West Bengal Lockdown

হাঁটা বন্ধ না চালু, তরজায় বহু আবাসনের বাসিন্দারা

আবাসন কমিটির চাপে অবশ্য হাঁটাচলা করতে বেরোনো লোকজনের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। বদলে কেউ নিজের ফ্ল্যাটের এক ঘর থেকে অন্য ঘরে কিছু ক্ষণ পায়চারি করে নিচ্ছেন।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২০ ০১:৩৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক পক্ষ বলছেন, ‘‘আবাসনের ভিতরে খোলামেলা জায়গায় হাঁটাচলা করলে কোনও অসুবিধা নেই।’’

Advertisement

অন্য পক্ষের বক্তব্য, ‘‘লকডাউনের নিয়ম মেনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে এক পা-ও বেরোনো যাবে না।’’

ভোরে কিংবা বিকেলে হাঁটাচলার মাধ্যমে শারীরচর্চা করা নিয়ে এই দু’রকম মত ঘিরেই লড়াই শুরু হয়েছে শহরের বিভিন্ন আবাসনে। অধিকাংশ আবাসিক সংগঠনই অবশ্য হাঁটাচলা বন্ধের পক্ষে ‘রায়’ দিচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাস আচমকা বন্ধ করতে নারাজ আবাসিকদের একাংশ। আবাসনের বাসিন্দাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই নিয়েই ক্রমাগত চলছে কথার লড়াই। কেউ আবার কমিটির সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিতে ভিডিয়ো পোস্ট করছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজন ছাড়া আবাসন চত্বরে বেরোলেও ধরপাকড়ের কথা বলছে পুলিশ। বাইরে বেরোনো বন্ধ করতে সেই ভিডিয়োর উদাহরণও দিচ্ছে কোনও কোনও কমিটি।

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার এক আবাসনের আবাসিক সংগঠনের সম্পাদক এম ভি বিজু জানান, তাঁদের আবাসনে ১২০০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। সব মিলিয়ে আবাসিক রয়েছেন প্রায় ৬০০০ জন। তিনি বলেন, ‘‘সকলেই যদি বেরোতে থাকেন, তা হলে সামাজিক ব্যবধান বিধি মেনে চলায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই লকডাউনের শুরু থেকেই আমরা ভোরে বা বিকেলে হাঁটা নিয়ন্ত্রণ করেছি। বাসিন্দাদেরও বিষয়টি বোঝাচ্ছি। ৯৫ শতাংশ বাসিন্দা সে কথা মেনেও চলছেন।’’

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লকডাউনের সময়ে ফ্ল্যাটের বাইরে না-বেরোনোই উচিত বলে মত গড়িয়াহাটের এক আবাসনের সংগঠনের সম্পাদক অমিত বসুর। এর পাশাপাশি তাঁদের আবাসনে পরিচারিকাদের আসাও বন্ধ করা হয়েছে। অমিত বলেন, ‘‘সব আবাসিককেই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রবীণ আবাসিকদের সহযোগিতার জন্য আমরা একটি স্বেচ্ছাসেবী দল রেখেছি।’’ বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে এক আবাসনের কমিটির সভাপতি জে এন গুন্টুর জানান, তাঁরা বাসিন্দাদের মূল গেটের বাইরে বেরোতে দিচ্ছেন না। তবে ভিতরে হাঁটাচলায় বারণ করা হয়নি।

সব আবাসনেই যে হাঁটার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তা-ও নয়। আবার সব বাসিন্দারা যে কথা শুনছেন, তেমনও নয়। কেউ বাড়ির পোষ্যদের নিয়েও হাঁটছেন। তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। পোষ্যের মালিকেরা অবশ্য এ বিষয়ে যুক্তি দিচ্ছেন, সব কুকুরের বাড়িতে মলমূত্র ত্যাগের স্বভাব নেই। অগত্যা তাদের নিয়ে বাইরে বেরোতেই হচ্ছে। রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর মিন্টু চৌধুরী বলেন, ‘‘কুকুরের মলমূত্র ত্যাগের বিষয়টি একদমই অভ্যাসের উপরে নির্ভর করে। যদিও কারও বাইরে বেরোনোর অভ্যাস থাকে, তা হলে সেটা সমস্যার। তবে এখনও কুকুর থেকে মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর কথা শোনা যায়নি। কিন্তু তেমন হলে তো ঘরেই মলমূত্র ত্যাগ করাতে হত।’’

আবাসন কমিটির চাপে অবশ্য হাঁটাচলা করতে বেরোনো লোকজনের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। বদলে কেউ নিজের ফ্ল্যাটের এক ঘর থেকে অন্য ঘরে কিছু ক্ষণ পায়চারি করে নিচ্ছেন। কেউ আবার ঘরেই অল্প শারীরচর্চা করে দিন কাটাচ্ছেন। এখন এই পন্থা নেওয়াই উচিত বলে মত দিচ্ছে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান বিভূতি সাহা। তিনি বলেন, ‘‘হাঁটা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। খোলামেলা জায়গায় বেরোলে মনটাও একটু ভাল থাকে। কিন্তু আমরা এখন একটা আপৎকালীন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। তাই এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমার মতো আর এক জনও কিন্তু হাঁটতে বেরিয়েছেন। আর মানুষও অভ্যাসবশত একে অপরের সামনে চলে যাবেন, কথা বলবেন। কিন্তু অন্য কাউকে দেখে তো বোঝা সম্ভব নয় তিনি করোনা আক্রান্ত কি না। তাই আবাসন চত্বরেও আপাতত হাঁটাচলা স্থগিত রাখাই ভাল।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement