Vehicles

‘সংবিধানের মর্যাদাই যেখানে সুরক্ষিত নয়, সেখানে পরিবেশ?’

সব শহরে এলপিজি বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি (সিএনজি) ছাড়া অটোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই অটোচালকেরা কলকাতার মতো এমন শহর বেছে নিয়েছিলেন, যেখানে নিয়মের তত কড়াকড়ি নেই।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৫৭
Share:

ভাঙাচোরা এমন পুরনো বাসও দূষণের উৎস। নিজস্ব চিত্র

কর্মসূত্রে বা অন্য কারণে মানুষ এক স্থান থেকে অন্যত্র অভিবাসী হন (মাইগ্রেট)। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব বলছে, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে অভিবাসীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ কোটি। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩.৫ শতাংশই অভিবাসী।

Advertisement

তাই বলে অটোও অভিবাসী হয়!― এমন চমকে দেওয়া তথ্য উঠে এসেছিল ২০০৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের এক নির্দেশের প্রেক্ষিতে। যেখানে বলা হয়েছিল, দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, আমদাবাদ, বডোদরার মতো শহরগুলি থেকে অনেক অটো কলকাতা-সহ দেশের অন্য শহরে চলে এসেছিল। তার কারণ, ওই সব শহরে এলপিজি বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি (সিএনজি) ছাড়া অটোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই অটোচালকেরা কলকাতার মতো এমন শহর বেছে নিয়েছিলেন, যেখানে নিয়মের তত কড়াকড়ি নেই।

আরও পড়ুন: ‘ভারত বন্‌ধ’এর দিন ছেড়ে বুধবার রাজ্যে আসছেন বিজেপি সভাপতি নড্ডা

Advertisement

বিষয়টা আদালত পর্যন্ত পৌঁছনোয় ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন রাজ্য সরকার নির্দেশিকা জারি করে জানায়, ধাপে-ধাপে পনেরো বছর ও তার পুরনো গাড়ি চলার অনুমোদন বাতিল করা হবে। ওই নির্দেশিকায় ২০০৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে শহরের সমস্ত অটোকে এলপিজি বা সিএনজি-তে পরিবর্তন, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উপরে জোর, নথিভুক্ত দূষণ পরীক্ষার কেন্দ্রগুলির উপরে নজরদারি-সহ একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরেও ওই নির্দেশের অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি!’’

অবশ্য হবে কী ভাবে? এ রাজ্যে কারও মন্ত্রিত্ব ছাড়া, কে, কোন দলে যাবেন, সে সব নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক চলে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় কোন সরকার কী করল, সেই মূল্যায়নের সময় কোথায়! অথচ অনেক আগেই ‘চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট’-এর (সিএনসিআই) সমীক্ষা দেখিয়েছিল, রাস্তার পরিধির তুলনায় অত্যধিক গাড়ির ঘনত্বের জন্য কলকাতা বিপজ্জনক ভাবে দূষণ-ত্রস্ত! দিল্লিতে যেখানে ২৬ শতাংশ রাস্তা, সেখানে কলকাতায় তার পরিমাণ ছ’শতাংশ! আবার শহরে খোলা জায়গার পরিমাণ এক শতাংশ। ফলে বদ্ধ জায়গায় গাড়ির ধোঁয়া থমকে থাকে। যা বাড়িয়ে দেয় ক্যানসারের ঝুঁকি! সিএনসিআই-এর বিজ্ঞানী উজির হোসেনের কথায়, ‘‘যানবাহনের ধোঁয়ার মধ্যে কার্বন মনোক্সাইডের পাশাপাশি সিসা-সহ অন্য ধাতু মিশ্রিত থাকে। সেগুলো ফুসফুস তো বটেই, অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরও ক্ষতি করে।’’

আরও পড়ুন: নিন্দার ঝড়, সে দিন কী লিখেছিলেন রাজ্যের প্রথম করোনা আক্রান্তের বাবা

অতীতে ‘নো পিইউসি (পলিউশন আন্ডার কন্ট্রোল সার্টিফিকেট), নো ফুয়েল’ নীতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, দূষণ-পরীক্ষিত গাড়ির গায়ে চকচকে স্টিকার লাগাতে হবে। যাতে কোন গাড়ি দূষণ পরীক্ষা করিয়েছে, তা ট্র্যাফিক পুলিশ বুঝতে পারে। কিন্তু এক বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, “পুলিশের নিজেরই তো অনেক গাড়ি পুরনো রয়েছে।’’

যদিও কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার এ অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘পুরনো গাড়ি দেখলেই তা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। আর শুধু অভিযোগ করলে হবে না। পুলিশের কোন গাড়ি পুরনো, তা নির্দিষ্ট করে না বললে কী করে হবে?’’

‘কী করে হবে?’— এই প্রশ্নেই আপাতত সবটা থমকে রয়েছে, মত বিশেষজ্ঞদের। অথচ সেই ১৯৯৭ সালে ‘অশোক (ডক্টর) ভার্সেস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল,― জীবনের অর্থ শুধু বেঁচে থাকা বা টিকে থাকা নয়। তার থেকে অনেক বেশি। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘২০১২-’১৩ সালে অমরনাথ শ্রাইন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ভাষ্য মনে করিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতও পরবর্তীকালে বলেছিল,— ‘পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ জীবনের অধিকার সবার সাংবিধানিক অধিকার’। কিন্তু সংবিধানের মর্যাদাই যেখানে সুরক্ষিত নয়, সেখানে পরিবেশ?’’

ঠিকই! তাই পুরনো গাড়ির মামলা আরও পুরনো হয় আদালতে, তারিখের পর তারিখ আসে, আর বিধি উড়িয়ে সে-সব গাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় রাজপথে। (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement