Kolkata Hospital

বাথরুমে পড়ে ৪০ মিনিট, দেখলই না কেউ! প্রসূতির মৃত্যুতে কাঠগড়ায় হাসপাতাল

দু’দিন আগেই তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। ওই অবস্থাতে তিনি একাই শৌচালয়ে যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:২২
Share:

মৃত মহিলা। —নিজস্ব চিত্র।

একা একা হাসপাতালের শৌচালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানেই পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল এক প্রসূতির। শর্মিষ্ঠা বসু ভট্টাচার্য নামে ওই রোগীর মৃত্যুতে ফের কাঠগড়ায় সরকারি হাসপাতাল।

Advertisement

বুধবার রাতে হাসপাতালে কোনও নার্স বা আয়ার দেখা না পেয়ে একাই শৌচালয়ে গিয়েছিলেন হরিদেবপুরের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা। দু’দিন আগেই তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। ওই অবস্থাতে তিনি একাই শৌচালয়ে যান। ফেরার পথে আচমকা পড়ে গিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন শর্মিষ্ঠা। এ ভাবেই শৌচালয়ের মেঝেতে প্রায় ৪০ মিনিট পড়েছিলেন। ঘণ্টাখানেক পর তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত শর্মিষ্ঠাকে বাঁচানো যায়নি। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে।

ওই মৃত্যুর ঘটনায় ভবানীপুর থানায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর পরিবারের লোকজন। গাফিলতি আদৌ হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের তরফে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বুধবার রাতে প্রসূতি বিভাগের ওই ওয়ার্ডে কারা ডিউটিতে ছিলেন, তা-ও দেখা হচ্ছে। রাতে প্রতিটি ওয়ার্ডেই নার্স, আয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের ডিউটি থাকে। কিন্তু ঘটনার সময় কারও দেখা পাওয়া গেল না কেন, সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটিজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ মৃতার পরিবারের। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

আরও পড়ুন: জলের ট্যাঙ্কারের সঙ্গে ধাক্কা, অল্পের জন্য রক্ষা বিমানের​

আরও পড়ুন: বর্বর গৃহকর্তা! অসুস্থ বৃদ্ধা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে খুঁজছেন আত্মীয়ের হাত​

মৃতার পরিবার জানিয়েছে, গত ২২ অক্টোবর ওই হাসপাতালে ভর্তি হন শর্মিষ্ঠা বসু ভট্টাচার্য (৩৪)। ২৩ তারিখ কন্যা হয় তাঁর। ‘সিজারিয়ান সেকশন’ হওয়ায় চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেন। মঙ্গলবার তাঁর পেটে সেলাইয়ের অংশ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। চিকিৎসক পরিবারকে জানান, রক্তক্ষরণ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সেলাইয়ে সামান্য সমস্যা রয়েছে। বুধবার চিকিৎসক সেলাই ঠিক করে দিলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। রাতে রোগীকে দেখভালের জন্য আয়া নিয়োগ করে পরিবার। অভিযোগ, রাতে শৌচালয়ে যাওয়ার জন্য একাধিক বার আয়া এবং নার্সকে ডাকলেও কেউ রোগীর কাছে যাননি। ভোর ৫টা নাগাদ শর্মিষ্ঠা একাই শৌচালয়ে যান। ফেরার সময়ে তিনি পড়ে যান।

পরিবার সূত্রে খবর, এ বছর জানুয়ারিতে বিয়ে হয় শর্মিষ্ঠার। পারিবারিক সমস্যার কারণে হরিদেবপুরে বাবা-মায়ের কাছে থাকতেন তিনি। শর্মিষ্ঠার মামা বিমল দে জানান, এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ফোন করে এক জন তাঁদের জানান, তিনি চিত্তরঞ্জনে শর্মিষ্ঠার পাশের শয্যাতেই ভর্তি। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে শর্মিষ্ঠা মাটিতে পড়ে রয়েছেন। নার্স ও আয়াকে ডাকাডাকি করা হয়েছে, কিন্তু কেউ ওয়ার্ডে নেই। বিমলবাবু ও পরিবারের অন্যরা হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, শর্মিষ্ঠাকে আলাদা শয্যায় রাখা হয়েছে। এর পর হাসপাতালের তরফে শর্মিষ্ঠার মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়। বিমলবাবুর প্রশ্ন, ‘‘রাতে দেখভালের জন্য আয়া রাখলাম। তার পরেও মেয়েটা একা হেঁটে শৌচালয়ে গেল কী ভাবে? নার্স কী করছিলেন?’’

হাসপাতালের সুপার দ্বিজেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘রোগীর পরিবারের সব অভিযোগ খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।’’ তিনি জানান, আয়ার কর্তব্যে গাফিলতি পাওয়া গেলে তাঁকে ওই হাসপাতালে আর কাজ দেওয়া হবে না। সরকারি কর্মী না হলেও হাসপাতালে তিনি যাতে কোনও কাজ না পান, তা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি, নার্সের ভূমিকায় গাফিলতি পাওয়া গেলে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement