ধৃত আজমিরা বিবি। নিজস্ব চিত্র
ই এম বাইপাসের কামালগাজি মোড়ে সন্ধ্যায় তরুণীটি বাস থেকে নামতেই আশপাশ থেকে কয়েক জন মহিলা ও পুরুষ তাঁকে ঘিরে ফেলল। শনিবার সন্ধ্যায় প্রকাশ্য রাস্তায় এমন ঘটনা দেখে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন পথচলতি লোকজন। শুধু ঘিরে ফেলাই নয়। দুই মহিলা তরুণীর হাত ধরে একটি গাড়িতে যখন তুলে নিচ্ছেন, তখন তরুণীর মুখে একটি শব্দও নেই। তবে গাড়ির পিছনে পুলিশ লেখা থাকায় অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, সম্ভবত তরুণী কোনও মামলায় অভিযুক্ত।
বারুইপুর জেলা পুলিশ জানাচ্ছে, বছর বাইশের ওই মহিলার নাম আজমিরা বিবি। নরেন্দ্রপুর থানার কন্দর্পপুর এলাকার বাসিন্দা আজমিরা নদিয়ার পলাশি থেকে কন্দর্পপুরে নিজের শ্বশুরবাড়িতে বাড়িতে মাদক নিয়ে আসত। অভিযোগ, তার পরে পুরিয়া তৈরি করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হত।
বারুইপুর পুলিশ জেলার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের অফিসারেরা জানান, বছর দেড়েক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরে মাদক পাচার চক্রের কয়েক জন পান্ডাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জেরায় তারা পুলিশকে জানায়, সিরাজ মোল্লা নামে নরেন্দ্রপুরের কন্দর্পপুরের এক বাসিন্দা নদিয়া থেকে মাদক নিয়ে এসে কলকাতায় বিক্রি করছে। তার পরেই সিরাজের উপর নজরদারি শুরু করে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, কোনও ভাবে সিরাজ তা টের পেয়ে নিজে সরাসরি পাচারের কাজ থেকে সরে যায়। তার বদলে স্ত্রী আজমিরার মাধ্যমে নদিয়া থেকে মাদক কলকাতায় নিয়ে আসা শুরু করে।
সম্প্রতি নরেন্দ্রপুর থানা ও স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের অফিসারেরা আজমিরার উপরে নজরদারি শুরু করেন। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘গত বৃহস্পতিবার নদিয়ায় যায় আজমিরা। দু’জন তদন্তকারীও আজমিরার পিছু নেন। পাশাপাশি, সিরাজ ও আজমিরার মোবাইল ফোনেও আড়ি পাতা হয়। শনিবার সকালে পলাশি থেকে মাদক কিনে ট্রেনে শিয়ালদহে আসে আজমিরা। সেখান থেকে বাস ধরে কামালগাজি। এ দিন বাস থেকে নামতেই বমাল আজমিরাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার থেকে প্রায় ৫০ গ্রাম মাদক উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
পুলিশ জানায়, ওই মাদকের বাজার মূল্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, পুরিয়া তৈরি করে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় ওই মাদক বিক্রি করা হত। প্রতি মাসে দু’বার ওই মাদক নিয়ে আসত আজমিরা। মাদক বিক্রি করে মাসে প্রায় তিন লক্ষ টাকা মুনাফা করত সে। বছর চারেক আগে সিরাজের সঙ্গে আজমিরার বিয়ে হয়। মাদক পাচারই তাদের পারিবারিক ব্যবসা বলে জেরায় জানিয়েছে আজমিরা, এমনটাই দাবি তদন্তকারীরা। তবে সিরাজ-সহ শ্বশুরবাড়ির পরিজনেরাও পলাতক বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। ওই বাড়ি আপাতত পুলিশ সিল করে দিয়েছে। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে ওই বাড়িতেও তল্লাশি করা হবে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। রবিবার আজমিরাকে বারুইপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাকে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।