West Bengal Lockdown

দুই প্রবীণের মৃত্যু, পরিবারের পাশে পুলিশ

দিন তিনেক আগে, গত শুক্রবার সকালে বাগুইআটির বাসিন্দা ৭৯ বছরের সেই হেনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য করলেন তাঁর গত ছ’বছরের সঙ্গী, পরিচারিকা প্রমীলা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৭:১২
Share:

সঙ্গী: হেনাদেবীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে প্রমীলা। নিজস্ব চিত্র

মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেও আসতে পারেননি ছেলে। সুদূর ক্যালিফর্নিয়ায় বসে অসহায়ের মতো ইমেল করেছিলেন পুলিশকে।

Advertisement

দিন তিনেক আগে, গত শুক্রবার সকালে বাগুইআটির বাসিন্দা ৭৯ বছরের সেই হেনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য করলেন তাঁর গত ছ’বছরের সঙ্গী, পরিচারিকা প্রমীলা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন পুলিশের কয়েক জন। উপস্থিত ছিলেন না হেনাদেবীর কোনও আত্মীয়। সোমবার পুলিশেরই সাহায্যে গঙ্গার ধারে বৃদ্ধার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সেরেছেন প্রমীলা। হেনাদেবীর ছেলে সোমনাথবাবু ক্যালিফর্নিয়া থেকে লিখিত ভাবে তাঁকে সমস্ত কাজ করার অনুরোধ জানিয়ে রেখেছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান হেনাদেবী। সেই রাতে একা মালকিনের মরদেহ নিয়ে ফ্ল্যাটে কাটান প্রমীলা। শুক্রবার ভোরে চিকিৎসকের থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে লোকজন জড়ো করে হেনাদেবীর দেহ শ্মশানে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। ঘটনাটি নিয়ে অবশ্য সোমনাথবাবু বা প্রমীলা, কারও সঙ্গেই ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।

Advertisement

তবে, ঘটনার পরম্পরায় মিল থাকলেও প্রতিবেশীদের নিয়ে অন্য অভিজ্ঞতা হয়েছে নিউ টাউনের বাসিন্দা বনানী বসুর। তাঁর একমাত্র ছেলে শুভায়ু থাকেন বস্টনে। গত ৩ এপ্রিল শুক্রবার স্বামী সুজয় বসুর (৭৪) মৃত্যুর পরে দিশাহারা হয়ে পড়েন বনানীদেবী। ৬৫ বছরের একা ওই মহিলার পাশে ছিলেন তাঁর দিদি, ৭০ বছরের মনীষা রায়। প্রথমে প্রতিবেশীরা এবং পরে বিধাননগর পুলিশ দাঁড়ায় বনানীদেবীর পাশে। তাঁদেরই সাহায্যে স্বামীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন তিনি।

গত কয়েক বছর ধরেই পার্কিনসন্সে ভুগছিলেন সুজয়বাবু। মেট্রো রেলের প্রাক্তন ওই অফিসারের নিত্যদিনের প্রয়োজনের তালিকায় ছিলেন আয়া এবং ফিজিয়োথেরাপিস্ট। কিন্তু, ২০ মার্চের পরে তাঁরা আর আসতে পারেননি। দিদির সাহায্য নিয়ে স্বামীর সেবায় নেমে পড়েন বনানীদেবী। গত শুক্রবার সুজয়বাবু মারা যাওয়ার পরে দু’জনের চোখের সামনে নেমে আসে অন্ধকার। চেষ্টা করেও ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য কোনও চিকিৎসককে পাননি। রাতে প্রতিবেশীদের
সাহায্যে সুজয়বাবুর দেহ বিধাননগর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে বলা হয়, ময়না-তদন্ত হবে। সেই রাতে স্বামীর দেহ হাসপাতালে রেখে নিউ টাউনে ফিরে আসেন বনানীদেবী।

শনিবার সকালে নিউ টাউন থানা থেকে কাগজপত্র-সহ সুজয়বাবুর দেহ আর জি কর হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বনানীদেবীকে এক বার যেতে হয়েছিল সই করে দেহ ফেরত নেওয়ার জন্য। আত্মীয়দের আসতে যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্য পাসেরও ব্যবস্থা করে পুলিশ। বনানীদেবীর কথায়, ‘‘ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই আমার। প্রতিবেশীরা ও পুলিশ যে ভাবে সাহায্য করেছেন, ভুলব না।’’

বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা সোমবার বলেন, ‘‘মানুষদের সাহায্য করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement