুর দুটো নাগাদ ওই দু’জনকে খুঁজে পায় পরিবার। এক অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন মা ও ছেলে। কিন্তু তখনও মুখ গোমরা করে বসে ছিল অঙ্কুর। কেন? প্রশ্ন শুনেই করুণ গলায় তার উত্তর, ‘‘আমি বাড়ি যাব।’’ অমিতবাবু বলেন, ‘‘চরম শিক্ষা হল। আর মাকে একা ছাড়ব না। তবে সবার আগে মোবাইল ব্যবহার শেখাতে হবে। বাউড়িয়া থানাতেও সে কথা বলে এলাম।’’
তবে তাঁর আক্ষেপ, যে মহিলাদের বাড়িতে সারা রাত কাটিয়েছেন, তাঁদেরও মোবাইল নম্বর নিতে ভুলে গিয়েছেন শেফালিদেবী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement