রণজিৎ চট্টোপাধ্যায়
রেললাইনের পাশে লুটিয়ে পড়েছেন এক যুবক। হাতে ধরা মোবাইল ফোন! সেই মোবাইল ফোন ঘাঁটতে গিয়েই তদন্তকারীরা দু’টি মেসেজ দেখতে পেলেন। রাত ৮টা ৫৮ মিনিটে পাঠানো মেসেজে লেখা, ‘আমি আত্মহত্যা করছি’। রাত ৯টা ৫৯ মিনিটে পাঠানো দ্বিতীয় মেসেজে লেখা, ‘সত্যিই আত্মহত্যা করছি। ছেলেমেয়েদের দেখিস।’
শুক্রবার রাতে লেক গার্ডেন্স স্টেশনের কাছে এই মৃত্যু ঘিরেই দানা বেঁধেছে রহস্য। শনিবার রাত পর্যন্ত যার কিনারা হয়নি। রেলপুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম রণজিৎ চট্টোপাধ্যায় ওরফে কাজু (৩৮)। বাড়ি চারু মার্কেট থানা এলাকার সুলতান আলম রোডে। এক সময়ে ময়দানে বিভিন্ন ক্লাবে ফুটবল খেলতেন রণজিৎ। বর্তমানে অবশ্য অটো চালানোই ছিল তাঁর পেশা। প্রাথমিক তদন্তের পরে রেলপুলিশ জানতে পারে, রাত ১০টা ৫ মিনিট নাগাদ লেক গার্ডেন্স রেল কেবিনের সামনে শিয়ালদহমুখী বজবজ লোকালের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। দুর্ঘটনার পরে ওই ট্রেনের চালক ধাক্কা লাগার খবর জানান গার্ডকে। পরে তিনি ‘নক ডাউন মেমো’ দেন বালিগঞ্জ স্টেশনের ম্যানেজারকে।
কিন্তু হঠাৎ আত্মহত্যা করবেন কেন ওই যুবক, তা নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরা। পরিজনেদের জিজ্ঞাসা করে কোনও পারিবারিক গোলমালের ঘটনা জানা যায়নি। তবে কি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও ঘটনা? পুলিশের বক্তব্য, ওই ব্যক্তি যাঁদের ওই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, তাঁরাই এর উত্তর জানতে পারেন। ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মোবাইল ঘেঁটে আরও সূত্র উদ্ধারের চেষ্টাও হবে। কাজুর পরিবার ও বন্ধুরা জানিয়েছেন, প্রিয় দল ব্রাজিলের খেলা দেখে শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ পাড়ায় বেরিয়েছিলেন তিনি। তখন কোনও অস্বাভাবিকতা নজরে আসেনি।
তবে কোনও ঘটনায় ‘ফেঁসে’ যাওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন কাজুর স্ত্রী টুম্পা এবং দুই বাল্যবন্ধু শঙ্খ রায়চৌধুরী ও অলক চক্রবর্তী। তাঁরা জানান, ফিরোজ নামে এক যুবককে নতুন একটি অটোর পারমিট বার করিয়ে দেওয়ার নামে জনৈক আশু ভট্টাচার্য কয়েক মাস আগে আড়াই লক্ষ টাকা নেন। এর মধ্যস্থতা করেছিলেন কাজু। ফিরোজ পারমিটও পাচ্ছিলেন না, টাকাও ফেরত পাচ্ছিলেন না। শুক্রবার সন্ধ্যায় কাজু খেলা দেখে বেরিয়ে যাওয়ার পরে ফিরোজ একটি অটোয় কয়েক জন ছেলেকে নিয়ে তাঁদের বাড়ি আসেন ও কাজুর খোঁজ করেন বলে জানান টুম্পা। স্ত্রীর অভিযোগ, স্বামীর উদ্দেশে তাঁরা গালিও দেন। সওয়া ১০টা নাগাদ স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পান টুম্পা।
এ দিন সকালে কাজুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কথা বলার অবস্থায় নেই তাঁর স্ত্রী টুম্পা ও মা সন্ধ্যা। ছোট একচিলতে ঘরে উপচে পড়েছেন পাড়ার লোকজন। প্রতিবেশীরা জানান, যাদবপুর-তারাতলা রুটে অটো চালাতেন কাজু। কোনও দিন নিজে না চালালে পাড়ার বাসিন্দা লালটু নামে এক যুবককে গাড়ি চালাতে দিতেন। টুম্পা বলেন, ‘‘ওই অটোর রোজগার থেকেই সংসার চলত। বছর দশেকের ছেলে ও ছ’ বছরের মেয়েকে নিয়ে এ বার কী করব জানি না!’’
কাজুর পরিজনেদের অভিযোগ, ওই অটোর পারমিট নিয়ে অশান্তির জেরেই আত্মহত্যা করতে হয়েছে তাঁকে। আজ, রবিবার বালিগঞ্জ রেলপুলিশে কাজুর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ জানানো হতে পারে।