Cyclone Asani

‘অশনি’র সঙ্কেত ফিরিয়ে আনছে আমপানের স্মৃতি

‘অশনি’র দাপট থেকে এ যাত্রায় রক্ষার আভাস মিললেও এই ঘূর্ণিঝড়ই মনে করাচ্ছে দু’বছর আগের আমপানকে।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২২ ০৭:৫১
Share:

আমপান কেড়েছে মা-ভাইকে। রিজেন্ট পার্কের বাড়িতে তাঁদের ছবি হাতে রাজু বিশ্বাস। সোমবার। দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

আশঙ্কার মধ্যেও কিছুটা আশার কথা। কারণ, হাওয়া অফিস প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাব বাংলায় তেমন পড়বে না। তবে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। ‘অশনি’র দাপট থেকে এ যাত্রায় রক্ষার আভাস মিললেও এই ঘূর্ণিঝড়ই মনে করাচ্ছে দু’বছর আগের আমপানকে। সেই সঙ্গে বছর দুই আগের সেই ঝড়ে স্বজন হারানো একাধিক পরিবারে ‘অশনি’ ফিরিয়ে এনেছে পুরনো দগদগে স্মৃতি।

Advertisement

২০২০ সালের মে মাস। আমপানের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল গোটা কলকাতা। সেই ঝড়ে শহরের রাস্তায় বেরিয়ে প্রাণ যায় ১৯ জনের। কোথাও গাছের ডাল মাথায় পড়ে, কোথাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, কোথাও আবার বাড়ি ভেঙে পড়ায় মৃত্যু হয়েছিল অধিকাংশের। দু’বছর পরে আরও একটি ঝড় যেন ফিরিয়ে আনছে আমপানের সেই সব ভয়াবহ স্মৃতি।

ঝড়ের রাতে বাবার জন্য ওষুধ কিনতে বেরিয়ে পর্ণশ্রীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল পরমিত সিংহ শেঠির। বছর তিরিশের পরমিতের পাশাপাশি সেই রাতে ওই এলাকায় আরও কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল। সোমবার পর্ণশ্রীর উপেন ব্যানার্জি রোডের বাড়িতে বসে পরমিতের মা পুনিত কৌর সে দিনের ঘটনার জন্য কাঠগড়ায় তুললেন প্রশাসনকে।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘‘সে দিনের ভুল থেকে কি প্রশাসন শিক্ষা নিয়েছে? অত ঝড়ের মধ্যেও সে দিন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ছিল না আমাদের এলাকায়। বাবার জন্য দরকারি ওষুধ আনতে গিয়েছিল ছোট ছেলে। পরে আমরা খবর পেলাম, ও রাস্তায় পড়ে রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সব শেষ।’’ একনাগাড়ে বলে একটু থামলেন তিনি। নিজেই জানালেন, ঝড় নিয়ে নানা দিকে আলোচনা যত বাড়ছে, ততই সে দিনের ভয়াবহ রাতটার কথা বার বার মনে পড়ছে তাঁর। সেই সঙ্গে নানা আশঙ্কাও মনে উঁকি দিচ্ছে।

স্বজন হারানোর একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার এম বি সরণির বাসিন্দা রাজু বিশ্বাসের। ঝড়ের রাতে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল রাজুর মা কমলা বিশ্বাস ও ভাই পিন্টু বিশ্বাসের। এ দিন নিজের বাড়িতে মা ও ভাইয়ের ছবি হাতে নিয়ে রাজু বলেন, ‘‘ঝড়ের জন্যই সে দিন কাজ থেকে সকাল সকাল ফিরে এসেছিল ভাই। ঘরেই শুয়ে ছিল। ঝড়ের কারণে সে দিন তাড়াতাড়িই রান্নাঘরে ঢুকেছিলেন মা। কিন্তু ঝড় শুরু হতেই হঠাৎ বাড়ির পিছনের পাঁচিলটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে।’’

তিনি জানান, ঝড়ের মধ্যেই পুলিশ এসে কোনও মতে দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু কাউকেই বাঁচানো যায়নি। রাজুর কথায়, ‘‘মা এমন ভাবে জখম হয়েছিল যে, চেনা যাচ্ছিল না। ভাইয়ের মাথায় আঘাত লেগেছিল। আমারও মাথায় লেগেছিল। কপালজোরে আমি রক্ষা পাই।’’ ঝড়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া টাকা দিয়েই নতুন ঘর করেছেন রাজু। সেই ঘরে এখন একাই থাকেন। সেই ঘরে বসেই রাজু বললেন, ‘‘ঝড় নিয়ে চার দিকে যখন আলোচনা হচ্ছে, আমি তখন ভাবছি, এই পাকা ঘরটা যদি সেই সময়ে থাকত!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement