—প্রতীকী চিত্র।
সাপ কামড়েছে শহর এলাকায়। আর আক্রান্তের বাড়ি গ্রামে। কিন্তু সাপের অ্যান্টিভেনাম যে রয়েছে শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, সে খবর জানা নেই লাগোয়া গ্রামের মানুষের। আর তার জেরেই বাড়ি থেকে রোগীকে নিয়ে প্রথমে অন্য জায়গার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, তার পরে বড় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দৌড়াদৌড়ির মধ্যেই প্রাণ গেল আক্রান্তের।
গত রবিবার নিউ টাউন বিধানসভা এলাকার আকন্দকেশরী গ্রামের বাসিন্দা সৌরভ নস্কর নামে এক যুবকের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়। গ্রামের পাশেই সাপুরজি এলাকার (যেটি নিউ টাউন শহরের মধ্যে) একটি জলায় স্নান করতে নেমে সাপের কামড় খান সৌরভ। প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও পরে বাড়ি ফিরে হাতে তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা অনুভব করেন তিনি। আকন্দকেশরী থেকে তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ভাঙড়ের জিরানগাছা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে ওই যুবককে আর জি কর হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতে সেখানেই মারা যান সৌরভ। তিনি নিউ টাউনের সাপুরজি বাসস্ট্যান্ডে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করতেন।
প্রসঙ্গত, দু’-তিন সপ্তাহ আগে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা এক ছাত্র নিউ টাউনের রাস্তায় সাপের কামড় খান। তাঁকেও প্রথমে জিরানগাছা ও পরে আর জি করে নিয়ে ছোটে পুলিশ। শেষে চিকিৎসায় দেরি হওয়ার কারণে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়।
নিউ টাউনে সাপের উপদ্রব নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। বিশেষত শহরাঞ্চলে কালাচ ও চন্দ্রবোড়ার উপদ্রব ঘিরে ত্রস্ত তাঁরা। বিভিন্ন আবাসনে অ্যান্টিভেনাম কিনে রাখা হচ্ছে। সাপের কামড়ে পর পর দু’টি মৃত্যু ঘিরে উদ্বিগ্ন নিউ টাউনের প্রশাসনিক সংস্থা এনকেডিএ-ও। সংস্থার এক শীর্ষ আধিকারিক এ দিন জানান, সেখানকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অ্যান্টিভেনাম এবং রোগীর উপরে তা প্রয়োগের জন্য ডাক্তারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যাতে এনকেডিএ-র ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা ভাল ভাবে সাপে কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়, তার ব্যবস্থা করতে।
বুধবার সৌরভের দাদা সৌভিক বলেন, ‘‘গ্রামের দিকে সাপে কামড়ানোর চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। ভাই এনকেডিএ-র বাসস্ট্যান্ডেই নিরাপত্তাকর্মী ছিল। কিন্তু ওখানেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে সাপে কাটার চিকিৎসা হয়, সেটাই তো জানি না।’’ যে কারণে রবিবার সৌরভকে নিয়ে জিরানগাছা ছুটেছিলেন তাঁর পরিজনেরা।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ওই ছাত্রের মৃত্যুর পরেই নিউ টাউনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র দু’টিতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাপে কামড়ানোর চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু এর বেশি সরকারি পর্যায়ের ব্যবস্থা নিউ টাউনে নেই। এনকেডিএ জানিয়েছে, তাদের এলাকার বিভিন্ন আবাসনে ডাক্তার, অ্যাম্বুল্যান্স এবং সাপ ধরিয়েদের (স্নেক ক্যাচার) নম্বর সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এলাকার বাইরে, নিউ টাউন বিধানসভার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে অতি বিষধর সাপ কামড়ানোর চিকিৎসা এখনও অপ্রতুল।