ছবি আঁকা, গান, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, নাটক এমন নানা বিষয় থাকবে উৎসবে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিকে ১ জানুয়ারি থেকে করতে হবে গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি বা গ্র্যাজুয়েশন উৎসব। এর আগে শিক্ষা দফতর নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছিল, প্রতিটি স্কুলকে এই উৎসব করতে হবে। তা চলবে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। স্কুলে পড়ুয়াদের নতুন বই দেওয়া থেকে তাদের নতুন ক্লাসে স্বাগত জানানো, কুইজ প্রতিযোগিতা, ছবি আঁকা, গান, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, নাটক এমন নানা বিষয় থাকবে উৎসবে। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, স্কুলের ভাঁড়ার শূন্য, কম্পোজিট গ্রান্টের এক টাকাও প্রাথমিক স্কুলগুলি পায়নি। গ্র্যজুয়েশন উৎসব করার টাকা কোথায়?
প্রাথমিকের শিক্ষকদের অভিযোগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি কম্পোজিট গ্রান্ট বাবদ ২৫ শতাংশ পেয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলগুলি এক টাকাও পায়নি। অথচ প্রাথমিক স্কুলেই এই গ্রান্ট বেশি প্রয়োজন। কারণ, মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলি পড়ুয়াদের ভর্তির জন্য বছরে ২৪০ টাকা নেয়। সেই টাকা স্কুলের নানা কাজে লাগানো যায়। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলগুলিকে পড়ুয়াদের বিনামূল্যে ভর্তি করতে হয়।
প্রাথমিকের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলেই গ্র্যাজুয়েশন উৎসব করতে গেলে শিক্ষকদের টাকা দিয়ে করতে হবে। উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর নির্দেশ দিচ্ছে, অথচ স্কুলগুলির কাছে সেই নির্দেশ পালনের মতো টাকা আছে কিনা, তা দেখছে না। মাধ্যমিক স্তরের স্কুল যদি ২৫ শতাংশ কম্পোজিট গ্রান্ট পেতে পারে, তা হলে প্রাথমিক স্কুল পাবে না কেন? অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলে গ্র্যাজুয়েশন উৎসব হবে শিক্ষকদের টাকায়।’’
শিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কম্পোজিট গ্রান্ট কেন্দ্র ও রাজ্য ভাগাভাগি করে দেয়। কেন্দ্র ৫০ শতাংশ ও রাজ্য ৫০ শতাংশ। কেন্দ্র তাদের ভাগের এক টাকাও দেয়নি। রাজ্য তবুও কম্পোজিট গ্রান্টের কিছু টাকা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিকে।’’
হাওড়ার আমতার উদং উচ্চ সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা বিজেপির শিক্ষা সেলের রাজ্য কনভেনর পিন্টু পাড়ুইয়ের প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্র না দিলেও রাজ্য তাদের ভাগের ৫০ শতাংশ তো পুরোটাই শিক্ষার স্বার্থে স্কুলগুলিকে দিতে পারে। বিশেষত টাকার দরকার প্রাথমিক স্তরের স্কুলের।’’ পিন্টুর দাবি, তাঁর স্কুলের আর্থিক অবস্থা এতটাই বেহাল যে, সম্প্রতি যে তৃতীয় পর্যায়ক্রমিকের ফল বেরোল, সেই শংসাপত্র ছাপানোর টাকাও তহবিলে ছিল না। শিক্ষকেরা নিজেরা টাকা দিয়ে শংসাপত্র ছাপিয়ে পড়ুয়াদের দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা বলেন, ‘‘কোনটা আগে? গ্র্যাজুয়েশন উৎসব না স্কুলের নতুন বছরের ছাত্রদের হাজিরার জন্য রেজিস্টার খাতা কেনা? রেজিস্টার খাতা কেনার টাকা পর্যন্ত নেই। গ্র্যাজুয়েশন উৎসব চালাব কী করে? পড়ুয়াদের জন্য নতুন বইয়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা ছেপে আসছে পড়ুয়াদের কাছে। অথচ টাকার অভাবে মার্কশিট ছাপানো যাচ্ছে না। এই দ্বিচারিতা কেন?’’