হামাগুড়ি দিতে দিতে বুধবার তাঁদের স্লোগান ছিল, আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? —প্রতীকী চিত্র।
ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং থেকে ওয়াই চ্যানেলে হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েক জন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী। হামাগুড়ি দিতে দিতে বুধবার তাঁদের স্লোগান ছিল, আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? সিট আপডেট করে ইন্টারভিউ নিয়ে নিয়োগ করতে হবে। ওই চাকরিপ্রার্থীরা জানালেন, গত ১১ বছর ধরে তাঁরা কতটা যন্ত্রণা সহ্য করছেন, তা বোঝাতেই হামাগুড়ি দিচ্ছেন।
সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের ওই মিছিল বুধবার দুপুরে শুরু হয়েছিল। মিছিলে অংশগ্রহণকারী চাকরিপ্রার্থীদের কারও গালে, কারও টুপিতে সাঁটা স্টিকার। তাতে লেখা, ‘সিট আপডেট করে ইন্টারভিউ নিতে হবে। তাঁরা সবাই টেট পাশ এবং প্রশিক্ষিত।’ এক চাকরিপ্রার্থী আজহার শেখ বলেন, ‘‘গেজেটে লেখা, ইন্টারভিউয়ের ১৫ দিন আগে শূন্যপদের সিট আপডেট করতে হবে। গেজেটের ওই নিয়ম উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মানা হয়নি। ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন শূন্যপদ জানিয়েছিল ১৪৩৩৯। সেই ১৪৩৩৯টি শূন্যপদেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু থাকল! ২০১৪ সালের পরে গত ১০ বছরে বহু শিক্ষক অবসর নিয়েছেন। ফলে অনেক শূন্যপদ তৈরি হয়েছে। কিন্তু তা আপেডেট হল না।’’
বর্তমানে উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। ইতিমধ্যে ৮৭৪৯ জনের কাউন্সেলিং হয়েছে। ৬৬৮০ জন প্রার্থী সুপারিশপত্র পেয়েছেন। অনেকে স্কুলে যোগদানও করেছেন। এ দিন যাঁরা এই বিক্ষোভ মিছিলে শামিল হয়েছিলেন, তাঁরা কেউ ২০২১ সালের উচ্চ প্রাথমিকের ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি। এক চাকরিপ্রার্থী শর্মিষ্ঠা দাস বারিক বলেন, ‘‘আমরা ডাক পেতাম, যদি গেজেটের নিয়ম মেনে ইন্টারভিউয়ের আগেই সিট আপডেট করা হত। তা হলে এতগুলো বছর নষ্ট হত না। অনেক চাকরিপ্রার্থীই রয়েছেন, যাঁদের বয়স হয়ে গিয়েছে। তাঁরা আর্থিক কষ্টেও ভুগছেন।’’
চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ জানাচ্ছেন, উচ্চ প্রাথমিকের ২০১৯ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতির অভিযোগে বাতিল হয়েছিল। আজহার বলেন, ‘‘আমাদের এই মিছিলে এমন অনেক চাকরিপ্রার্থী আছেন, যাঁরা ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ার পরে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইন্টারভিউয়ে আর তাঁরা ডাক পাননি। দুর্নীতির জন্য প্রক্রিয়া বাতিল হল। তার জেরে আমাদের ভুগতে হবে কেন?’’
মিছিলে ছিলেন এক চাকরিপ্রার্থী শম্পা বিশ্বাসের বাবা সুফলকুমার বিশ্বাস। সুফল বলেন, ‘‘মেয়ের লড়াইয়ে আমিও ওর সঙ্গে আছি। মেয়ের সঙ্গে প্রতিটা মিছিলে আসি। কেন গেজেটের নিয়ম মেনে সিট আপডেট করে ইন্টারভিউ নিয়ে নিয়োগ হবে না?’’ এই প্রসঙ্গে শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, আদালতের নির্দেশ মেনেই উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ চলছে।