শোকস্তব্ধ: স্বপ্না নাথের (ইনসেটে) মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলে অনীশ এবং শাশুড়ি গীতাদেবী। শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
দোকানের ভাড়া দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে মালিকদেরই বাড়িছাড়া করে সেই জমিতে প্রোমোটিং করার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, শাসক দলের স্থানীয় কাউন্সিলরের স্বামী গিয়ে বাড়ির লোকজনকে হুমকি দেন ও মারধর করেন বলেও অভিযোগ। লাগাতার হুমকির সেই চাপ সহ্য করতে না পেরেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে শুক্রবার অভিযোগ দায়ের হয়েছে নেতাজিনগর থানায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম স্বপ্না নাথ (৫২)। বাড়ি দক্ষিণ শহরতলির লক্ষ্মীনারায়ণ কলোনিতে।
মৃতার পরিবারের দাবি, পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করলেও এই ঘটনায় শাসক দলের লোকজনের যোগ থাকায় অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসএসডি) সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, ‘‘উনি হৃদ্রোগে মারা গিয়েছেন। আদালত থেকে অনুমতি আনা হলে তবেই আমরা অভিযোগটিকে এফআইআর হিসেবে দেখব।’’ পুলিশের কাছে এফআইআর করতে গেলে আদালতের দ্বারস্থ কেন হতে হবে? ওই পুলিশকর্তা অবশ্য এ প্রশ্নের উত্তর দেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নেতাজিনগর থানার লক্ষ্মীনারায়ণ কলোনির বাসিন্দা মিলন নাথের বাড়ির নীচে একটি সেলুন ভাড়া নিয়েছিলেন জয়নগরের বাসিন্দা হারান প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মারা যান মিলনবাবু। অভিযোগ, বেশ
কিছু দিন ধরে দোকানের ভাড়া দিচ্ছিলেন না হারান। শুধু তা-ই নয়, টাকা চাইতে গেলে উল্টে হুমকি দিয়ে বলেন, ওই জমিতে প্রোমোটিং করা হবে। পুলিশ জানিয়েছে, এই বিবাদ চলাকালীন মিলনবাবুর স্ত্রী স্বপ্না দুর্গাপুজোর আগে দোকানে তালা দিয়ে দেন। অভিযোগ, এর পরেই পুরসভার ওই ওয়ার্ডের (১০০ নম্বর) কাউন্সিলর সুস্মিতা দামের স্বামী ভাস্কর দাম ও তাঁর শাগরেদরা দেবা দত্ত নামে স্থানীয় এক প্রোমোটারকে নিয়ে এক রাতে ওই বাড়িতে হানা দেন। সেই সময়ে বাড়িতে ছিলেন মিলনবাবুর বৃদ্ধা মা গীতা নাথ, স্বপ্না ও ছেলে অনীশ। গীতাদেবী বলেন, ‘‘ওরা বাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও
মারধর করে। সেলুনের চাবি কেড়ে নিয়ে দোকান খুলে দেয়। আমরা ভাড়াটের সঙ্গে চুক্তিপত্র দেখাতে গেলে ভাস্কর তা কেড়ে নেন। আমাদের হুমকি দিয়ে যান, বাড়ি প্রোমোটিং করতে না দিলে ফল ভাল হবে না।’’
আরও পড়ুন: আগুন সর্বোচ্চ বাড়িতে, ঠুঁটো দমকল বাহিনী
স্বপ্নার ভাই প্রশান্ত নাথ এ দিন বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পর থেকেই দিদি আতঙ্কে কান্নাকাটি করতে থাকে।
টানা হুমকি সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শুক্রবার সন্ধ্যায় হৃদ্রোগে মারা যায়।’’ গীতাদেবী বলেন, ‘‘আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বৌমা ওদের হুমকি সহ্য
করতে না পেরে মারা গেল। ওরা সে দিন ঘরে এসে ভয় দেখিয়েছে। তার পরে বারবার ফোন করেও
বৌমাকে ভয় দেখিয়েছে। আমরা ওদের কঠিন শাস্তি চাই।’’ এই ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে তৃণমূল কাউন্সিলর সুস্মিতা
দাম বলেন, ‘‘দল আমাকে এ বিষয়ে কথা বলতে বারণ করেছে। যা বলার দলই বলবে।’’ কিন্তু তাঁর স্বামীই
তো এখানে অভিযুক্ত! সুস্মিতা বলেন, ‘‘ঘটনাটা শুনেছি।’’ তার পরেই ফোন কেটে দেন। এ বিষয়ে দেবা দত্ত
নামে ওই প্রোমোটার বলেন, ‘‘ঘটনাটা আমি জানিই না। আমাকে মিথ্যা অভিযোগে জড়ানো হচ্ছে।’’ স্বপ্নার মৃত্যুর খবর পেয়েই ভাড়াটে হারান গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।