Nomophobia

No-Phone Day: সপ্তাহের এক দিন হোক ‘ফোনহীন’, হবে প্রচার

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এক জন ভারতীয় গ্রাহক মাসে ফোনে গড়ে ৬৯১ মিনিট কথা বলতেন। ২০২০-র মার্চে তা হয় গ্রাহকপিছু গড়ে ৭৫০ মিনিট।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ০৭:০১
Share:

বিপদঘণ্টা: অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতা ডেকে আনছে অবসাদ। ফাইল চিত্র।

২০ বছর আগে ফরাসি লেখক ফিল মার্সো যখন ‘ওয়ার্ল্ড ডে উইদাউট মোবাইল ফোনস’-এর আবেদন করেছিলেন, তখন তাতে কেউ খুব একটা কর্ণপাত করেননি। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান ‘নোমোফোবিয়া’ (নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া) বা ফোন না থাকার উদ্বেগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই ওই আবেদনের নেপথ্যে ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে একাধিক সমীক্ষা জানায়, আবেদনে সাড়া দেওয়া তো দূর, অনেকে এ বিষয়ের বিন্দুবিসর্গ জানেন না।

Advertisement

তবে এ বার ফরাসি লেখকের পথেই হাঁটতে চলেছে বিধাননগরের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ‘সেক্টর ফাইভ স্টেকহোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’। সপ্তাহের যে কোনও একটি দিনকে ‘ফোনহীন দিন’ (নো-ফোন ডে) হিসেবে পালনের জন্য সব তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কাছে আবেদন জানাবে তারা। ওই দিন জরুরি কারণ ছাড়া মোবাইল ব্যবহার না করা অথবা কম ব্যবহারের জন্য প্রচার করা হবে। তবে সেই দিনটি কবে হবে, সেটা সংশ্লিষ্ট সংস্থাই ঠিক করবে বলে জানাচ্ছেন সংগঠনের কর্তারা।

‘সেক্টর ফাইভ স্টেকহোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রেসিডেন্ট এস রাধাকৃষ্ণন জানান, করোনাকালে একেই মোবাইল-নির্ভরতা বেড়েছে। অফিস, অনলাইনে পড়াশোনা-সহ আরও বহু কিছুর অন্যতম প্রধান মাধ্যম মোবাইল। তাঁর কথায়, ‘‘এর ফলে মানসিক সমস্যাও হচ্ছে। সেই কারণে সেক্টর ফাইভে সপ্তাহে এক দিন নো-ফোন ডে চালুর আবেদন করব।’’

Advertisement

‘নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’র বোর্ডের সদস্য তথা ‘সেক্টর ফাইভ স্টেকহোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কল্যাণ কর জানাচ্ছেন, অনেক বড় সংস্থাতেই ‘নো ইমেল ডে’ রয়েছে। সে রকমই বর্তমান পরিস্থিতিতে সপ্তাহের এক দিন নো-ফোন ডে চালু করাও খুব প্রয়োজন। সে দিন ফোন ধরা ছাড়া, অর্থাৎ, ফোন ‘রিসিভ’ করা ছাড়া নিজে থেকে কাউকে ফোন না করাই যেতে পারে। কল্যাণবাবুর কথায়, ‘‘জরুরি হলে অবশ্যই আলাদা ব্যাপার। তা ছাড়া এই ব্যবস্থা বাধ্যতামূলকও নয়। তবে এটা করতে পারলে আমাদেরই ভাল। বিশেষত সপ্তাহে এক দিন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক না করার অভ্যাস তৈরি হলে মোবাইল আসক্তি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’’

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার (ইনকামিং এবং আউটগোয়িং) গড় সময়ও (মিনিটস অব ইউসেজ বা এমওইউ) যে বাড়ছে, তা টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই)-র তথ্যেই স্পষ্ট। যেমন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এক জন ভারতীয় গ্রাহক মাসে ফোনে গড়ে ৬৯১ মিনিট কথা বলতেন। ২০২০-র মার্চে তা হয় গ্রাহকপিছু গড়ে ৭৫০ মিনিট।

ট্রাই-এর এক কর্তার কথায়, ‘‘এপ্রিলে সংস্থার সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, মাসে এক জন গ্রাহক গড়ে ৭৮৫ মিনিট ফোনে কথা বলছেন। এটা শুধুই কথা বলার সময়। দিনে মোবাইলে বরাদ্দকৃত সময় এর চেয়ে অনেকটাই বেশি।’’

এ ব্যাপারে একাধিক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা অবশ্য তেমনটাই জানাচ্ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, এক জন ভারতীয় মোবাইলে দিনে গড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। সেই হিসেবে মাসে ব্যয় হয় প্রায় ১৫০ ঘণ্টা, অর্থাৎ ৯০০০ মিনিট! যা মানসিক স্থিতি টলে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানাচ্ছেন মনোবিদদের একাংশ। এক মনোবিদের কথায়, ‘‘যেমন, মোবাইলে ভিডিয়ো গেমের প্রতিটি ধাপ পেরোনোর সঙ্গে মস্তিষ্কে নিউরো-হরমোন ডোপামিনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই ডোপামিন আমাদের মানসিক ভাবে চনমনে রাখে। যে কারণে আমাদের আনন্দ হয় বা কাজের উৎসাহ বেড়ে যায়। কিন্তু এখানেই সমস্যার সূত্রপাত।’’ কারণ মস্তিষ্কের যে অংশে আনন্দ অনুভূত হয়, সেই অংশই বেদনা, কষ্ট অনুভব করে। ‘‘এর ফলে যেটা হয়, মোবাইল ব্যবহার না করার সময়টুকুতে বর্ধিত ডোপামিনের মাত্রা স্বাভাবিকে নেমে আসে। অথচ মস্তিষ্ক তখনও ভিডিয়ো গেম, ডিজিটাল জগতের মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে তৈরি ওই আনন্দ-উত্তেজনার মধ্যেই থাকতে চায়। তা না হলেই বিমর্ষতা, একাকিত্ব চেপে বসে। বর্তমানে অবসাদের অন্যতম কারণ মোবাইল-আসক্তি তো বটেই।’’— বলছেন করোনা-অবসাদ সামলাতে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টস’ দ্বারা গঠিত ‘ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট টাস্ক ফোর্স’-এর সদস্য প্রশান্তকুমার রায়।

আর তাই শুধুই তথ্যপ্রযুক্তি নয়, বরং সমস্ত ক্ষেত্রেই সপ্তাহে এক দিন ‘ফোনহীন দিন’-এর সংস্কৃতি চালু হোক, সওয়াল করছেন অনেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement