বিশৃঙ্খল সমাবেশে জেরবার শহর

গত ২১ জুলাই পুলিশ যতটা তৎপরতা ও প্রস্তুতির সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল, এ দিন তার সিকি ভাগও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। যার জেরে ভোগান্তির মাত্রা আরও বে়ড়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫৫
Share:

বেপরোয়া: এক আসনে তিন সওয়ারি, হেলমেট নেই কারও মাথায়। এ ভাবেই ঝান্ডা নিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বাইকবাহিনী। যানজটে নাজেহাল হল শহরের ব্যস্ত এলাকা। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মেয়ো রোডে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় কোন কোন রাস্তা দিয়ে মিছিল যাবে, তার কোনও আগাম ঘোষণা ছিল না। পথে নামলে নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তি হতে পারে— এমন কোনও সতর্কবার্তাও দেয়নি পুলিশ অথবা উদ্যোক্তা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ফলে পরিণতি যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতেই মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার যান চলাচল ব্যবস্থা পর্যুদস্ত হয়ে গিয়েছে। আর মধ্য কলকাতার যত্রতত্র দাপিয়ে বেড়ালেন ওই মিছিলে আসা ছাত্রেরা।

Advertisement

গত ২১ জুলাই পুলিশ যতটা তৎপরতা ও প্রস্তুতির সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল, এ দিন তার সিকি ভাগও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। যার জেরে ভোগান্তির মাত্রা আরও বে়ড়ে যায়।

সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন কেমন ছিল সেই ভোগান্তির ছবি?

Advertisement

চাঁদনি চকে আসবেন বলে উল্টোডাঙা থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় ট্যাক্সি ধরেন ভাস্কর দত্ত। কাঁকুড়গাছির চার মাথার মোড় থেকে ডান দিকে মানিকতলার পথ ধরার জন্য গাড়ি এগোতেই থেমে যায়। কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে
গলির রাস্তা ধরেন ভাস্করবাবু। উদ্দেশ্য ছিল রাজাবাজার, কেশব সেন স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বৌবাজার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে চাঁদনি পৌঁছনো।

ট্যাক্সিকে রাজাবাজারেই আটকে দেয় পুলিশ। অগত্যা ঘুরপথে শিয়ালদহের পথ ধরেন ভাস্করবাবু। কিন্তু গাড়ি শম্বুক গতিতে উড়ালপুলের উপরে উঠতেই দাঁড়িয়ে পড়ে। ট্যাক্সির জানলা দিয়ে ঘাড় বাড়িয়ে ভাস্করবাবু দেখেন, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বিশাল মিছিল বেরিয়েছে। সঙ্গে ব্যান্ড আর যন্ত্রসঙ্গীতের যুগলবন্দি বিকট শব্দ করে এগিয়ে চলেছে এনআরএস হাসপাতালের সামনে দিয়ে।

প্রায় ৯৫ শতাংশ আর্দ্রতায় ঘেমেনেয়ে হাতে ওয়াকিটকি অসহায় পুলিশকর্মী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অনেকেই বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করে দিয়েছেন। দূরপাল্লার একটি বেসরকারি বাস থেকে নামলেন এক মা। কোলে বছর পাঁচেকের শিশু আর একটা কাপড়ের পুঁটলি। বুঝতে পারছেন না কী করবেন, কোন দিকে যাওয়া উচিত। এরই মধ্যে টুকটাক মন্তব্য ভেসে আসে ভাস্করবাবুর কাছে। অনেকেরই প্রশ্ন, রাজ্যে বন্‌ধ নিষিদ্ধ হলে কেন কাজের দিনে শহরে মিছিল-মিটিং বন্ধ হবে না?

ট্যাক্সি থেকে এক বার নেমে ভাস্করবাবু দেখেন, উড়ালপুলের দু’দিকে যত গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার সংখ্যা মিছিলকারীদের থেকে খুব কম হবে না। সেখানে অনেকটা সময় হাঁসফাঁস করে গাড়ি ঘুরিয়ে বাঁ দিকে শিয়ালদহের পথ ধরেন ট্যাক্সিচালক। গাড়ি কোনও রকমে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া পর্যন্ত এগিয়ে ফের থেমে যায়। এই ভাবে আরও কিছু ক্ষণ। শেষমেশ যখন তিনি চাঁদনি চকে পৌঁছন, ঘড়িতে তখন পৌনে দুটো। ভাড়া উঠেছে প্রায় আড়াই গুণ বেশি।

ভোগান্তি পোহাতে হয় মা উড়ালপুল ধরা যাত্রীদেরও। বেলা সাড়ে ১২টায় বেলেঘাটা কানেক্টর থেকে বেরিয়ে ধর্মতলা পৌঁছতে সময় লেগেছে সওয়া দুই ঘণ্টা। মা উড়ালপুল অর্ধেক পেরোনোর পরে গাড়ি আটকে যায়। প্রবল যানজট। উড়ালপুল থেকে নামার পরেও গাড়ির গতি শামুকের মতো। ধর্মতলা চত্বরে পরপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল বাস। দূরপাল্লার এসি বাসের সংখ্যাও প্রচুর। প্রত্যেকটি বাসের গায়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পতাকা ঝুলছে। এমনকী, রেড রোডের দু’ধারেও বাসের সারি। সাধারণ যাত্রিবাহী বিভিন্ন বাস অন্য রুটে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে কলকাতা পুলিশের দাবি, এ দিন খুব বেশি যানজট হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর সভার কারণে মেয়ো রোড বন্ধ ছিল। স্কুল ছুটি থাকায় কিছু ক্ষণ মা উড়ালপুলে যানজট ছিল বলে দাবি পুলিশের। মেয়ো রোডে সভা হলেও জওহরলাল নেহরু রোড একেবারেই স্বাভাবিক ছিল বলে জানায় তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement