জ্যামার বসছে। সেই জ্যামার ঠিক রাখতে বসছে এসি। এমনকী, সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি টু-জি থেকে বাড়িয়ে থ্রি-জি, করা হয়েছে তা-ও। খরচ হয়ে গিয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি। তবু যার জন্য এত কাণ্ড, জেলে বন্দিদের সেই মোবাইল ব্যবহার এতে আটকানো যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান খোদ কারাকর্তারাই।
কারা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই সংশয়ের কারণ নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি ফ্রিকোয়েন্সি এবং সিডিএমএ মোবাইলের সিগন্যাল আটকাতে ওই জ্যামারগুলির অক্ষমতা। দফতর সূত্রে খবর, আলিপুর, প্রেসিডেন্সি এবং দমদম— এই তিনটি সেন্ট্রাল জেলের মধ্যে দমদমে ১৩টি ও বাকি দু’টি জেলে ১০টি করে জ্যামার বসছে। এক ধরনের জ্যামার ছাদে বসছে। অন্য জ্যামারগুলি মাটিতে। ছাদে বসানো (রুফ-টপ) জ্যামারগুলির কার্যকারিতা বাড়াতে সেগুলি এয়ার-কন্ডিশনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে প্রস্তুতকারী সংস্থা। সেই পরামর্শ মেনে জ্যামার এসি-তে রাখারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু ওই নির্দিষ্ট দু’টি অক্ষমতার কারণে জ্যামার বসলেও বন্দিদের মোবাইলে কথা বলা আটকানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
কারাকর্তারা জানান, জেলগুলির আশপাশে মোবাইল ফোনের পরিষেবা দেওয়ার জন্য ‘সার্ভিস প্রোভাইডার’ সংস্থাগুলির যে পরিমাণ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা উচিত, তার থেকে অনেক বেশি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে তারা। যাকে টেলিফোনের পরিভাষায় ‘বুস্টেড আপ সিগন্যাল’ বলা হয়। সেই বাড়তি ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার আটকাতে পারবে না। এমনকী, নিয়ম অনুযায়ী, জেলের ১০০ মিটারের মধ্যে মোবাইলের কোনও টাওয়ারও থাকার কথা নয়। সেই বিধিকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কলকাতার তিনটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ১০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল টাওয়ার বসেছে।
কারা দফতর সূত্রের খবর, সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থাগুলি নিয়ম মানছে কি না, তা নজরদারির জন্য ‘টেলিকম এনফোর্সমেন্ট রিসোর্স মনিটরিং সেলস’ (টার্ম) নামের একটি সংস্থা আছে। ওই সংস্থার কাছে সম্প্রতি কারা দফতরের এডিজি অধীর শর্মা একটি অভিযোগ করেছেন। কারা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এমনিতেই আমরা প্রথমে টু-জি সিগন্যাল বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে লাভ হবে না বলে তা বাড়িয়ে থ্রি-জি করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে, অতিমাত্রায় ক্রেতা টানতে সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থাগুলি ইচ্ছেমতো ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করছেন। নির্দিষ্ট মাত্রার উপরের ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার আটকাতে পারে না। সে কারণেই আমাদের দফতর থেকে বিষয়টি নিয়ে টার্ম-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।’’ এ দিকে, জ্যামারের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ালে আশপাশের এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে। ওই কারাকর্তার কথায়, ‘‘এই সমস্যা মেটাতে সম্প্রতি জ্যামারের সংস্থার সঙ্গে দমদম ও কলকাতা পুরসভার প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। ঠিক হয়েছে, একটি যৌথ প্রতিনিধিদল তিনটি জেল পরিদর্শন করার পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কারাকর্তারা জানান, শুধু অতিরিক্ত ফ্রিকোয়েন্সি আটকাতে না-পারার অক্ষমতাই নয়, জেলে বসানো জ্যামারগুলি সিডিএমএ মোবাইলের সিগন্যালও আটকাতে পারে না। কারণ, জিএসএম মোবাইল এবং সিডিএমএ মোবাইলের রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি এলাকা পৃথক। যে জ্যামারগুলি জেলে লাগানো হচ্ছে, সেগুলি শুধুমাত্র জিএসএম ফ্রিকোয়েন্সি আটকাতে পারে। কারাকর্তাদের আশঙ্কা, এর পরে বন্দিরা বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে জিএসএম-এর বদলে সিডিএমএ-র ব্যবহার করবে। একেবারে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে, এমন গ্যারান্টি তাই দিচ্ছেন না কারাকর্তারা।
তবে রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে জিএসএম মোবাইলের জ্যামার বসানো হচ্ছে। সফল হলে ভবিষ্যতে সিডিএমএ মোবাইলের জ্যামারও পৃথক ভাবে বসাতে হবে।’’