পরিবারের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়।
সেদিনই প্রথম জানলাম ‘সন্দেশ’ মানে ‘সংবাদ’। আমরা অবশ্য সেদিন আসল সন্দেশ থেকেও বাদ যাইনি— জ্যাঠামশাই আমাদের জন্য ভীম নাগের সন্দেশও নিয়ে এসেছিলেন। আমি যদিও ভীম নাগের সন্দেশের চাইতে ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি পেয়েই বেশি খুশি হয়েছিলাম।” হিতেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী লিখেছেন তাঁর জ্যাঠামশাই উপেন্দ্রকিশোর ও সন্দেশ পত্রিকার (১৯১৩) জন্মমুহূর্তের স্মৃতি। তখন গিরিডিতে থাকতেন তাঁরা, গিরিডি ছিল ব্রাহ্মদের মিলনস্থল, তাঁদের অনেকেরই বাড়ি ছিল সেখানে। ময়মনসিংহের মসুয়ায় রায় পরিবারে উপেন্দ্রকিশোরের পালক-পিতা হরিকিশোরের পুত্র নরেন্দ্রকিশোরের কনিষ্ঠ পুত্র হিতেন্দ্রকিশোর, লিখছেন “আমাদের গিরিডি গিয়ে থাকার মূলেও ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর।” কর্মসূত্রে উপেন্দ্রকিশোর কলকাতা-গিরিডি যাতায়াত করতেন, এক বার গিরিডি আসার পর তাঁর খাস পুরনো পরিচারক প্রয়াগ গিয়ে হিতেন্দ্রকিশোরদের বললেন, “বড়বাবু কলকাতা থেকে তোমাদের জন্য ‘সন্দেশ’ এনেছেন, তোমাদের যেতে বলেছেন।”
উপেন্দ্রকিশোরের ব্যক্তিগত ও কর্মময় জীবন এবং রায় পরিবার নিয়ে অজস্র স্মৃতির ঝাঁপি হিতেন্দ্রকিশোরের বইটি, উপেন্দ্রকিশোর ও মসুয়া রায় পরিবারের গল্পসল্প (মাঝের ছবিতে প্রচ্ছদ)। লেখক বহুকাল প্রয়াত, বইটিও বিস্মৃতপ্রায়, প্রসাদরঞ্জন রায় ফার্মা কেএলএম প্রকাশনা-সংস্থার অফিসে বইপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে দৈবাৎ সেটি আবিষ্কার করেন। আড়ালে-থাকা এ বই আবার পাঠকের কাছে ফিরিয়ে আনল বিচিত্রপত্র গ্রন্থন বিভাগ।
উপেন্দ্রকিশোরের প্রপৌত্র সন্দীপ রায় এখন সন্দেশ-এর সম্পাদক। তাঁকে নিয়ম করে আবোল তাবোল পড়ে শোনাতেন সুপ্রভা রায়। “ঠাকুরমার কোলে বসে আর পাশে শুয়ে কত যে ‘আবোল তাবোল’ শুনেছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই।... নিজে পড়ার সময় অবশ্য সুকুমারের পাশাপাশি পড়তাম উপেন্দ্রকিশোরের লেখাও,” লিখেছেন সন্দীপ, আবোল তাবোল-এর শতবর্ষে তাঁরও বই বেরোল বিচিত্রপত্র থেকেই: রায়বাড়ির ঘরে বাইরে। ১৯৬১-তে নতুন ভাবে সন্দেশ বার করতে থাকলেন সত্যজিৎ, “সবাই মিলে সুকুমার রায়কে নতুন করে আবিষ্কার করলাম,” লিখেছেন সন্দীপ, সন্দেশ-এ ছাপা হতে লাগল সুকুমার রায়ের অগ্রন্থিত পুরনো লেখাগুলি। কী ভাবে তারা উদ্ধার হয়েছিল সে গল্পও লিখেছেন, পুরনো বই কেনার বাতিক সূত্রে বিক্রেতাদের চিনতেন সত্যজিৎ, তাঁদের বলে রাখতেন, “কোনো বাড়িতে যদি উপেন্দ্রকিশোর বা সুকুমার রায়ের আমলের ‘সন্দেশ’ পাও তাহলে আমার কথাটা একটু মনে রেখো।” তাঁরা পুরনো সন্দেশ এনে দেখাতে শুরু করলেন, আর “দাদুর অনেক হারিয়ে যাওয়া লেখা খুঁজে পেলেন বাবা।” সুকুমার-সুপ্রভা-সত্যজিৎ’সহ রায় পরিবারের অন্তরকথা এ বইয়ে। ছবিতে মা, ঠাকুরমা ও বাবার সঙ্গে শিশু সন্দীপ, নিমতিতায়। ছবি সৌজন্য: সন্দীপ রায়
নিখাদ সোনা
“তোমার মাঝে নিহিত ছিল রতনকণা,/ কণিকাগুলি মিলিয়া হল নিখাদ সোনা।” অনুরূপা দেবীর কবিতা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। শ্রুতি-অভিজ্ঞতায় যিনি প্রিয় কয়েক প্রজন্মের বাঙালির, তাঁকে আরও কাছ থেকে চেনাতে পূর্ণাঙ্গ একটি বইয়ের প্রয়োজন ছিল কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষে। সেই বই— মোহর— এসে গেল কলকাতা বইমেলায়। সুমিতা সামন্তের সম্পাদনায়, লা স্ত্রাদা থেকে প্রকাশিত বইটি আসলে শিল্পীকে নিয়ে নব্বই দশকের এ যুগ ও আমাদের কথা পত্রিকা এবং পরবর্তী একটি বইয়ের নবতম রূপ: শতবার্ষিকী সংস্করণ। রয়েছে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা, তাঁকে নিয়ে বিশিষ্টজনের লেখা, সুধীর চক্রবর্তীর নেওয়া সুচিত্রা-কণিকা সাক্ষাৎকারের পুনর্মুদ্রণ, বহু আলোকচিত্র ও প্রতিকৃতিচিত্র, গৌতম ঘোষের মোহর ছবির চিত্রনাট্য, শিল্পীর রেকর্ড ক্যাসেট সিডি তালিকা। সঙ্গের ছবি প্রচ্ছদ থেকে, দেবব্রত ঘোষের আঁকা।
শতবর্ষে পা
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি শাখার আদিপর্বে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠা ১৯২৫ সালে। আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে এই বিভাগ ও তার প্রাক্তনী সমিতির যৌথ উদ্যোগে হতে চলেছে শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানমালা। প্রকাশিত হবে স্মরণগ্রন্থ হানড্রেড ইয়ার্স অব দ্য ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাপলায়েড ফিজ়িক্স। ব্রিটিশ-ভারতের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি বিভাগের ইতিহাস সঙ্কলিত এ বইয়ে, রয়েছে প্রযুক্তিশিক্ষার অতীত থেকে সমকালের নিবিড় বীক্ষণ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনায় কুড়িটি মূল্যবান সন্দর্ভ ও প্রাসঙ্গিক তথ্য-সম্বলিত এই গ্রন্থের পরিকল্পনা, লিখন ও নির্মাণে মূলত ফলিত পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক, প্রাক্তনী, আমন্ত্রিত লেখকরাও।
জরুরি কথা
নেতাজির রাজনৈতিক গুরু তিনি; স্বরাজ অর্জনের পথে ঘোষণা করেছিলেন হিন্দুর পাশে মুসলমানেরও গুরুত্বের কথা। ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’-এর শতবর্ষে চিত্তরঞ্জন দাশকে মনে করাল দেশবন্ধু: সমকালে কালান্তরে (সম্পা: সেমন্তী ঘোষ, অনিকেত দে, প্রকা: আনন্দ) বইটি। নেতাজি ভবনে গত ১৪ জানুয়ারি বই নিয়ে বললেন দুই সম্পাদক। সেই সঙ্গে ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাসের অধ্যাপিকা নীতি নায়ারের নতুন বই হার্ট সেন্টিমেন্টস নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন অধ্যাপক সুগত বসু। জানুয়ারিতে নানা অনুষ্ঠান নেতাজি ভবনে: ২১ তারিখ সন্ধ্যা ৬টায় শিশিরকুমার বসু স্মারক বক্তৃতায় লেখক-গবেষক নীলাঞ্জনা সেনগুপ্ত বলবেন নেতাজি, আইএনএ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুদ্ধোত্তর ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন নিয়ে। ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে দু’টি অনুষ্ঠান, সকাল সাড়ে ১০টায় সুগত বসুর উপস্থাপনা ‘নেতাজি’স ভিশন ফর এশিয়া’, সন্ধ্যা ৬টায় চতুর্থ ‘কৃষ্ণা বসু স্মারক বক্তৃতা’য় ডমিনিক লিভেন বলবেন ‘রাশিয়া ও ইউক্রেন: অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ’ নিয়ে।
গান-যাত্রা
অগ্রজ সুধাকান্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভরসার জন। সেই সূত্রেই শান্তিনিকেতনে আসা নিশিকান্ত রায়চৌধুরীর। কলাভবনের ছাত্র, অবনীন্দ্রনাথ আদরে ডাকতেন ‘মাই আর্টিস্ট’, রবীন্দ্রনাথ বলতেন ‘চাঁদ কবি’। অলকানন্দা, দিগন্ত, বৈজয়ন্তী, লীলায়ন-সহ অনেকগুলি কাব্যগ্রন্থ তাঁর। পরে চলে যান পুদুচেরি, দিলীপকুমার রায়ের সান্নিধ্যে এসে লেখেন বহু গান, ১৯৭৩-এ প্রয়াণাবধি। দিলীপকুমার ও তিনকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে নিশিকান্তের কিছু প্রকাশিত-অপ্রকাশিত গান নিবেদন করবে গানের দল পুনশ্চ, স্মৃতিকথা-কবিতায় গেঁথে, আজ অরবিন্দ ভবনে বিকেল সাড়ে ৫টায়। অন্য দিকে, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ আয়োজিত ঐতিহ্যের মাঘোৎসব পা দিল ১৯৪তম বছরে, ১৯-২৮ জানুয়ারি বিবিধ অনুষ্ঠান। আজ সন্ধ্যা ৬টায় শতকণ্ঠে ব্রহ্মসঙ্গীত নিবেদনে সাংস্কৃতিকী কলকাতা।
সময়ের আয়না
দর্শকদের লম্বা লাইন, ছবি নিয়ে দর্শক ও পরিচালকের আড্ডা, এই চেনা অভিজ্ঞান নিয়েই দশম বছরে ‘কলকাতা পিপল্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার সমকালীন সমাজ-রাজনীতি নিয়ে তৈরি ছবির মঞ্চ এই উৎসব। ২৪-২৮ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা উত্তম মঞ্চে ভারত নেপাল বাংলাদেশ আফগানিস্তান মায়ানমার শ্রীলঙ্কা ইরান প্যালেস্টাইনের মোট ৩৯টি ছবি: আনন্দ পট্টবর্ধনের বসুধৈব কুটুম্বকম্, নিষ্ঠা জৈনের পাট কথা, আরবাব আহমেদের ইনসাইডস অ্যান্ড আউটসাইডস, মেঘনাদের ইন সার্চ অব অযান্ত্রিক, মানু গোমেজ়ের নূর অ্যান্ড আবির, ইলাক্কিয়া মারিয়া সাইমনের আ লেটার টু লঙ্কা, বো থুট থান-এর দ্য ফরগটেন হ্যান্ডস ইত্যাদি।
ছবির জীবন
“প্রথম অনুরাগ অভিনয়, তার পর খেলাধুলো... সকালে ব্যাডমিন্টন খেলেন, বিকেলে ছাদে উঠে ঘুড়ি ওড়ান।” দিলীপকুমার সম্পর্কে বলেছিলেন তপন সিংহ: “আমার মতো দিলীপও খেলাধুলো ভালবাসত।” তপনবাবুর ছবি সাগিনা মাহাতো-য় অভিনয়ের সূত্রে সঙ্গে গাঢ় বন্ধুত্ব (সঙ্গে সুকুমার রায়ের তোলা স্থিরচিত্রে তাঁরা)। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে, তাঁর জন্মশতবর্ষের প্রারম্ভে প্রকাশ পেল একটি টেবিল ক্যালেন্ডার, ‘পিপল’স ফিল্মমেকার তপন সিংহ’। শুরুতেই হাটে বাজারে ছবির নায়িকা বৈজয়ন্তীমালার কথা, “আমার ভিতরের প্রতিভা তিনি বার করে এনেছিলেন নিপুণ হাতে।” গ্যালারি চারুবাসনা-য় সম্প্রতি ক্যালেন্ডারটির উদ্বোধন-অনুষ্ঠানে ছিলেন যোগেন চৌধুরী ও রাজা সেন, সঙ্গে তপনবাবুর ছবির অভিনেত্রীরা: রোমি চৌধুরী বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষ্ণা চৌধুরী।
মানবতাপন্থী
তাঁর লেখার অনুরাগী ছিলেন বার্ট্রান্ড রাসেল। শিবনারায়ণ রায় (ছবি) মনে করতেন, যুক্তির শক্ত ভিতে তাবৎ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি। স্রেফ মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সহযোগীই ছিলেন না তিনি, র্যাডিক্যাল হিউম্যানিজ়ম-এর পাশাপাশি মগ্ন ছিলেন দর্শন শিল্প সাহিত্য চর্চায়। তাঁর সম্পাদিত জিজ্ঞাসা পত্রিকা মানবতাপন্থী আন্দোলনকে সামনে রেখেছে বরাবর, মনে করিয়েছে উনিশ শতকে রেনেসাঁসের ঐতিহ্য। ২০০৮-এ প্রয়াত এই চিন্তকের মননের ধারাটি জারি রেখেছে শিবনারায়ণ রায় স্মারক সমিতি। আজ, ২০ জানুয়ারি তাঁর ১০৪তম জন্মদিনে সমিতির অনুষ্ঠান কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলার প্রাঙ্গণে, প্রেস কর্নারে বিকেল ৫.৪৫-এ। ‘শিবনারায়ণ রায় স্মারক বক্তৃতা’য় গোপা দত্ত ভৌমিক বলবেন ‘ভারতবন্ধু অ্যান্ড্রুজ় ও পিয়ারসন’ বিষয়ে; সভামুখ্য সুমিতা চক্রবর্তী। প্রকাশ পাবে জিজ্ঞাসা পত্রিকার বইমেলা সংখ্যা, গৌরকিশোর ঘোষ ও অম্লান দত্ত শতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থও।
ছোটদের জন্য
“ছোটদের ছবি দেখার উৎসাহ অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণে চাপা পড়ে যায়। কমবয়সিদের মধ্যে সুস্থ সংস্কৃতি ও শিক্ষার প্রসারেই এই উৎসব,” বলছিলেন অর্পিতা ঘোষ, ‘শিশু কিশোর অ্যাকাডেমি’র চেয়ারপার্সন। অ্যাকাডেমির আয়োজনে দশম ‘কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু কিশোর চলচ্চিত্র উৎসব’ ২৫-২৯ জানুয়ারি, নন্দন রবীন্দ্রসদন একতারা মঞ্চ শিশির মঞ্চ রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন রবীন্দ্রতীর্থ রাধা স্টুডিয়োতে। প্রধান অতিথি চলচ্চিত্র পরিচালক অমোল গুপ্তে। উদ্বোধনী ছবি সৌরভ রাইয়ের গুরাস সম্মানিত দেশে-বিদেশে; সমাপ্তি-ছবি প্রবীণ ক্রুপাকর-এর তালেডান্ডা। উৎসবে আছে গত ন’বছরের উদ্বোধনী ছবিগুলির বিশেষ বিভাগ, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি; মৃণাল সেনের ইচ্ছাপূরণ, তপন সিংহের ছোটদের ছবি, জাপানি পরিচালক হায়াও মিয়াজ়াকির রেট্রোস্পেক্টিভ, আমেরিকা রাশিয়া চিন জাপান জার্মানি কানাডা ইরান মেক্সিকো-সহ ২৭টি দেশের ১১৬টি ছবি। টিকিটের ব্যাপার নেই কোনও, খুদে দর্শকদের জন্য রয়েছে ডেলিগেট কার্ডের ব্যবস্থা।