বহু ওয়ার্ডেই ৬০-৮০ শতাংশ বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা। নির্দল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা) ৮৯ শতাংশ বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতা তাপস মজুমদারের কথায়, ‘‘তৃণমূলের যুক্তির সঙ্গে নির্বাচনের দিনের ছবিটা মিলছে না।’’
প্রতীকী ছবি।
ভোটের ফলাফল সংক্রান্ত পরিসংখ্যান অনেক কিছু বলে দেয়। সেই কারণেই দমদমে রাজনৈতিক দলগুলি এখন তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেছে। সাধারণ কর্মী থেকে বাসিন্দাদের আলোচনাতেও পুরভোটের ফলাফল নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া।
সেখানেই প্রশ্ন উঠেছে শাসকদলের জয়ের ব্যবধান বৃদ্ধি নিয়ে। যেমন, উত্তর দমদমের ৩৪টি ওয়ার্ড মিলিয়ে তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ের মোট ব্যবধান ৮০ হাজারেরও বেশি ভোট। দমদমের ২১টি ওয়ার্ডে সেই ব্যবধান
প্রায় ৩৪ হাজার। আবার দক্ষিণ দমদমের ৩৪টি ওয়ার্ডে সেই ব্যবধান এক লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি। তিন পুর এলাকাতেই বিধানসভার নিরিখে জয়ের ব্যবধান অনেকটা বেড়েছে। পাশাপাশি, ভোট বেড়েছে বামেদেরও। লোকসভা ও বিধানসভার নিরিখে বিজেপিকে সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা। বিজেপির অবশ্য ভোট কমেছে।
পুর নির্বাচনে শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মূল অভিযোগ ছিল সন্ত্রাস ও ছাপ্পা ভোটের। বামেদের দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের ফল আরও অনেক ভাল হত। বিরোধীদের
বক্তব্য, তিন পুরসভারই একাধিক ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট দেখে বোঝা যাচ্ছে, তা স্বাভাবিক পথে আসেনি। তাদের মতে, ছাপ্পা ভোট ও বুথ দখলের অভিযোগ যে কতটা সত্যি, ভোটের ফলই তা বলে দিচ্ছে। সিপিএম নেতা সুনীল চক্রবর্তী, দেবশঙ্কর রায়চৌধুরীদের বক্তব্য, শাসকদল ওই পরিমাণ সন্ত্রাস না করলে তাঁদের ভোট অনেকটাই বেড়ে যেত। বিজেপির পরাজিত প্রার্থী নারায়ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘যেখানে মানুষ ভোটই দিতে পারল না, সেখানে ভোট কমেছে না বেড়েছে, তার প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়।’’
তৃণমূলের আবার দাবি, বিরোধীরা আসলে নানা রকম অভিযোগ তুলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে। দমদমের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘সুষ্ঠু পরিষেবা ও নানা সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি
করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে পৌঁছনোর প্রতিফলনই ঘটেছে ভোটের ফলে।’’
আবার উত্তর দমদমের সুবোধ চক্রবর্তী, দক্ষিণ দমদমের কেয়া দাস বা পার্থ বর্মার মতো জয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের দাবি, গত লোকসভা ও বিধানসভায় যাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের একটি বড় অংশ এ বার তৃণমূলকে দিয়েছেন। যা শুনে এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘ক’টা জাল ভোট আর ক’টা আসল, সেই হিসাব করতে তৃণমূলও সমস্যা পড়বে।’’ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এত ভোট পড়ল, অথচ নির্বাচনের দিন সর্বত্র ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়ল না কেন? বিরোধীদের মতে, প্রকৃত ভোট কমই পড়েছে, বহিরাগতদের ছাপ্পা ভোটের সংখ্যাই বেশি।
শাসকদলের এক নেতা পাল্টা বলেন, ‘‘জনসংযোগ না থাকলে স্থানীয়দেরও বহিরাগত বলে মনে হয়। তা ছাড়া, ভোট লুট হয়ে থাকলে বামেদের ভোট বাড়ল কী ভাবে?’’
বহু ওয়ার্ডেই ৬০-৮০ শতাংশ বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা। নির্দল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা) ৮৯ শতাংশ বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতা তাপস মজুমদারের কথায়, ‘‘তৃণমূলের যুক্তির সঙ্গে নির্বাচনের দিনের ছবিটা মিলছে না।’’